হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারনে অনেক মেয়ের মুখেই দেখা দিতে পারে অবাঞ্ছিত লোম। সাধারণত এসব লোম থুঁতনি, নাকের নিচে ও ঠোঁটের উপরিভাগ, ঘাড়, দুই কানের পার্শ্ববর্তী জায়গা এবং ভ্রুর আশে পাশে দেখা যায়। অনেক সময় দুই গালেও ছোট ছোট কালো কালো লোম দেখা যায়, যেগুলো দেখতে দৃষ্টিকটু দেখায় এবং আপনার মুখের উজ্জ্বলতাকে ম্লান করে দিতে পারে। খুব বেশী লোমশ ত্বক না হলে এই সমস্যা সাধারণত সাধারণ ভিটামিন ও ডায়েটের মাধ্যমে সেরে উঠে। খুব বেশী লোমশ ত্বক হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হরমোন নিয়ন্ত্রনকারী ওষুধ খেতে পারেন।

মুখের ত্বকের এসব লোম ঘরে বসে দূর করতে চাইলে জেনে নিন কিছু প্রাকৃতিক উপায়। এগুলো খুব সাশ্রয়ী এবং সেই সাথে ত্বকেরও কোনও ক্ষতি করে না। আপনার রান্নাঘরেই এসব উপাদান খুঁজে পাবেনঃ
১। জিলাটিন পিল-অফ মাস্ক
মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার জন্য জিলাটিন ফেসমাস্ক সবচেয়ে সহজ এবং সেরা প্রতিকার হতে পারে। এটা বাড়ীতে বসে সহজেই করা সম্ভব। প্রক্রিয়াটি কিছুটা ঝামেলার মনে হলেও আপনি মসৃণ ত্বক পেতে চাইলে এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। জিলাটিন কিছুটা উৎকট গন্ধযুক্ত। তাই এতে কয়েক ফোঁটা লেবু অথবা এসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। তবে যাতে কোন ভাবেই এই মাস্ক টি চোখ এবং চোখের ভ্রূতে ব্যবহার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
উপকরণঃ
- জেলাটিন ১ চামচ (আনফ্লেভারেড)
- দুধ ২ থেকে 3 টেবিল-চামচ
- লেবুর রস (৩ থেকে ৪ ফোঁটা) অথবা
- ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল তেল প্রায় ১ থেকে ২ ফোঁটা
একটি ছোট বাটিতে দুধ, আন ফ্লেভারেড জিলাটিন এবং লেবুর রস অথবা এসেনশিয়াল তেল একসাথে মিশান। এগুলো ভাল করে মিশ্রিত করুন। ১০-১৫ সেকেন্ড মাইক্রোওয়েভে গরম করুন। মাইক্রোওয়েভ থেকে বের করেই সাথে সাথে মুখে লাগান। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন, যাতে এটা আপনার মুখে ভালোভাবে বসে যায়। জিলাটিন শুধুমাত্র সেসব জায়গায় প্রয়োগ করবেন যেসব যায়গায় লোমের ঘনত্ব বেশি। অথবা পুরা মুখেও প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই চোখ বা ভ্রুয়ের কাছাকাছি এটা লাগাবেন না। পাঁচ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে টেনে তুলে ফেলুন। এই মাস্কের সাথে সাথে আপনার মুখ থেকে অবাঞ্ছিত লোম এবং ব্ল্যাকহেডস দুটোই উঠে আসবে। আর যা থাকবে তা হচ্ছে, কোমল মসৃণ ত্বক। এই মাস্ক ব্যবহার করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে রোদে যাবেন না।
২। এপ্রিকট ফল ও মধু
এপ্রিকট এমন একটি ফল যা ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। এটাতে আছে প্রচুর পরিমানে লাইকোপেন। আর এই পদার্থটি মুখের উপরিভাগের লোম দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী। মধুর সাথে এপ্রিকটের মিশ্রণ খুব ভালো ফেসিয়াল স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে যা একই সাথে মুখের ত্বক পরিষ্কার করার সাথে সাথে অবাঞ্ছিত লোমও দূর করে। মধু আপনার ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল করবে।
উপকরণঃ
- আধা কাপ শুকনো এপ্রিকটের গুঁড়া
- এক চামচ মধু
শুকনা এপ্রিকট নিয়ে ব্লেণ্ডারে দিয়ে গুঁড়া করুন। লক্ষ্য রাখুন, যাতে কিছুটা দানা দানা থাকে, তবে খুব বেশি দানাদার না থাকাই ভালো। এই মিশ্রনে মধু যোগ করুন। মুখের উপর হালকা প্রলেপ আকারে প্রয়োগ করুন। ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হাতের সাহায্যে বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেসেজ করুন। এভাবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্ক্রাবিং করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ভালোভাবে সব লোম দূর করতে এই প্রক্রিয়াটি দুই থেকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করুন।
৩। ডিম
ডিমের সাদা অংশ মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে অনেকটা ম্যাজিকের মত কাজ করে। ডিমের সাদা অংশের সাথে ভুট্টা বা কর্ণ ফ্লাওয়ার ও মধু মিশিয়ে এই প্যাক তৈরি করতে হবে। এটা আপনার মুখের অতিরিক্ত লোম দূর করার পাশাপাশি মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াবে এবং ত্বক টান টান করে তুলতে সাহায্য করবে।
উপকরণঃ
- একটি ডিমের সাদা অংশ
- ১ চামচ মধু
- ১ চামচ কর্ণ ফ্লাওয়ার বা ভুট্টার গুঁড়া।
এই উপাদানগুলো সব একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। আপনার মুখের যে অংশে অবাঞ্ছিত লোম আছে সেখানে এটি প্রয়োগ করুন। সম্পূর্ণ মুখেও মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটা আপনার মুখে যখন একেবারে শুকিয়ে যাবে, তখন হাতের সাহায্যে টেনে তুলে ফেলুন, এতে বাড়তি চুলও উপড়ে যাবে।