কে বা আর উজ্জ্বল আকর্ষণীয় চুল চায় না? আর আপনি যদি উজ্জ্বল, আকর্ষণীয় চুল আসলেই চান তাহলে মনোযোগ দিন কীভাবে আপনি আপনার চুলের যত্ন নিয়ে থাকেন সে বিষয়ের প্রতি। চুল ধোয়া ও চুল শুকানোর পদ্ধতি এবং চুলের স্টাইল আপনার চুলের স্বাস্থ্য এবং আপনার ও চুলের সৌন্দর্যে প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি কি চুলের যত্ন নিতে কোনও ভুল করছেন? আসুন দেখি।
১) চুল ধোয়ার আগে না আঁচড়ানো!
এতে চুলের দ্বিগুণ ক্ষতি হয়। ভেজা অবস্থায় চুল বেশি দুর্বল থাকে। ভেজা চুলের জট পাকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। চুলে যদি গোসল-জনিত জট না চান তবে আগেভাগেই চুল আঁচড়ে নিন। আর গোসলের সময় চুল যদি আঁচড়াতেই হয় তবে কন্ডিশনার দিন এবং হাতের আঙুল দিয়ে জট আলগা করুন। তারপর চুল ধোয়ার আগে ফাঁকা ফাঁকা মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ান।
২) চুলে বেশিক্ষণ চিরুনি ব্যবহার করা!
বেশি চুল আঁচড়ালে চুল পড়া বেড়ে যায়। মাথার ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে যে তেল উৎপন্ন হয় তা সবচেয়ে সেরা কন্ডিশনার। কাঠের চিরুনি দিয়ে মাথার ত্বক মাঝে মাঝে ম্যাসাজ করুন। এর ফলে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং চুলের বৃদ্ধি ঠিক থাকে। এবং চুল আঁচড়ানোর সময় গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত আঁচড়ান, এতে প্রাকৃতিকভাবেই চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়বে।
৩) চুলে অতিরিক্ত শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহার করা
প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহার করলে তা চুলের কোনো উপকারে আসে না। বরং তা চুলের ক্ষতি করে। ঘন ঘন শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহার করলে মাথার ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে যে তেল উৎপন্ন হয় তা ধুয়ে যায়। শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার বেশি ব্যবহারের ফলে চুলের ঔজ্জ্বল্য কমে যায় এবং চুলের আয়ুও কমে যায়। কিন্তু প্রতিদিন গোসল করা উচিৎ। আপনি যদি চুলের স্টাইলের জন্য বেশি প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার না করে থাকেন, তাহলে শুধু পানি দিয়েই প্রতিদিন চুল ধুয়ে ফেলুন অথবা চুলে হালকা ঘনত্বের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
৪) এলোমেলো কন্ডিশনিং করা!
চুল যখন নিস্তেজ এবং ভারি হয়ে যায় শুধু তখনই চুলের কন্ডিশন করান। কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক চুলের যতক্ষণ না ভেঙে যাওয়ার মত অবস্থা হয় ততক্ষণ কন্ডিশন করাবেন না। অতিরিক্ত কন্ডিশন করাটা চুলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি ব্যাপার। চুলের জট ছাড়ানোর জন্য এবং সিরিয়াসভাবে চুল পড়তে থাকলে বা ভাঙতে থাকলে সপ্তাহে একবার কন্ডিশন করান। আপনি কীভাবে কন্ডিশন করেন সেটা কোনো ব্যাপার নয়, খেয়াল রাখুন মাথা যেন সম্পূর্ণ পরিষ্কারভাবে ধোয়া হয়। এরপর চুল সুস্থ রাখতে নিয়মিতভাবে মাঝে মাঝে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
৫) তোয়ালে দিয়ে চুল শুকানো!
চুলের স্টাইলের জন্য অধিকাংশ প্রসাধন সামগ্রী তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে চুল শুকাতে বলে। কিন্তু চুল কোনো কিছু দিয়ে বেশি ঢেকে রাখলে মাথার ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। এর ফলে চুল নিস্তেজ ও কোঁকড়ানো হয়ে পড়ে। চুল পড়া বেড়ে যায়। চুল তোয়ালে দিয়ে মুছে হাতের আঙুল দিয়ে চুল ঝেড়ে ফেলুন। চুল শুকাতে সময় বেশি নিলেও এতে চুল স্বাস্থ্যবান হবে।
৬) চুলে বেশি তাপ লাগানো!
আমরা জানি চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে তাপ। যদি আপনি শুষ্ক, কোঁকড়ানো অথবা নিস্তেজ হয়ে পড়া চুল না চান তাহলে সবসময় মাথায় এমন কিছু ব্যবহার করুণ যাতে চুলে বা মাথায় তাপ না লাগে। এতে মাথার ত্বকও ভালো থাকবে। চুল মেশিনের মাধ্যমে না শুকিয়ে প্রাকৃতিকভাবে শুকান।
৭) ভেজা চুলে গরম আয়রন ব্যবহার করা!
ভেজা চুলে কখনোই গরম কোনো কিছু ব্যবহার করবেন না। চুল কোঁকড়া অথবা সোজা করার জন্য আয়রনের ব্যবহার ভেজা চুলের ফলিকল পুড়িয়ে ফেলতে পারে। এর ফলে চুল দুর্বল হয়ে যায় এবং ভেঙে যায়। চুলে স্টাইলের জন্য গরম কিছু ব্যবহার করার আগে চুল অবশ্যই সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিতে হবে। এমনকি আপনি যদি তাড়াহুড়ার মধ্যে থাকেন তবুও।
৮) স্টাইল করার আগে চুলে হেয়ার-স্প্রে ব্যবহার করা!
চুল সোজা অথবা কোঁকড়া করার আগে কোনো হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করবেন না। হেয়ার স্প্রেতে যে অ্যালকোহল থাকে তা তাপ পেলে আস্তে আস্তে পুড়তে থাকে। যদি হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই তা চুল সোজা বা কোঁকড়া করা বা স্টাইল করার পরে ব্যবহার করতে হবে।
৯) সচরাচর পিছনের দিকে চুল আঁচড়ানো!
কোনো উপলক্ষ্যে হঠাৎ পিছনের দিকে চুল আঁচড়ানো একটি জনপ্রিয় ব্যাপার। কিন্তু নিয়মিত এটা করলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এবং চুল পড়ে যায়।
১০) চুল ফেটে গেলেও ঠিক হয়ে যাবে মনে করা!
মেয়েদের জন্য এটা দুঃসংবাদ, যদি চুল একবার ফেটে যায় তাহলে কোনো প্রসাধনীই তা আর ঠিক করতে পারে না।
চুল ফেটে যাওয়ার একমাত্র সমাধান হচ্ছে শুরুতেই তা প্রতিরোধ করা। অতিরিক্ত শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহার, তোয়ালে দিয়ে চুল পেঁচিয়ে রাখা, চুলে বেশি তাপ লাগা এসব বন্ধ হলেই চুল আর ফেটে যাবে না।