আল্লাহ তায়ালা রাতকে দিয়েছেন ঘুমের জন্য। আর দিনকে দিয়েছেন কর্ম-চাঞ্চল্য ও ব্যস্ততার জন্য। কিন্তু রাতে যদি ভালো ঘুম না হয়, তবে সারাটা দিনই যেন মাটি হয়ে যায়। রাতের বেলা যাদের ঘুম হয় না, তাঁরা অনেকেই স্লিপিং পিল বা ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমান। একটানা স্লিপিং পিল বা ঘুমের বড়ি খাওয়ার ফলে নানা রকম স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমনকি অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়েও দাড়ায়।
রাতে একটা দারুন ঘুম দিতে চান? তাহলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে পারে। প্রাকৃতিক এসব নিয়ম মানলে গভীর ঘুম হবে রাতে। আর সেই সঙ্গে দেহ ও মনে আসবে শান্তি ও স্থিরতা। চলুন জেনে নেই, কীভাবে প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করে আরামের ঘুম দেয়া যায়ঃ
সময়মত খাওয়া, ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠাঃ প্রতিদিন সকালে যেমন সূর্য উঠে, আবার সন্ধ্যায় অস্ত যায়, ঠিক তেমনি আমাদের দেহও কিছু নিয়ম মেনে চলে। এসব নিয়মে গড়মিল হলেই দেখা দেয় অস্বস্তি, অনিদ্রা ও নানা রকম স্বাস্থ্য জটিলতা। তাই দেহের পরিপাকতন্ত্র ও নার্ভগুলো সুস্থ-সবল রাখতে সময়মত খাওয়া ও ঘুমের কোনও বিকল্প নেই। কয়েকদিন কঠোর নিয়ম মেনে চলুন। ঘড়ি ধরে খান ও ঘুমাতে যান, তাহলে দেখবেন আপনার একটি রুটিন গড়ে উঠেছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আপনি বিছানায় যাওয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ছেন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের মতে ভালো ঘুমে সহায়তা করার জন্য বেশ কিছু খাবার আছে। চাইলে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
ঘুমের আগে এক গ্লাস দুধঃ ঘুমানোর আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ আপনার ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে; এটা প্রায় সবাই-ই জানে। তবে যাদের পেটে খালি দুধ সহ্য হয়না তাঁরা মাঠা খেতে পারেন।
দারুচিনিঃ দুধ বা মাঠার সংগে তিন আঙ্গুলের এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে ঘুম গভীর হবে।
জায়ফলঃ এক কাপ তাজা গরম দুধে বা ঠান্ডা মাঠায় অল্প একটু জায়ফল গুঁড়া মেশান। তারপর ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন।
জাফরানঃ গরম দুধ বা মাঠায় জাফরানের এক দুইটি পাপড়ি মিশিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন।
দুগ্ধজাত খাবারঃ খালি দুধ খাইতে না চাইলে দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন। এরপর খুব বেশি পানি পান করবেন না। এতে ঘুমানোর পর প্রাকৃতিক প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
মসলা চাঃ অনিদ্রা দূর করতে খেতে পারেন মসলা চা। কিন্তু এর সংগে চায়ের পাতি না মেশালেই ভালো। মসলা চা হবে শুধু মসলা দিয়ে জ্বাল দেয়া। যেমন, কিছু আদা কুচি করে মিশিয়ে তা জ্বাল দিতে পারেন। তারপর জ্বাল দেয়া পানিটা ছেঁকে খেয়ে নিবেন। অথবা একইভাবে লবঙ্গ বা দারুচিনির মসলা চা তৈরি করে খেতে পারেন। এছাড়াও অনিদ্রা দূর করতে লেটুস পাতার চা খুব ভাল কাজ করে।
লেটুস চাঃ লেটুস পাতায় আছে স্নায়ু শীতল কারী উপাদান যা উদ্বেগ ও অনিদ্রা দূর করে। একইভাবে তুলসী বা পুদিনা পাতার চা’ও একই কাজ করে। গরম পানিতে কয়েকটি লেটুস পাতা, তুলসী পাতা বা পুদিনা পাতা মিশিয়ে সিদ্ধ করুন। তার সঙ্গে অল্প পরিমাণে চা পাতা ও মধু মেশান। তারপর ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই চা পান করুন। এতে ঘুম খুব গাড় ও গভীর হবে।
কলাঃ কলাতে আছে ট্রিপ্টোফান নামক উপাদান যা রক্তে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে সাহায্য করে। এই ফলের অন্যান্য খনিজ উপাদান যেমন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও লৌহও ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক। এক কাপ দইয়ের সঙ্গে দুটি কলা ও একটি কমলার স্মুদি আপনাকে এনে দিবে প্রশান্তিদায়ক ঘুম।
হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করাঃ ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম পানিতে গোসল করলে তা আপনার স্নায়ুকে স্বস্তি দেয়ার মাধ্যমে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে। এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পছন্দসই এসেনশিয়াল তেল মেশালে কার্যকারিতা আরও বাড়বে। যেকোনোও ফুলের এসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমাইল। অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ও মধুঃ এই ভিনেগারে থাকা অ্যামিনো এসিড ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক। মধুতে আছে শীতলকারক উপাদান যা মস্তিষ্ক থেকে সেরোটোনিন নামক উপাদানের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে প্রশান্তিদায়ক ঘুম হয়।ঘুমাতে যাওয়ার আগে, এক কাপ গরম পানিতে দুই টেবিল-চামচ মধু ও অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করুন। দারুন ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হবে। তার সাথে সাথে, ঘুমানোর আগে দু’আ-কালাম পড়তেও ভুলবেন না যেনো। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।