দু’আ ইবাদাতের মগজ। মুমিন বান্দার জন্য ঢাল বা হাতিয়ার স্বরূপ। দু’আ করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হোন। আর না করলে নারাজ হোন। হাদিস শরীফে আছেঃ
مَنْ لَّمْ يسئَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ –
অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট দু’আ করে না (প্রার্থনা করে না, ও কিছু চায় না) আল্লাহ তায়ালা তার উপর অসন্তুষ্ট হোন। রাগান্বিত হোন ও তার উপর গজব দান করেন।
দু’আ করলে বান্দা যেমন লাভবান হয়, দু’আ না করলে তেমনি খতিগ্রস্থ হয়। তবে, দু’আ কবুলের জন্য কতিপয় গুন থাকা আবশ্যক। গুনগুলো নিচে বর্ণিত হলোঃ
১। উপার্জন হালাল হতে হবে। হারাম উপার্জনকারী ও ভক্ষণ কারীর দু’আ কবুল হয় না।
২। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, তথা আমর বিল মা’রুফ ও নাহি আনিল মুনকারের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। কারণ যে ব্যক্তি ঈমান বিবর্জিত কাজ দেখে অন্তরে ঘৃণা পোষণ করে না, হাদিসের বর্ণনামতে, তার নুন্যতম ঈমানও অবশিষ্ট নাই।
৩। দু’আ করার পূর্বে সম্ভব হলে পাক-পবিত্র হয়ে কেবলার দিকে মুখ করে আদব ও বিনয়ের সাথে দু’আ করতে হবে। এমনভাবে দু’আ করা যেমন একজন অসহায়, সম্বলহীন মানুষ অচেনা, অজানা দেশে তার অসহায়ত্বের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে করে থাকে। মোটকথা, দীনতা, হীনতা ও প্রবল আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে দু’আ করা। একটা ছোট বাচ্চা তার মায়ের কাছে যেমন কাকুতিমিনতি করে কিছু চায়, তেমন ভাবে চাওয়া।
৪। প্রথমেই নিজের অভাব-অভিযোগের কথা তুলে না ধরা। বরং প্রথমে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা, তারপর রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করা, তারপর নিজের গুনাহ ও কমতির কথা স্মরণ করে অন্তর থেকে অনুতপ্ত হওয়া। তারপর নিজের প্রয়োজন ও অভাব অভিযোগের কথা সবিস্তারে তুলে ধরা। সবশেষে দরুদ ও সালাম এবং আল্লাহর প্রশংসা করা দু’আ শেষ করা। কারণ, হযরতে আলী ও উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত আছে, প্রতিটি দু’আ আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষন না নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করা না হয়।
৫। আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি গুণবাচক নাম থেকে বিশেষ বিশেষ নামগুলো সহকারে দু’আ করা।
৬। বিশেষ বিশেষ দু’আ গুলো একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করা (বেজোর সংখ্যক হলে ভালো, যেমন ৩,৫ অথবা ৭ বার ইত্যাদি)।
৭। নাছোড়বান্দা হয়ে দু’আ করা। ছোট বাচ্চা যেমন তাঁর মায়ের কাছ থেকে কোনও জিনিষ আদায় করার জন্য মায়ের আঁচল শক্ত করে ধরে। ওই জিনিষ না পাওয়া পর্যন্ত আর ছাড়ে না। ঠিক এমনভাবে দু’আ করতে থাকা।
৮। দু’আ করার সময় সবার প্রথমে নিজের হিদায়াতের জন্য, তারপর পরিবার-পরিজন এবং সমগ্র উম্মতের হিদায়াতের জন্য দু’আ করা। তারপর নিজের পিতামাতা, পরিবার-পরিজন ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যাণকর বিষয়ের জন্য দু’আ করা।
৯। দু’আ করার সময়ে হাত জোর করে নতজানু হয়ে বসা। দু’হাতের তালু মেলে ধরে, বুক পর্যন্ত উঁচু রেখে চাওয়ার ভঙ্গিমায় মাঝারি আওয়াজে দু’আ করা। দু’আতে শরীক হলে মূল দু’আর পর মৃদুস্বরে ‘আমিন’ ‘আমিন’ বলতে থাকা। এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুম, নবীয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তায়ালার কাছে হাতে তুলে হাতের তালু মেলে রেখে দু’আ করো। হাত উল্টো করে নয়। দু’আ শেষে দুই হাত মুখের উপর হালকা করে মুছে নাও।
আবু যুহায়র নুমায়রী রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাত্রিতে আমরা রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বের হয়ে জনৈক আল্লাহওয়ালা ব্যাক্তির কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। লোকটি অত্যন্ত কাকুতিমিনতি করে আল্লাহ তায়ালার কাছে দু’আ করছিলো। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাঁর কাকুতিমিনতি এবং দু’আ মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন।
অতঃপর তিনি আমাদেরকে বললেন, যদি সে দু’আর সমাপ্তি ঠিকঠাকমত করে এবং মোহর লাগায়, তবে সে যা চেয়েছে, তাঁর ফয়সালা করিয়ে নিয়েছে। আমাদের মধ্যে এক ব্যাক্তি বলে উঠলো, হুযুর, ঠিকঠাকমত সমাপ্তি ও মোহর লাগানোর নিয়ম কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দু’আর শেষে আমিন বলে দু’আ সমাপ্ত করা। (আবু দাউদ, মা’আরেফে কুর’আন)