Skip to content

ঈমানের ৭৭টি শাখা

ঈমান অনেক বড় দৌলত। ঈমানের কারণে মানুষ এক সময় জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদিস বিশারদগণ ঈমানের কম-বেশী ৭৭ টি শাখা নির্ধারণ করেছেন। তার মধ্যে অন্তর দিয়ে পূর্ণ করা হয় ৩০ টি কাজ। এই ৩০ টির মধ্যে নয়টি হচ্ছে আকাইদ সম্পর্কিত। আর বাকি ২১ টি আখলাক ও আমলের সাথে সম্পৃক্ত। ঈমান ও ইসলামের যেসব কাজ অন্তর দ্বারা পূর্ণ করতে হয়, তা হচ্ছেঃ

১। আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

২। আল্লাহ ব্যতিত বাকি সব কিছুই যে আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুক তা বিশ্বাস করা।

৩। ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

৪। আল্লাহ তায়ালার সমুদয় কিতাবের উপর ঈমান আনা।

৫। সমস্ত নবী-রাসুলগনের উপর ঈমান আনা।

৬। তাকদির বা ভাল-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

৭। কিয়ামত দিবসের উপর ইমান আনা।

৮। বেহেশতের উপর ইমান আনা।

৯। দোযখের উপর ইমান আনা।

১০। আল্লাহ তায়ালার সাথে মুহব্বত রাখা। অর্থাৎ, ভক্তি ও প্রেম রাখা।

১১। আল্লাহর দোস্তের সঙ্গে আল্লাহর ওয়াস্তে দোস্তি রাখা এবং আল্লাহর দুশমনের সঙ্গে আল্লাহর জন্যই দুশমনি রাখা।

১২। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মুহব্বত রাখা।

১৩। ইখলাছ অর্থাৎ, যেকোনো কাজ করতে হয় তা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা।

১৪। তাওবাহ করা।

১৫। খাওফ অর্থাৎ, আল্লাহভীতি অন্তরে রাখা।

১৬। আল্লাহর রহমতের প্রতি আশাবাদী থাকা।

১৭। হায়া অর্থাৎ, অন্যায় কাজ করতে লজ্জাবোধ করা।

১৮। শোকর বা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।

১৯। অঙ্গীকার বা ওয়াদা রক্ষা করা।

২০। সবর অর্থাৎ ধৈর্যধারন করা।

২১। নম্রতা ও বিনয় বা তাওয়াজ্জুহ।

২২। জীবের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা।

২৩। রেযা বিল কাযা অর্থাৎ, তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর রাজি থাকা।

২৪। তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর ভরসা করা।

২৫। নিজেকে নিজে খুব ভালো ও বড় মনে না করা।

২৬। কীনা তথা পরস্পর মনোমালিন্য না রাখা।

২৭। হাসাদ অর্থাৎ হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করা।

২৮। রাগ দমন করা।

২৯। কারও ক্ষতি হোক এই কামনা না করা।

৩০। দুনিয়ার মুহব্বাত ত্যাগ করা অর্থাৎ, ধন-সম্পদের প্রতি অত্যাধিক আকর্ষণ না থাকা।

ঈমানের যেসব কাজ মুখ বা জবানের দ্বারা সম্পাদন করতে হয়, তা হচ্ছেঃ

৩১। বুঝে শুনে তাওহীদের কালেমাসমূহ পাঠ করা।

৩২। কুরআন তিলাওয়াত করা।

৩৩। দ্বীনী ইলম তথা ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করা।

৩৪। দ্বীনী ইলম তথা ইসলামিক জ্ঞান শিক্ষাদান করা।

৩৫। দু’আ করা অর্থাৎ, আল্লাহর নিকট কল্যাণ প্রার্থনা করা ও অকল্যাণ থেকে পানাহ চাওয়া।

৩৬। আল্লাহর যিকির বা স্মরণ করা।

৩৭। বেহুদা কথা ও নাযায়েজ কথা থেকে জবানকে বাঁচিয়ে রাখা।

ঈমানের যেসব কাজ বাহ্যিক শরীরের দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেগুলো হচ্ছে মোট ৪০ টি। এরমধ্যে ১৬ টি নিজের সাথে সম্পৃক্ত। ৬ টি নিজের পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত। এবং ১৮ টি জন সাধারণের সাথে সম্পর্কিত। সেগুলো নিচে দেয়া হলোঃ

নিজের সাথে সম্পর্কিত ১৬ টি কাজঃ

৩৮। তাহারত বা পাক-পবিত্রতা হাসিল করা। যেমন, শরীর পাক, কাপড় পাক, জায়গা পাক করা। অজু ও ফরজ গোসল সবই তাহারতের অন্তর্ভুক্ত।

৩৯। নামায কায়েম করা। (ফরজ, নফল ও কাযা সবই এর অন্তর্ভুক্ত)।

৪০। যাকাত প্রদান করা। (সদকায়ে ফিতর, দান খয়রাত, মেহমানের আপ্যায়ন করা এ সবই যাকাতের অন্তর্ভুক্ত)।

৪১। রোযা রাখা। (ফরয বা নফল)।

৪২। হজ্জ করা। (উমরাও এর অন্তর্ভুক্ত)।

৪৩। এতেকা’ফ করা (শবে কদর তালাশ করাও এতেকাফের অন্তর্ভুক্ত)।

৪৪। ইমান ও ধর্ম রক্ষার্থে দেশত্যাগ করা অর্থাৎ, হিজরত করা।

৪৫। মান্নত মানিয়া তাহা পূর্ণ করা।

৪৬। কসম খাইয়া তাহা ঠিক রাখা বা কসম ভঙ্গ হইলে তাহার কাফফারা দেয়া।

৪৭। কোন কারণে ফরয আমলসমূহের কমতি হলে তার কাফফারা আদায় করা।

৪৮। সতর ঢাকিয়া রাখা। নামাযের ভিতরে ও বাহিরে উভয় অবস্থায়। প্রসঙ্গত পুরুষদের সতর হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর মেয়েদের সতর হচ্ছে, অন্য মহিলার সামনে বুক থেকে হাঁটু পর্যন্ত। কিন্তু মাহরামের সামনে মুখমণ্ডল, হাতের ও পায়ের তালু ছাড়া পূর্ণ শরীর। এবং গায়রে মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীর।

৪৯। কুরবানী করা।

৫০। মানুষ মারা গেলে তার জন্য কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা।

৫১। ঋণ পরিশোধ করা।

৫২। কাজকর্ম সততার সাথে বিশুদ্ধরূপে করা, নাযায়েয কাজ হতে দূরে থাকা।

৫৩। সত্য ঘটনা জানা থাকলে তা না লুকিয়ে সত্য সত্য সাক্ষ্য দেয়া।

যে ছয়টি কাজ নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্কিত, তা হচ্ছেঃ

৫৪। বিবাহ করে নফসের খাহেশাতকে দমন করা।

৫৫। পরিবার-পরিজনের হক আদায় করা (খাদেমদের সাথে সদ্ব্যবহার করা)।

৫৬। পিতামাতার খেদমত করা ও দেখাশোনা করা এবং তাঁদেরকে কোন প্রকার কষ্ট না দেয়া।

৫৭। ছেলেমেয়েদের লালন-পালন করা।

৫৮। আত্মীয়স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।

৫৯। চাকরের জন্য– প্রভুভক্ত হওয়া ও মালিকের কল্যাণকামী থাকা।

ঈমানের যে ১৮ টি কাজ জনসাধারণের সাথে করতে হয়, তা হচ্ছেঃ

৬০। বিচার করতে গেলে নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার করা।

৬১। মুসলমানদের জামায়াতের সাথে থাকা।

৬২। মুসলমান শাসনকর্তার হুকুম পালন করা।

৬৩। লোকদের মধ্যে কোনও ঝগড়া-বিবাদ হলে তা মিটিয়ে দেয়া।

৬৪। সৎকাজে সাহায্য ও সহযোগিতা করা।

৬৫। আমর বিল মা’রুফ  অর্থাৎ, সৎকাজের আদেশ করা ও নাহি আনিল মুনকার অর্থাৎ, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা।

৬৬। হদ বা শরিয়াহ নির্ধারিত শাস্তি কায়েম করা (শাসনকর্তার জন্য)

৬৭। নিজের দেশ তথা ইসলামিক ভুখন্ড রক্ষার্থে জিহাদ করা (সীমান্ত প্রদেশের রক্ষনাবেক্ষন করা ও দুশমনের আক্রমণ প্রতিহত করা)

৬৮। আমানত অবিকল তদ্রুপ পৌঁছিয়ে দেয়া।

৬৯। অভাবগ্রস্থকে ধার দেয়া।

৭০। পাড়া-প্রতিবেশীর খাতির করা।

৭১। মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করা।

৭২। অর্থের সদ্ব্যবহার করা ও অপব্যয় থেকে বেঁচে থাকা।

৭৩। সালামের উত্তর দেয়া।

৭৪। যে ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে, তার জবাবে “ইয়ারহামুকাল্লাহ” বলা।

৭৫। পরের ক্ষতি না করা ও কাউকে কোনরূপ কষ্ট না দেয়া।

৭৬। অহেতুক ক্রীড়া-কৌতুক, রং-তামাশা, নাচ-গান থেকে দূরে থাকা।

৭৭। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিষ সরিয়ে দেয়া।

এই হচ্ছে ঈমানের ৭৭ টি শাখা। এসব কাজ নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারলে, তবেই আমরা নিজেদেরকে ঈমানদার হিসেবে দাবি করতে পারি। আর এগুলো থেকে কোন একটি কম হলে বুঝতে হবে আমাদের ঈমান অসম্পূর্ণ আছে। তাই ঈমানের এসব দাবী পূরণ করতে সচেষ্ট হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: