নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি এখন ঘরেই বানিয়ে নিন। এই মিষ্টি দেখতে চমচমের মত কিন্তু কিছুটা বড়। উপরে ক্ষীর বা মালাই দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। সাধারণত কেকের মত কেটে কেটে পরিবেশন করে। মিষ্টির উপকরণ হিসেবে যা যা প্রয়োজন হবেঃ
১। আড়াই লিটার দুধের ছানা।
২। সুজি- ১ টেবিল চামচ।
৩। ময়দা- ১ টেবিল চামচ।
৪। চিনি- ১ চা চামচ।
৫। ঘি- ১ চা চামচ।
কিভাবে ছানা তৈরি করবেনঃ দুধ চুলায় দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। ফুটতে শুরু করলে চুলা নিভিয়ে দিন। এরপর একটি বাটিতে ৪ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার ও চার টেবিল চামচ পানি অথবা একটি লেবু ও পানি মিশিয়ে নিন। চুলা বন্ধ করা কয়েক মিনিট পর সিরকা অথবা লেবুর রস গরম দুধে ছড়িয়ে দিন। কিছুক্ষন ঢেকে রাখুন। তারপর ছানার পানি আলাদা হয়ে গেলে একটি পাতলা কাপড়ের উপর ছানাটি ঢেলে দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার ছানাগুলো কাপড়ের ভিতর রাখা অবস্থাতেই এক গামলা পানিতে ডুবিয়ে কিছুক্ষন কচলে পরিস্কার করে নিন, যাতে ভিনেগার বা লেবুর রসের টকভাব চলে যায়। এরপর কাপড়টি বেঁধে হাল্কাভাবে চিপে নিন। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট এই অবস্থাতেই ঝুলিয়ে রাখুন। ব্যস, ছানা তৈরি হয়ে গেলো মিষ্টির জন্য।
কিভাবে সিরা তৈরি করবেনঃ
১। চিনি- আড়াই কাপ।
২। পানি- ৮ কাপ।
প্রথমে একটি বড় হাঁড়িতে চিনি ও পানি নিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। যখন দেখবেন শিরাতে বলক এসেছে তখনই চুলার আঁচটা একেবারে কমিয়ে দিন।
মিষ্টির ক্যারামেলের জন্যঃ
১। চিনি- ১/৪ কাপ (অর্থাৎ, এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ)।
২। পানি- আধা কাপ।
একটি ছোট সসপ্যানে পানি ও চিনি মেশান। একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে ক্যারামেল করে নিন। এই ক্যারামেলের পানিতেই মিষ্টির রং চলে আসবে।
কিভাবে ক্ষীর তৈরি করবেনঃ
আড়াই কাপ তরল দুধের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। এভাবে জ্বাল দিতে দিতে একসময় দুধ গাড় হয়ে যখন এক কাপেরও কম হয়ে যাবে তখন একটি বাটিতে তুলে ফ্রিজে রেখে দিন। এই ক্ষীর পরবর্তীতে বালিশ মিষ্টির উপর দিয়ে সজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
যেভাবে তৈরি করবেন মিষ্টিঃ একটি বড় থালায় ছানাটি নিয়ে হাল্কাভাবে মথে খুব মসৃণ করে নিন। তারপর মিষ্টির বাকি উপকরন মিশিয়ে আরও কিছুক্ষন মথুন। তবে খুব বেশিক্ষন মথবেন না, এতে ছানা থেকে তেল বেড়িয়ে আসবে। পরে আর ঐ ছানা দিয়ে মিষ্টি বানানো সম্ভব হবে না। ডো এর মত হয়ে গেলে দুই ভাগ করে নিন একটি প্লেটে রেখে লম্বাটে আকারের দুটি মিষ্টি তৈরি করুন।
এবার চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিয়ে শিরাটা আবার ফুটাতে শুরু করুন। সিরা ফুটতে শুরু করলে এবার খুব সাবধানে মিষ্টি দুটি সিরাতে ছেড়ে দিন। লক্ষ্য রাখবেন, যাতে মিষ্টিগুলো ভেঙ্গে না যায়। এভাবে একটু বেশি আঁচে ১৫ মিনিট জ্বাল দিন। ১৫ মিনিট পর ঢাকনা সরিয়ে ক্যারামেলের পানিটা দিয়ে আবার ঢেকে ১০ মিনিট রান্না করুন।
এবার অন্য চুলায় দুই-তিন কাপ পানি গরম করে চুলার আঁচ কমিয়ে রাখুন। দশ মিনিট পর পর মিষ্টি গুলো উলটে দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে প্রায় এক ঘন্টার মত। এর ভিতর প্রতি দশ মিনিট অন্তর ১/৪ ফুটন্ত গরম পানি মিষ্টির উপর দিতে হবে। এভাবে রান্না করলে মিষ্টিটা খুব নরম হবে এবং আসল মিষ্টির স্বাদ পাবেন।
মনে রাখবেন, শুরুতে ১৫ মিনিট আঁচ বাড়ানো থাকলেও বাকি সময়ে মাঝারি আঁচে থাকবে। মাঝে মাঝে হাড়ির হাতল ধরে হাল্কাভাবে সিরাসহ মিষ্টিগুলো নেড়েচেড়ে দিতে হবে।
এক ঘন্টা পর চুলা বন্ধ করে দিন। এই অবস্থাতেই মিষ্টিগুলো সিরাতে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা রেখে দিন। অবশ্য রাতে রান্না করলে সারা রাত রেখে দেয়াই ভাল। তারপর ঘন ক্ষীর উপরে ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন নেত্রকোনার প্রসিদ্ধ এই মিস্টি।
মিষ্টি তৈরির সময় নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই লক্ষ্য রাখুনঃ
১। ছানা নরম করবেন, কিন্তু ছানাতে কোনভাবেই যেন পানি না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ছানা থেকে পানি ভালভাবে না সরলে মিষ্টি ভেঙ্গে যাবে। দেখতে অনেকটা চমচমের মত হলেও এই মিষ্টি চমচম থেকে অনেক নরম হয়, চমচমের মত অতটা শক্ত হয় না।
একটু পর পর অল্প করে গরম পানি দেওয়ার ফলে শিরাটা ঘন হবে না এবং মিষ্টিও শক্ত হবে না। যেহেতু মিষ্টিগুলো আকারে অনেক বড় এবং রান্না করার পর দ্বিগুন হয়ে যাবে, তাই এই কথা মাথায় রেখে মিষ্টির হাঁড়িটা বড় নিতে হবে।
২। সিরাটা যাতে ঘন না হয়, সেজন্য একটু পর পর পানি মেশাতে হবে। ফলে সিরা ঘন হবে না এবং মিষ্টিও নরম থাকবে। মিষ্টির সাইজ রান্না করার পর দ্বিগুণ হয়ে যায়, তাই হাড়ি নেয়ার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখুন।
৩। মিষ্টি সিরাতে দেয়ার পর তা যাতে কোনোভাবেই হাঁড়ির তল স্পর্শ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। হাঁড়ির আকারের উপর নির্ভর করে সিরার পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিন।
সৌজন্যেঃ বিডিনিউজ২৪ ডট কম।