প্রতিদিনের খাবার পানির মতই নিয়ম করে ফেসিয়াল করানো এখন নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের মধ্যে পড়ে। ফেসিয়াল করলে মুখের মরা কোষ দূর হয়ে উজ্জ্বল লাবণ্যময় ত্বকটি বের হয়ে আসে। কাজের চাপে অনেক দিন ফেসিয়াল করা না হলে এবং এর ফলে সৃষ্ট ত্বকের সমস্যা যেমন, ব্রন ও ফুসকুড়িযুক্ত ত্বকের যত্নের সময় অনেককেই দ্বিধায় ভুগতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে ব্রনযুক্ত ত্বকে অযথা ঘষামাজার কারণে ইনফেকশনও হতে দেখা যায়।

তবে ফেসিয়াল করার আগে সবার আগে ত্বকের ধরন বুঝতে হবে। সাধারণত তিন ধরণের ত্বক দেখা যায়, তৈলাক্ত, শুষ্ক ও মিশ্র ত্বক। এই তিন ধরণের ত্বক থেকে আপনার ত্বক কি ধরণের তা আগে বুঝতে হবে। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন যে, আপনার ত্বক কেমন? এজন্য একটা পরীক্ষা করতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে এক টুকরা টিস্যু পেপার নিন। তারপর তা মুখের বিভিন্ন অংশে চেপে ধরুন। যেমন, কপাল, থুতনি ও দুই গালের উপরিভাগ।
যদি দেখেন টিস্যু সম্পূর্ণ শুকনা ও পরিষ্কার, তাহলে বুঝবেন যে আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী। যদি দেখেন, মুখের কিছু অংশ তৈলাক্ত যেমন, নাক ও থুতনি ও কপাল ও বাকি অংশ শুষ্ক তাহলে বুঝবেন আপনি মিশ্র ত্বকের অধিকারিণী। আর যদি দেখেন, মুখের যে অংশে টিস্যু পেপার ধরার কারনের তৈলাক্ত হয়ে যাচ্ছে। তখন বুঝতে হবে আপনার ত্বক সম্পূর্ণ তৈলাক্ত।
সাধারণত ত্বকের ধরন বুঝে ফেসিয়ালের উপাদান নির্ধারণ করতে হয়। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ফেসিয়াল করা সবচেয়ে ভালো। এবং বিভিন্ন ধরণের ক্যামিকেল উপাদান যেমন, ব্লিচ ত্বকের দারুন ক্ষতি করে থাকে। তাই ফর্সা হওয়ার লোভে কখনোই এসবের আশ্রয় নিবেন না। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রস এবং স্ক্রাবিংয়ের জন্য চালের গুঁড়া হতে পারে আদর্শ। তবে যাই ব্যবহার করেন না কেন তা যেন আপনার ত্বকে সহনীয় হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
শুষ্ক ত্বক
শুষ্ক ত্বকের জন্য ফেসিয়ালের উপাদানগুলোর মধ্যে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার থাকতে হবে। স্ক্রাবিং করার সময় খেয়াল রাখুন তা যেন কিছুটা পিচ্ছিল ও তৈলাক্ত হয়। শুষ্ক ত্বক অনেক সময় স্পর্শকাতর (সেনসিটিভ) হয়ে থাকে। সেখানে দুধ কিংবা দুধের সর ব্যবহার করা যেতে পারে। এমন ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা ফেসিয়াল হতে পারে আদর্শ। এক চামচ এলোভেরার সাথে এক চামচ মধু ও চন্দন গুঁড়া নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার সম্পূর্ণ মুখে লাগান। ২০-৩০ মিনিট রেখে কিছুটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
তৈলাক্ত ত্বক
তৈলাক্ত ত্বকে অনেক সময় ব্রণ হয়। তাই ত্বককে শুষ্ক করতে পারে এমন ফেসিয়াল করতে হবে। তৈলাক্ত ত্বক স্পর্শকাতর হলে ফেসিয়ালে ক্রিমজাতীয় উপাদান ব্যবহার না করাই ভালো। ক্রিম ত্বকের তেল শুকাতে দেবে না। পাউডার-জাতীয় উপাদানও এড়িয়ে যেতে হবে। লোমকূপে পাউডার জমে থাকলে ব্রণ হতে সাহায্য করে। ব্রণ থাকলে নিম কিংবা ব্রণের জন্য স্পেশাল কোন ফেসিয়াল করা যেতে পারে। এ ছাড়া অক্সি ফেসিয়াল করা যাবে। মনে রাখবেন, ব্রণযুক্ত ত্বক কখনোই ঘষামাজা করবেন না। এতে ব্রন পুরো মুখে ছরিয়ে পড়তে পারে ও ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
স্বাভাবিক বা মিশ্র ত্বক
মিশ্র ত্বককে আদর্শ ত্বক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেকোনো ফেসিয়াল, যেকোনো উপাদান দিয়ে নির্দ্বিধায় করতে পারেন। ত্বকের কোনো স্থান যদি স্পর্শকাতর হয় তাহলে ফেসিয়ালের সময় তা খেয়াল রাখতে হবে। কার ত্বকে কী উপাদান উপযুক্ত, তা বিবেচনা করে ফেসিয়াল করতে হবে। তবে গোল্ড ফেসিয়াল কিংবা ফ্রুট ফেসিয়াল বেশ কার্যকর। পারলারে ত্বকের ধরন অনুযায়ী এবং স্পর্শকাতর দিকটি বিবেচনায় রেখে ফেসিয়ালের উপাদানগুলো কম-বেশি বা যোগ-বিয়োগ করে ব্যবহার করা হয়।