বিখ্যাত ইমামগণের মতে নামাযের ভিতর বার হাজার বিষয় রয়েছে। যাকে আল্লাহ তায়ালা বারোটি জিনিষের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। এই বারোটি বিষয় নামায পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত। আর উক্ত বারোটি বিষয় হলোঃ
১। ইলম বা ইসলামিক জ্ঞান। এ সম্পর্কে রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইরশাদ হচ্ছে, মূর্খতার সাথে অধিক আমল থেকে ইলমের সাথে অল্প আমল অনেক উত্তম।
২। ওজু।
৩। পোশাক।
৪। সময়।
৫। কেবলামুখী হওয়া।
৬। নিয়্যত করা।
৭। তাকবীরে তাহরিমা।
৮। নামাযে দন্ডায়মান হওয়া।
৯। কুরআন শরীফ পাঠ করা।
১০। রুকু করা।
১১। সিজদাহ করা।
১২। আত্তাহিয়্যাতু পাঠে বসা।
আর এই সব কয়টির পূর্ণতা লাভ হয় ইখলাসের মাধ্যমে। এই বারটি বিষয়ের আবার তিনটি করে অংশ রয়েছে।
ইলমের তিনটি অংশ হচ্ছে – (১) ফরয ও সুন্নাহকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে জানা। (২) ওজু ও নামাযের ভিতর কয়টি ফরয ও কয়টি সুন্নাহ আছে তা জানা। (৩) শয়তান কিভাবে নামাযে বিঘ্ন ঘটিয়ে থাকে তা জানা।
তারপর ওজুতেও তিনটি অংশ রয়েছে (১) অন্তরকে হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে পবিত্র করা, যেভাবে বাহ্যিক অংগ পবিত্র করা হয়ে থাকে। (২) বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে গুনাহমুক্ত রাখা। (৩) পরিমিত পানি ব্যবহার করা।
পোশাকের তিনটি অংশ রয়েছে (১) হালাল উপার্জনের পোশাক হওয়া। (২) পাক-পবিত্র হওয়া (৩) সুন্নাহ অনুযায়ী পোশাক পরিধান করা।
সময়ের ব্যপারেও তিনটি জিনিষের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন (১) সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য সূর্য ও তারকারাজির প্রতি খেয়াল রাখা। বর্তমানে ঘড়ির সাহায্যে খুব সহজেই সময় নির্ধারণ করা সম্ভব। (২) আজানের প্রতি লক্ষ্য রাখা। (৩) সর্বদা অন্তরে নামাযের ওয়াক্তের প্রতি লক্ষ্য রাখা, যাতে ভুলবশত নামাযের সময় চলে না যায়।
নামাযের মধ্যে কয়েকটি ফরজ আছে, যার কোন একটি অসম্পূর্ণ থেকে গেলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। পুনরায় নামায দোহরিয়ে পড়তে হবে।
এবং কয়েকটি ওয়াজিব আছে। যেগুলো সঠিকভাবে আদায় না হলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। সোহ সিজদা দিলে নামায হয়ে যাবে। আর কিছু সুন্নাত সমূহ আছে, যেগুলো আদায় না করলে নামায নষ্ট হবে না, কিন্তু মাকরুহ হয়ে যাবে।
সুতরাং, আমাদেরকে খুব সতর্কতার সাথে নামায আদায় করতে হবে, এবং ফরজ, সুন্নাত ও ওয়াজিবসমূহ যথাযথভাবে সম্পাদন করতে হবে।
নিচে সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ
নামাযের ফরয সর্বমোট ১৩ টি। ৭ টি নামাযের বাহিরে এবং ৬ টি নামাযের ভিতরে। নামাযের বাহিরে যে ৭ টি ফরয, তা হচ্ছে-
১। শরীর পাক হওয়া।
২। কাপড় পাক হওয়া।
৩। নামাযের যায়গা পাক হওয়া।
৪। সতর ঢাকা।
৫। কিবলামুখী হওয়া।
৬। কোন ওয়াক্তের নামায পড়া হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা।
৭। নিয়্যত করা।
নামাযের ভিতর ৬ টি ফরয।
১। তাকবীরে তাহরীমা পাঠ করা।
২। সোজা হয়ে দন্ডায়মান হওয়া।
৩। কুরআন তিলাওয়াত করা।
৪। রুকু করা।
৫। সিজদাহ করা।
৬। শেষ বৈঠক।
নামাযের ওয়াজিবসমূহ, যার কোন একটি ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। নামাযের ওয়াজিব ১৪ টি।
১। কিরায়াতের শুরুতে সুরায়ে ফাতেহা পড়া।
২। তাঁর সাথে যেকোনও একটি সূরা মিলিয়ে পড়া।
৩। প্রথম দুই রাকা’য়াতে কিরায়াত পড়া।
৪। কওমা করা অর্থাৎ রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৫। জলসা করা অর্থাৎ দুই সিজদাহর মাঝে সোজা হয়ে বসা।
৬। প্রথম বৈঠক।
৭। আত্তাহিয়্যাতু পড়া।
৮। যেখানে আস্তে পড়া দরকার, সেখানে আস্তে পড়া ও যেখানে জোরে পড়া দরকার সেখানে জোরে পড়া।
৯। সালাম ফিরানো।
১০। মুক্তাদিগনকে ইমামের অনুসরণ করা।
১১। দুই ঈদের নামাযে ছয় তাকবীর বলা।
১২। তা’দীলে আরকান অর্থাৎ, রুকু সিজদাহ ধীর-স্থিরভাবে আদায় করা।
১৩। সঠিক তারতীব বা নিয়মকানুনের প্রতি খেয়াল রাখা।
১৪। বিতর নামাযে দু’আয়ে কুনুত পড়া।