ঈমান বা বিশ্বাস থাকে অন্তরে। কিন্ত এটা প্রস্ফুটিত হয় কথায় ও কাজে। ব্যবহারে ও আচরনে। যেমন, গাছের শিকড় থাকে মাটির নিচে, কিন্তু এটা কি গাছ, তা চেনা যায় এর ফল, ফুল ও পাতা দেখে। একটা গাছের বৃদ্ধির জন্য দরকার হয় পানি, উর্বর মাটি আর আলো ও বাতাস। তেমনি ঈমানকে মজবুত করার জন্য ঈমানের পরিবেশ গড়ে তুলতে হয় ও ঈমানের আলোচনা করতে হয়।
আমরা পূর্বে ঈমানের ৭৭ টি শাখা সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু এখন, এগুলো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো। ঈমানের বিশেষ আটটি শাখা সম্পর্কে একটি হাদিস বর্ণিত আছে। এই হাদীসের মধ্যে ঈমানের অন্যতম আটটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছেঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমান হচ্ছে এই-
১। আল্লাহকে বিশ্বাস করবে।
২। ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস করবে।
৩। কিয়ামত বা শেষ বিচারের দিনের উপর বিশ্বাস করবে।
৪। তাঁর প্রেরিত নবী-রাসুলদেরকে বিশ্বাস করবে।
৫। তাকদিরের উপর বিশ্বাস করবে। (অর্থাৎ, ভালো, মন্দ, সুখ ও শান্তি এসবই আল্লাহর তরফ থেকে আসে, এ কথা বিশ্বাস করবে)
৬। জান্নাত বা বেহেশতের উপর বিশ্বাস করবে।
৭। জাহান্নাম বা দোজখের উপর বিশ্বাস করবে।
৮। মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে।
(বুখারী ও মুসলিম)
তিরমীজী শরীফে আরও বর্ণিত আছে, যতক্ষন পর্যন্ত না কেউ তাকদীরের উপর বিশ্বাস না করবে। অর্থাৎ, যা হওয়ার তা অবশ্যই হবে। আর যা না হওয়ার তা কখনোই হবে না। অর্থাৎ, তাকদিরের ভাল-মন্দ, এসব আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত আছে। ততক্ষন পর্যন্ত কোন লোক ঈমানদার হতে পারে না।
আল্লাহকে বিশ্বাস করা মানে শুধু আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেওয়াই নয়, বরং আল্লাহর অস্তিত্বের সাথে সাথে তিনি যে অনাদি, অনন্ত, চিরজীবন্ত, নিরাকার ও নির্বিকার এটাও স্বীকার করে নেয়া। আল্লাহর ৯৯ টি সিফাতী বা গুনবাচক নাম রয়েছে। এগুলো শুধুই নাম নয় বরং আল্লাহর গুন। এছাড়াও আল্লাহর অসংখ্য গুন আছে। তিনি অদ্বিতীয়, সর্ব-শক্তিমান ও দয়াময়।
তিনি অনাদি, অনন্ত। তাকে কখনও নিদ্রা ও তন্দ্রা স্পর্শও করে না। তিনি তাঁর সৃষ্টি ও এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কারও উপর বিন্দু-পরিমাণ নির্ভরশীল নয়। বরং তিনি ছাড়া বাকি সব কিছুই তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি যাকে চান, হায়াত দান করেন। যাকে চান মউত দান করেন। যাকে ইচ্ছা হয় সম্পদ দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা হয় নিঃস্ব করেন। সমস্ত বস্তু সমুহের সর্বময় ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতে। আর এই কথাগুলোর উপর পরিপূর্ণ রূপে বিশ্বাস করাই হচ্ছে ঈমান।