ত্বকের যত্ন নেয়া উচিত সারা বছরই। তবে শীত এবং বর্ষাকালে হাত পায়ের যত্ন নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্ষাকালে আর্দ্র আবহাওয়ায় অনেকের হাত পায়ে ফাংগাল ইনফেকশন দেখা দেয়। আর শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় হাত পায়ের ত্বক ফেটে যায়। আজকের আলোচনায় আমরা এ দুটি সময়ে কি করে ত্বকের বাড়তি যত্ন নিবেন, সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।
হাত পায়ের স্বাভাবিক যত্ন
হাত পায়ের ত্বক স্বাভাবিক সময়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে এমনিতেই সুন্দর থাকে। তবে, বর্ষাকালে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার পর আঙ্গুলের ফাঁকে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করলে আঙ্গুল ঘেমে যাবে না। যাদের অনেক সময় ধরে জুতা পড়ে থাকতে হয়, তাঁরা মোজা পড়ার আগে ট্যালকম পাউডার দিয়ে নিলে পা সহজে ঘামাবে না। সাধারণত ফাংগাল ইনফেকশন অধিক সময় ধরে পানিযুক্ত জায়গায় থাকার কারণে হয়।
এ ধরনের ইনফেকশন হলে উপযুক্ত ঔষধ ব্যবহার করুন। পায়ের বা হাতের ত্বকে ইনফেকশন হলে কখনই তা ঘষবেন না। এতে ক্ষত আরও গভীর হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। ক্ষত পুরাপুরি না শুকানোর আগে হাত বা পা না ভেজানোই উচিৎ। প্রয়োজনে গ্লাভস ব্যবহার করুন।
স্বাভাবিক পায়ের যত্ন
স্বাভাবিক অবস্থায় পায়ের যত্ন নিতে সপ্তাহে একবার কুসুম গরম পানিতে এক চামচ শ্যাম্পু ও লবন দিয়ে পা ভিজিয়ে রাখুন। এবার হালকাভাবে স্ক্রাব করে নিন। ত্বকের ফাটা গভীর ও শক্ত হলে এক বা একাধিক পাকা কলা পলিথিনের ব্যাগে থেঁতো করে নিন। এবার এই ব্যাগের ভিতর আপনার পা ঢুকিয়ে এক ঘন্টা রেখে দিন। কলায় থাকা পটাসিয়াম আপনার পায়ের শক্ত চামড়া নরম করতে সাহায্য করবে। এর ফলে, আপনি খুব সহজেই স্ক্রাব করতে পারবেন।
এজন্য ব্যবহার করুন চালের গুঁড়ার সঙ্গে শসার রস, গাজরের রস ও মসুর ডাল। এই উপকরণগুলো পাটায় পিষে অথবা ব্লেন্ডারে দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিন। তারপর হাত ও পায়ের পাতায় লাগিয়ে ঘষে ঘষে কিছুক্ষণ স্ক্রাবিং করে তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অল্প কিছু গরম পানিতে আধা চামচ শ্যাম্পু একটু লবণ দিয়ে তাতে পায়ের পাতা ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এরপর ব্রাশের সাহায্যে পা ঘষে পরিষ্কার করে নিন অথবা ফুট ফাইল ব্যবহার করতে পারেন। ফুট ফাইল না থাকলে মাটির ঝামা দিয়ে ঘষেও পা পরিষ্কার করা যায়। বিশেষ করে গোড়ালীর নিচের অংশটুকু ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন যাতে সমস্ত মরা চামড়া উঠে যায়।
মেনিকিউর ও পেডিকিউর
বাজারে অনেক রেডিমেড মেনিকিউর-পেডিকিউর কিট পাওয়া যায় যেগুলো দিয়ে সহজেই ঘরে বসে হাত পায়ের যত্ন নিতে পারেন। নখের চারপাশে কালো দাগ থাকলে ভ্যাসলিনের সাথে লেবুর রস ব্যবহার করা যায়। এতে নখের চারপাশের দাগ উঠে যাবে।
হাত পায়ের মরা কোষ উঠানোর পর কোন ভালো লোশন লাগিয়ে নিন। লোশন না থাকলে নারকেল ্ল্্ন সঙ্গে সমপরিমাণ পানি দিয়ে ফেটে সেই মিশ্রণটি লাগাতে পারেন। সপ্তাহে এভাবে একবার করে বা দুবার করে হাত পায়ের যত্ন নিলে হাত পা সুন্দর থাকবে।
ব্রাশ ব্যবহারের সময় প্রাকৃতিক তন্তুর নরম ব্রাশ বেছে নিন। এছাড়াও মুখে লেবুর রস ব্যবহারের সময় এর সঙ্গে পানি বা মধু মিশিয়ে ব্যবহার করুন। কারণ সরাসরি লেবুর রস ব্যবহার করলে অনেক সময় ত্বকে র্যাশ ও লালচেভাব দেখা দেয় ও ত্বকে জ্বালা পোড়ার সৃষ্টি হতে পারে।
কনুইয়ের কালচে ছোপ দূর
কনুইয়ের কালচে ছোপ দূর করতে মধু ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এতে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে হাতে বা পায়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়লে গুঁড়া দুধ, লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে পেস্ট তৈরি করে লাগান। নিয়মিত ব্যবহার করলে এ ধরনের দাগ দূর হয়ে যাবে।
হাত পায়ের ত্বক শুষ্ক ও মিশ্র হলে কাঠ বাদাম ও দুধ এক সঙ্গে পেস্ট করে লাগাতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বক হলে এটা ব্যবহার করবেন না। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাঁরা তেতুল ও মধুর মিশ্রণ লাগালে তৈলাক্ত ভাব কমবে।
বর্ষাকাল সাধারণত আর্দ্র থাকে। তারপরও হাত ও পায়ের অতিরিক্ত শুষ্কতায় ভুগলে একটি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এটা বানাতে আপনাকে সমপরিমাণ গোলাপজল, গ্লিসারিন ও তিলের তেল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে লোশনের মত করে তৈরি করতে হবে। এই লোশন নিয়মিত লাগালে শুষ্কভাব কমে যাবে। এর পাশাপাশি ফাংগাল ইনফেকশন এড়াতে ইনফেকশনের জায়গা যাতে না ভেজে সেই চেষ্টা করুন।
ত্বকের যত্নের আরও অন্যান্য উপায় সম্পর্কে জানতে নিচের বইটি পড়ে দেখুনঃ