নিম গাছ বাংলাদেশ ও এশিয়া অঞ্চলের একটি অতি পরিচিত বৃক্ষ। নিমের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে (AZADIRACHTA INDICA)। এই ঔষধি গাছটির ডাল, পাতা রস ও শিকড় সবই ব্যবহার করা যায়। নিম গাছ অনেক বছর বাঁচে এবং এটা একটি চির সবুজ গাছ। বাংলাদেশের সব জায়গায়ই এই গাছ জন্মে তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। নিম গাছ শুধুমাত্র ঔষধি হিসেবেই প্রসিদ্ধ নয়, বরং এই গাছকে প্রাকৃতিক ফিল্টার বলা হয়। বাড়ির আশেপাশে নিম গাছ থাকলে রোগ-বালাই কম হয়, এমন একটি ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে।
নিম পাতার রস থেকে আজকাল তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রসধনী। পেটের অসুখ বিশেষ করে কৃমির সংক্রমণ রোধে নিমের রস খুবই কার্যকর। নিম কাঠ খুব শক্ত ও তিতা হওয়ার কারণে এই কাঠে কখনও ঘুণে ধরে না ও পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকাও খেতে পারে না। আর এ কারণে নিম কাঠের বিভিন্ন আসবাবপত্রও তৈরি করা হচ্ছে আজকাল।
প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর কাজে নিম কাঠ বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সরকারীভাবে নিম গাছ কাটা ও এর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার ঠেকানো আবশ্যক। নিমের এতসব গুণের কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে একুশ শতকের বৃক্ষ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আসুন, জেনে নেই নিম গাছের কিছু উপকারী ব্যবহারের কথা-
কফের কারণে সৃষ্ট বুকের ব্যথাঃ ঠান্ডায় বুকে কফ জমে গিয়ে অনেক সময় বুকব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বুক ব্যথা দূর করতে ও কফ তরল করতে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। দিনে ৩/৪ বার খেলে বুকের কফজনিত ব্যথা দূর হবে। গর্ভবতী, শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা এই ঔষধ খাবেন না।
কৃমিঃ পেটে কৃমি হলে শিশু রোগা হয়ে যায়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পেট ফুলে বড় হয়ে যায়। নিমপাতার রস অনেক ভালো কৃমিনাশক। কৃমি নাশক ওষুধ তৈরি করতে নিমের ছালের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিমের ছাল গুঁড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে কৃমি আক্রান্ত ব্যক্তিকে দৈনিক ৩ বার খাওয়াতে হবে।
উকুন রোধেঃ অপরিচ্ছন্ন থাকার ফলেই সাধারণত মানুষের মাথায় উকুন হয়ে থাকে। নিমপাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগান। এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। ২/৩ দিন এভাবে লাগালে সব উকুন মরে যাবে।
মাসিক নিয়মিতকরনেঃ নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ সম পরিমাণ বেটে ছোট ছোট বড়ি করে শুকিয়ে নিন। সকালে খালিপেটে এক দুইটি বড়ি পানি দিয়ে খেয়ে ফেলুন। টানা ৩ মাস খেলে মাসিক নিয়মিত হয়ে যাবে।
অজীর্ণঃ অনেকদিন ধরে পেটে অসুখ। পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোটা নিম পাতার রস, সিকি কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল- বিকাল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যাবে।
খোস পাচড়াঃ পরিস্কার পানিতে নিমপাতা সিদ্ধ করে নিন। সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোস-পাঁচড়া দূর হয়ে যাবে। কোনও স্থানে চুলকানী হলে পাতা বা ফুল বেটে প্রলেপ দিলে চুলকানী ভালো হয়ে যাবে।
পোকার কামড়ঃ পোকা কামড়ালে বা মৌমাছি হুল ফুটালে নিমের মুলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা ও চুলকানি কমে যায়।
দাতের রোগঃ নিম পাতা ও ছালের গুঁড়া অথবা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাত পরিষ্কার করলে দাঁত হবে মজবুত ও শক্তিশালী। এবং দাঁত ও দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
জন্ডিসঃ জন্ডিস বা পিত্তাশয়ের অসুখে প্রতিদিন ৫-১১ ফোঁটা (বাচ্চাদের জন্য) বা ১ চা চামচ (বয়স্কদের জন্য) নিম পাতার রস একটু মধুর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
ব্রণ সারাতেঃ এছাড়াও ব্রণের চিকিৎসা ও ফেসপ্যাক হিসেবে নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক স্বাস্থ্যজ্জল ও জীবাণুমুক্ত থাকবে।
ডায়াবেটিস রোগঃ ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা একত্রে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। ওষুধের কৃত্রিমতার ওপরে নির্ভরশীল না হয়ে, মনযোগী হয়ে উঠুন সুস্থ থাকবার প্রাকৃতিক উপায়গুলোর প্রতি। আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে প্রকৃতির অসাধারণ সব উপাদান, যার অল্প একটু ব্যবহারই প্রতিদিন আমাদের রাখবে সুস্থ-সতেজ ও রোগমুক্ত। নিজে সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন আপন পরিবারকে।