বয়ঃসন্ধির বছরগুলোতে বেশীরভাগ মানুষের দেখা দিতে পারে পিঠের ব্রণ। এটা একটা খুব সাধারণ সমস্যা। অল্প থাকলে এটা খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করে না, কিন্তু এটা যখন অনেক বেশী পরিমাণে দেখা দেয় তখন ইনফেকশনের মত মনে হতে পারে।
অনেক সময় এই ধরণের ব্রণ সহজে ভালো হয় না। এমনকি নানা রকম ক্রিম অথবা এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারও কোনও বিশেষ ফল নিয়ে আসে না। কিন্তু সব কিছু যখন বিফল হয়ে যাবে, তখন আপনি বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

আমি বলবো না যে এগুলো যাদুর মত কাজ করবে এবং, নিমিষেই ব্রণ দূর হয়ে যাবে, কিন্তু আমি এটা বলতে পারি যে এগুলো ব্যবহার করলে আপনি আস্তে আস্তে ফল পেতে শুরু করবেন, এবং যখন আরোগ্য লাভ করতে শুরু করবেন তখন এই ব্রণগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকবে।
নীচে আমি ব্রণের কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো, যা পিঠের ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে।
১। ওটমিল বা বেসন
২ টেবিলচামচ ওটমিল অথবা বেসনের সঙ্গে অল্প পানি মেশান। পেস্ট তৈরি করুন। তারপর আক্রান্ত জায়গায় লাগান। ওটস অথবা বেসন খুব ভালো স্ক্রাব যা মরা চামড়া ও ত্বকের ক্ষত দূর করতে সাহায্য করে। এই প্রতিকারটি খুব কাজের ও দ্রুত ত্বকের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে সাহায্য করে।
২। চা গাছের তেল
এটা হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক টনিক এবং অসাধারণ পরিষ্কারক যা বন্ধ হয়ে যাওয়া লোমকূপের গভীরে প্রবেশ করে ব্যাক্টেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদান দূর করে। এই এসেনশিয়াল তেলটি ব্যবহার করে আপনি খুব ভালোভাবেই পিঠের ব্রণ দূর করতে পারবেন। তুলার বল দিয়ে আক্রান্ত জায়গায় চা গাছের তেল লাগান এবং এটা যাতে ভালোভাবে কাজ করে সেজন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর ধুয়ে ফেলুন।
৩। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
এটা হচ্ছে আরেকটি প্রাকৃতিক ত্বক পরিষ্কারক। আপনি এটা আক্রান্ত স্থানে আস্তে আস্তে মালিশ করে লাগাতে পারে। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ত্বকের ব্যাক্টেরিয়াগুলো মেরে ফেলে এবং ত্বকের লোমকূপ থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। এতে ব্রণের কারণে সৃষ্ট ত্বকের প্রদাহ কমে যায়।
৪। অ্যাপসম সল্ট
অ্যাপসম সল্ট সামুদ্রিক বা খনিজ পানি শুকিয়ে তৈরি করা হয়। এই নামটি এসেছে খনিজ পানির শহর বলে পরিচিত অ্যাপসম থেকে যা ইংল্যান্ডের স্যুরে শহরে অবস্থিত। এই শহরের খনিজ পানি শুকিয়ে এই লবণটি তৈরি করা হয়, বাংলায় আমরা যেটাকে বিট লবন বলে চিনি। ম্যাগনেসিয়াম সালফেট বিভিন্ন অসুস্থতা দূর করতে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন, মানসিক চাপ ও ব্যথা দূর করতে এবং ত্বক নরম ও মসৃণ করতে এটা ব্যবহার করা হয়। অ্যাপসম সল্টের আরেক নাম হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট যা লোমকূপের বিষাক্ত পদার্থ ও ময়লা দূর করে। একইসাথে এটা ত্বকের প্রদাহ ও লাল হয়ে যাওয়া দূর করে। এক গ্লাস পানির সাথে এক টেবিল চামচ অ্যাপসম সল্ট তাতে তুলার বল ভিজিয়ে পিঠ পরিষ্কার করে নিন।
৫। বেকিং সোডা মাস্ক
পিঠের ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার আরেকটি চমৎকার উপায় হচ্ছে বেকিং সোডা এবং পানি। এটা পিঠের ব্রণের জন্য খুব ভালো কাজ করে। পানির সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন এবং এটা আপনার পিঠে লাগান। ১৫ মিনিটের জন্য এটা লাগিয়ে রাখুন, তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেকিং সোডা হচ্ছে ন্যাচারাল এন্টি-সেপ্টিক যা ব্রণের জন্য দায়ী ইনফেকশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে।
৬। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাও ত্বকের সুস্থতার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মাত্র একবার পোশাক পড়ুন এবং সাধারণ মাইল্ড ডিটারজেন্ট দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন, যেটার মধ্যে কোনও ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই। একটি এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল সাবান বা শাওয়ার জেল দিয়ে সম্ভব হলে দিনে দুইবার গোসল করুন।
৭। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া
পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে চেষ্টা করুন (যেমন, ফল, সব্জী, আঁশ ও স্বাস্থ্যসম্মত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার) এবং যেগুলো ব্রণের ক্ষতি করে সেসব খাবার কম খাবেন (মিষ্টি, পেস্ট্রি এবং চর্বিযুক্ত খাবার) এগুলো কম খেলে নতুন করে আর ব্রণ উঠবে না। বেশ কিছু খাবার যেমন ডেইরী প্রোডাক্ট, ভাজাপোড়া এবং চকোলেট একেবারেই এড়িয়ে চলবেন। সার্বিকভাবে কি খাওয়া হচ্ছে সেদিকে সবার আগে নজর দিন, তাহলে এম্নিতেই ব্রণ চলে যাবে।
ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে জানিয়ে দিন। ধন্যবাদ!