Skip to content

কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করবেন

কুরবানীর ঈদের পর পশুর চামড়া আমরা প্রায় সময়ই দান করে দেই। যদিও দানকৃত চামড়ার ন্যায্যমূল্য চামড়ার আধিক্যের কারণে পরিশোধ করা হয় না। অথচ, দেশে কোনও চামড়ার জুতা ২০০০ এর নিচে পাওয়া যায় না। এবং বহির্বিশ্বে চামড়াজাত পণ্যের দাম আরো বেশী। একটি সম্পূর্ণ চামড়াজাত পণ্যের দাম কম পক্ষে $১০০ থেকে $২৫০ বা এরও বেশী হয়ে থাকে। এজন্য আমাজন বা অন্যান্য অনলাইন রিটেইল শপেই আপনি দাম যাচাই করে দেখতে পারেন।

যাই হোক, পানির দামে চামড়া বিক্রি না করে চামড়াটা কিন্তু আপনি একটু চেষ্টা করলেই আপনার ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করে নিতে পারেন। চলুন, এবার দেখে নেই প্রক্রিয়াটি। এই প্রক্রিয়াটি বহুকাল আগে থেকেই ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা আরও সস্তা কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া পরিবেশের ক্ষতি করে না কিন্তু আপনি পেয়ে যাবেন ব্যবহারযোগ্য ফাইন লেদার। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ভেজিটেবল ট্যানিং।

Image titled Make Leather Naturally Step 1

ধাপ ১

প্রথমেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার একটি জায়গা ঠিক করে নিন। তা উন্মুক্ত খোলামেলা জায়গা বা সহজে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এমন রুম হলে ভালো হয়। রুমটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। মনে রাখবেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা একটি ঝামেলাপূর্ণ কাজ এবং এর ফলে অনেক বেশী ময়লা-আবর্জনা তৈরি হয়ে থাকে। তাই নিজের সেফটির জন্য ভারী গ্লাভস ও মোটা কাপড় পরে নেয়া ভালো। চামড়াটি রাখার জন্য দুটি সিমেন্টের ব্লকের উপর একটি কাঠের পাটাতন বিছিয়ে নিন। এর মাপ হবে ৮x৮ ইঞ্চি।

ধাপ ২

aid2575122-v4-900px-make-leather-naturally-step-2-3540768

একটি বড় বোল বা বালতিতে আধা কেজি থেকে ১ কেজি লবণ দিয়ে কাঁচা চামড়াটি সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। যাতে চামড়ার ভিতরের আস্তরণ ছাড়িয়ে নেয়া যায়। মনে রাখবেন ভেজানো চামড়া অনেক ভারী হয়ে থাকে, তাই এটা হাতে না তুলে কোনও মসৃণ কাঠ বা হাতলের সাহায্যে উঠিয়ে নিন।

ধাপ ৩

Image titled Make Leather Naturally Step 3

একটি ধারালো ব্লেড বা নকশা করার চাকু দিয়ে চামড়ার একেবারে নিচের মাংসের স্তরটি ধীরে ধীরে পরিস্কার করে নিন। এই কাজটি করতে কয়েক ঘন্টা লেগে যেতে পারে; তাড়াহুড়া করবেন না, নয়তো অসাবধানতায় চামড়া কেটে যেতে পারে।

ধাপ ৪

Image titled Make Leather Naturally Step 4

পরিস্কার হয়ে গেলে এবার চামড়া থেকে লোম সরানোর পালা। চামড়ার নিচের ক্যারাটিনের স্তর ভেঙ্গে ফেলতে চুন ব্যবহার করা হয়। ২ কাপ চুন এক গ্যালন (3.8 L) পানির সাথে মেশান। পর্যাপ্ত পরিমাণে বানান, যাতে সম্পূর্ণ চামড়া ঢেকে যায়। চুনের পানিতে ১ অথবা দুই সপ্তাহ কাঁচা চামড়াটি ভিজিয়ে রাখুন। পশম, বিশেষ করে হরিণ বা ছাগলের চামড়ার পশম দূর করা বেশ কঠিন, তাই এই পর্যায়ে কোনও তাড়াহুড়া করবেন না।

অন্যদিকে, এটা এই পানিতে বেশিদিনের জন্য রেখে দিলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভেজানোর প্রক্রিয়া শেষে, এটা আপনার ওয়ার্কবেঞ্চে আবার তুলুন এবং নরম হয়ে যাওয়া পশম একটি কাঠের ধারালো বৈঠা, চাকু, ঝিনুকের খোল অথবা এই ধরনের কোনও কিছু ব্যবহার করে তুলে ফেলুন। এবারও সাবধানে করবেন, যাতে অসাবধানতায় চামড়া কেটে না যায়।

Image titled Make Leather Naturally Step 5

ধাপ ৫

এবার চামড়াটি বেশ পরিচ্ছন্ন দেখাবে, কিন্তু এখনো এটা একটি প্রটেক্টিভ লেয়ার দিয়ে ঢাকা আছে। মাংসের দিকে একটি মেমব্রেন এবং পশমের দিকে এপিডারমিস দিয়ে ঢাকা আছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে এই লেয়ারগুলো অবশ্যই সরাতে হবে, বিশেষ করে শক্ত অ্যাপিডারমিস লেয়ারটি।

Image titled Make Leather Naturally Step 6

ধাপ ৬

অনেক গুলো ওক বা হেমলকের ছাল সংগ্রহ করুন। ওক বা হেমলক গাছ না থাকলে এমন কোনও গাছ খুঁজে বের করুন যাতে পর্যাপ্ত ট্যানিন আছে। এই ধরনের গাছের ছাল ভিজিয়ে রাখলে তা চায়ের লিকারের মত রং ধারণ করে। জীবন্ত কোনও গাছ থেকে ছাল তুলবেন না এতে গাছের গায়ে ক্ষত হয়ে গাছ বিকলাঙ্গ বা মারা যেতে পারে। একটু অনুসন্ধান করলেই আপনি সঠিক গাছটি খুঁজে বের করতে পারবেন।

বড় পানির পাত্রে এই ছালগুলো যুক্ত করুন। খালি ট্র্যাশ ক্যান বা প্লাস্টিকের বাক্স এক্ষেত্রে আদর্শ। এই ছালের পানিতে নয় মাসের বেশী সময় ধরে ভিজিয়ে রাখুন। এই সময়ের মধ্যে গাছের ছালে থাকা ট্যানিক এসিড চামড়ার ত্বকের প্রতি লোমকূপে পৌঁছে যাবে। এটা একধরনের মাইক্রোস্কোপিক ফাইবার যাতে পর্যাপ্ত প্রিজারভেটিভ থাকে। ভালো ফলাফলের জন্য কয়েকবার এই পানি বদলে নতুন ছালের পানি দিতে পারেন। প্রতি তিন মাস পর পর এটা করা যেতে পারে।

ট্যানিং প্রক্রিয়া হয়ে গেলে এই পানি থেকে চামড়াটি তুলে নিন এবং এটা পরিস্কারভাবে ধুয়ে ধারালো ব্লেড দিয়ে ছেঁচে পরিস্কার করে নিন।

ধাপ ৭

এবার এই সারফেসের উভয় দিক শুকিয়ে নিন। তারপর আবারো, ধারালো ব্লেড বা চাকু দিয়ে ঘষে ঘষে ত্বকের উপরিভাগের আবরণ সাবধানে চেঁছে তুলে ফেলুন। আরও মসৃণ ত্বক পেতে এবার শিরিষ কাগজ দিয়ে উপরিভাগ ঘষুন। এর ফলে কঠিন দাগ গুলোও উঠে যাবে।

rbvaefm1kl-ab9dqaaca2e5yaxe817-6733567

এই ছিদ্রে দড়ি ঢুকিয়ে একটি কাঠের ফ্রেমে টানটান করে চামড়াটি বেঁধে দিন। এই ভাবে টান টান করে বাঁধা চামড়াতে খুব সহজেই তেল বা মোম প্রয়োগ করা যায়। অর্ধেক শুকানো পর্যন্ত এভাবে টান টান করে বেঁধে রাখুন। কয়েক ঘণ্টা রোদে রাখলেই যথেষ্ট। চামড়ার উভয় পাশে একটি মোটা ব্লেড দিয়ে অথবা গোলাকার লাঠি অথবা বৈঠা দিয়ে জোরে জোরে ঘষুন।

Image titled Make Leather Naturally Step 7

এই প্রক্রিয়াটিকে  বলা হয় স্লিকিং, যাতে দ্রুত এবং বার বার চামড়াটি টানা হয় ফলে এটি স্থায়ীভাবে নরম, মসৃণ, এবং নমনীয় হয়ে উঠে।

চামড়া ভালভাবে শুকানো পর্যন্ত ক্রমাগত এই প্রক্রিয়াটি করতে হবে। এটা খুব ক্লান্তিকর একটি প্রক্রিয়া, তাই দুই বা ততোধিক লোক পালাক্রমে করতে পারে। যত দীর্ঘ সময় ও শক্তি দিয়ে এই কাজটি করা যায়, চামড়ার গুণগত মান তত ভালো হয়ে উঠে।

Image titled Make Leather Naturally Step 8

ধাপ ৮

এই পর্যায়ে এসে কাঠ কয়লার আগুনে এভাবে চামড়াটি ঝুলিয়ে রাখুন। এই  ধাপটি আবশ্যক নয়। কিন্তু এটা চামড়াকে পানিরোধী এবং রং কে আরও গাড় করতে সাহায্য করবে। এজন্য তেপয় ব্যবহার করুন বা তিনদিকে কাঠের শলা বেঁধে তাঁর উপর চামড়াটি মুড়িয়ে দিন। লক্ষ্য রাখুন, যাতে চামড়া আগুনের  সংস্পর্শে না লাগে।

ধাপ ৯

Image titled Make Leather Naturally Step 9

অথবা, চামড়া চকচকে করতে  চামড়াতে খুব ভালোভাবে তেল বা গোলানো মোম প্রয়োগ করতে পারেন। ফলে এর উপরিভাগ অত্যন্ত মসৃণ ও চকচকে হয়ে উঠবে।

Image titled Make Leather Naturally Step 10

অভিনন্দন! আপনি যদি সঠিকভাবে উপরের প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে থাকেন, তাহলে আপনার প্রক্রিয়া করা চামড়াটি খুব নরম, মসৃণ এবং হালকা হবে। এটা এখন রং করা অথবা আপনার শখের চামড়ার ব্যাগ, জুতা বা ডাইরি তৈরি করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আপনার পছন্দমত যেকোনো চামড়ার জিনিষ এই চামড়া দিয়ে খুব সহজেই বানিয়ে নিতে পারেন।

কিছু উদাহরণ হচ্ছে, চামড়ায় মোড়ানো বই, ব্যাগ, পাউচ, কাঠের টুল, জামা, বেল্ট, জুতা এবং দেয়াল সজ্জার উপকরণ। আপনার সৃজনশীলতা কাজে লাগান এবং নতুন নতুন চামড়ার জিনিষ তৈরি করুন।

সূত্রঃ wikihow.com থেকে অনুবাদকৃত।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ক্রিয়েটিভ কমনস (wikihow.com)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: