পৃথিবীটা যেমনই হোক, আমরা সবাই কিন্তু কমবেশি এই পৃথিবীটাকে ভালবাসি। আমরা কেউই কি স্বেচ্ছায় পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাই? চাই না। পাগল অথবা মানসিক ভারসাম্যহীন হলে আলাদা কথা। কিন্তু আমরা কি জানি, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীটাকে কতটুকু নিরাপদ রেখে যাচ্ছি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বাদ দিলেও আমাদের নিজেদের জন্যই তো আমাদের পৃথিবীটা খুব বেশি নিরাপদ নয়। কারণ হচ্ছে দূষণ। প্রতিদিন আমরা যে হারে পরিবেশ দূষণ করছি তার মাশুল আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গুনতে হতে পারে। আমরা মেয়েরা বেশির ভাগ সময়েই ঘরে থাকি। এক্ষেত্রে আমাদের খুব বেশি কিছু করারও নেই।
কিন্তু পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে আমাদের মাধ্যমেই। নিচে এমন কিছু পদক্ষেপ দেয়া হলো, যা ঘরোয়াভাবে পরিবেশ দূষণ কমাতে সহায়ক হবে।
১। শিশুদের ডায়াপার ও মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবেশ-বান্ধব দেখে কিনুনঃ বিজ্ঞাপনে যতই বলা হোক না কেন শিশুদের ডায়াপার ও মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা নিরাপদ। কিন্তু আসলে এই পন্যটাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। যা কোনোমতেই নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত নয়। কারণ এর পিছনে থাকা প্লাস্টিকের শিল্ড এবং উপরিভাগের প্লাস্টিকের পাতলা আবরন দূষণের অন্যতম কারণ হতে পারে। এ ধরনের স্যানিটারি পণ্য আসলে স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
প্লাস্টিক শিল্ডের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে মোম দিয়ে তৈরি পানি নিরোধক কাপড় বা কাগজ। উপরিভাগে ব্যবহার করা যেতে পারে শোষণযোগ্য পাতলা সুতির কাপড় বা ফেসিয়াল পেপারের মত পাতলা কাগজ। এই দুই অংশকে আঠা দিয়ে খুব সহজেই জোড়া লাগানো যায়। যার ভিতরে থাকতে পারে তুলা ও অন্যান্য শোষণযোগ্য পদার্থ। এর ফলে শিশুদের ডায়াপার ও অন্যান্য স্যানিটারি সামগ্রী পরিবেশ বান্ধব বা সহজে পচনযোগ্য হয়ে উঠবে।
২। প্লাস্টিক সামগ্রী এড়িয়ে চলুনঃ প্লাস্টিকের যেসব সামগ্রী মাত্র একবার ব্যবহার করতে হয়, সেসব সামগ্রী ও পণ্য এড়িয়ে চলুন। যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ বা রাবারের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে টিন-ক্যান বা কাঁচের বোতল বেছে নিতে পারেন। এবং প্লাস্টিক বা নাইলনের দড়ীর পরিবর্তে পাটের দড়ি বা অ্যালুমিনিয়ামের দড়ি ব্যবহার করতে পারেন।
৩। প্লাস্টিকের পণ্য রিসাইকেল করুনঃ প্লাস্টিকের যেসব পণ্য রিসাইকেল করা যায়। যেমন গ্যালন, বালতি, চেয়ার ও অন্যান্য আসবাব পত্র, প্লাস্টিকের তার এগুলো নস্ট হয়ে গেলে রিসাইকেল করতে নির্দিষ্ট স্থানে জমা দিন। এসব পণ্য কখনও যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
৪। বিদ্যুৎচালিত সামগ্রীঃ বিদ্যুতচালিত প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন, টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইস্ত্রি, ঘড়ি এবং এই ধরণের যত সামগ্রী আছে তা রিসাইকেল না করে উৎপাদনকারীদের কাছে ফেরত দিতে চেষ্টা করুন। এতে তাঁরা এইসব যন্ত্রের যন্ত্রাংশ রিসাইকেল করার সুযোগ পাবে।
৫। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার একেবারে কমিয়ে আনুনঃ যেসব ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার না করলেই নয় সেসব ছাড়া অন্য কোনও ক্ষেত্রে প্লাস্টিক একেবারেই ব্যবহার করবেন না। এবং রিসাইকেল করা যায় না এমন প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করবেন না।
প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব উপায় সমূহ কিছুটা ব্যয় বহুল হলেও আমাদের উচিৎ সেটাই ব্যবহার করা। প্লাস্টিকের ব্যাগ ও বোতল এবং অনবায়নযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করা হোক, এটাই এবারের পৃথিবী দিবসে আমাদের একমাত্র দাবী ও চাওয়া।
আশা করি, এই পৃথিবীর জন্য মানব সভ্যতা ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে মানুষ একদিন সম্পূর্ণরূপে প্লাস্টিক পণ্য বর্জন করতে সক্ষম হবে। সেই কামনাই রইলো এবারের পৃথিবী দিবসে। সফল হোক পৃথিবী দিবস- ২০১৮।