বছরের এই সময়টাকে বসন্তকাল বলা হয়। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের দেহ মনেও যেনো প্রানের ছোঁয়া লাগে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময়টাতে মানুষের ত্বক কিছুটা ভালো থাকলেও ত্বক ফেটে যাওয়া ও টানটান অনুভূত হওয়া খুব স্বাভাবিক। তবে এই সময়টাতেও একটু যত্ন নিলে সুন্দর থাকা সম্ভব। সেজন্য করতে পারেন নিচের কাজগুলোঃ
১। প্রচুর পানি খানঃ মানুষের দেহের ৭৫% পানি দিয়ে গঠিত। দৈনিক কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা, আপনার শরীরকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি ত্বকেও এনে দিবে অতুলনীয় উজ্জ্বলতা। তাই নিয়ম করে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২। প্রচুর ফল ও শাক-সব্জি খানঃ প্রকৃতি রুক্ষ থাকলেও এই সময়টাতে বাজারে প্রচুর ফল ও শাক-সব্জি পাওয়া যায়। বিশেষ করে টমেটো, গাজর, কমলা, পেঁপে, আঙ্গুর, আপেল, আনারস এবং বেল খেতে পারেন। শাক-সব্জি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক সুন্দর করে এবং দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূর্ণ করে।
৩। সপ্তাহে দুই দিন ফেসিয়াল করুনঃ সপ্তাহে দুইদিন আপনার ত্বক বুঝে ফেসিয়াল করুন। বাজারে অনেক হারবাল ফেসমাস্ক কিনতে পাওয়া যায়। চাইলে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন, অথবা ঘরেই নিজের পছন্দসই উপকরন দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন।
৪। ত্বকের স্ক্রাবার ব্যবহার করুনঃ এই সময়টা অনেক শুষ্ক হওয়ায় খুব সহজেই ত্বকের উপর মরা চামড়ার আস্তরন জমে যায়। এজন্য পুরো দেহ ও মুখে ব্যবহার করতে পারে ত্বকের স্ক্রাবার।
৫। তেলবিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুনঃ স্ক্রাব করার পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারটি তেলবিহীন হলে ভালো হয়। এজন্য এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
নীচে কিছু ঘরোয়া স্ক্রাবার ও ফেসিয়াল তৈরি করার পদ্ধতি দেয়া হলো যা আপনি এই সময়ে ব্যবহার করতে পারেন।
১। এলোভেরা জেল ও কমলার খোসা গুঁড়াঃ কমলার খোসা ধুয়ে রোদে শুকিয়ে গুড়া করে নিন। একেবারে মিহি করে গুড়া করবেন। এলোভেরা ছুরি দিয়ে কেটে রস বানিয়ে নিন। এই রসের সাথে সামান্য জিলাটিন মিশিয়ে একটি পাত্রে রেখে দিন। ব্যস, হয়ে গেলো এলোভেরা জেল। সুগন্ধের জন্য ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল তেল অথবা আপনার পছন্দ মত তেল এক দুই ফোঁটা দিতে পারেন। অথবা গোলাপ জলও মেশাতে পারেন। নিজে নিজে জেল তৈরি করতে না চাইলে বাজার থেকে এলোভেরা জেল এনে নিতে পারেন। এক চামচ জেলের সাথে আধা চা চামচ কমলার খোসার গুড়া মেশান। সাথে অল্প একটু মধুও দিতে পারেন। মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। তারপর হাতের সাহায্যে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। ভালো করে ম্যাসাজ হয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন ও পরিস্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন।
২। কোকোনাট বাটার ও চন্দন গুঁড়াঃ একটি নারিকেল কুরিয়ে তা থেকে ভালো করে রস বের করে নিন, যাকে সাধারণত নারকেল দুধ বলা হয় এবার এই রসটি একটি কাঁচের বয়াম অথবা পরিষ্কার জগে পাচ থেকে ছয় ঘণ্টা নরমাল ফ্রিজে রেখে দিন। একসময় দেখবেন, নারিকেলের পানি ও তৈলাক্ত অংশ যাকে কোকোনাট বাটার বলা হয়, আলাদা হয়ে উপরের দিকে জমে গেছে। এবার সাবধানে এই অংশটি পানি থেকে আলাদা করে একটি জারে সংরক্ষণ করুন। ত্বকের স্ক্রাবার তৈরি করার জন্য কয়েক চামচ স্ক্রাবারের সংগে পরিমাণ মত চন্দন গুড়া মেশান। ত্বকে ব্রণ থাকলে নিমের গুঁড়াও মেশাতে পারেন। হাতের কাছে চন্দন গুড়া না থাকলে মসুরির ডালের গুঁড়াও ব্যবহার করতে পারেন। এবার এই স্ক্রাবারটি মুখ সহ সারা শরীরে ব্যবহার করতে পারবেন। কনুই ও হাঁটুর কালো দাগ দূর করতে লেবুর রস মেশাতে পারেন।
৩। চুলের প্রাকৃতিক কণ্ডিশনারঃ আবহাওয়ার সাথে সাথে এই সময়ে চুলও অনেক বেশী রুক্ষ্ম ও চটচটে হয়ে যেতে পারে। চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সমপরিমাণ এলোভেরার রসের সাথে কোকোনাট মিল্ক মিশিয়ে সম্পূর্ণ চুলে স্প্রে করুন। আধ ঘন্টা রেখে মাইল্ড কোনও হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। খুশকি থাকলে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। চুলে ঝরঝরে ভাব আনতে চাইলে কোকোনাট মিল্কের পরিবর্তে চায়ের লিকার ব্যবহার করতে পারেন।
৪। চুলের মাস্কঃ এক চামচ হেনা পাউডার অল্প পরিমাণ পানিতে দুই তিনঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এর সঙ্গে টক দই ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে চুলে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ১ ঘন্টা রেখে প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও অলিভ মাস্ক ব্যবহার করতে চাইলে চারপাঁচটি জলপাই থেঁতো করে রস নিংড়ে নিন। এর সঙ্গে এলোভেরার রস ও কোকোনাট বাটার মিশিয়ে মিক্সচার ব্লেন্ডার দিয়ে ফোম করে নিন। এই মাস্কটি চুলের ঝরঝরে ভাব এনে দিতে অতুলনীয়।
ব্যস, ঘরোয়া এসব উপাদান ব্যবহার করেই বসন্তকালে সেরে নিতে পারেন ত্বক চর্চার পাট। আশা করি, উপরের টিপসগুলো আপনাদের কাজে লাগবে।
Pingback: কীভাবে বানাবেন চালের গুঁড়ার ফেসিয়াল – NariMohol