কোঁকড়া, আঁকাবাঁকা চুলের অনেকেই হয়তো মনে মনে ভাবেন, “ইস, আমার চুলগুলো যদি একেবারেই সোজা, রেশমি কোমল হতো, তাহলে কতই না ভালো হতো। কিছুটা কোঁকড়ানো চুলের আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে, কিন্তু অতিরিক্ত কোঁকড়া চুল হলে তখন বেশ সমস্যাই মনে হয়। অনেকে ত কোঁকড়া চুলের কারণে আপনার চুলকে কাকের বাসা বলেও ক্ষ্যাপাতে পারে। তবে আজকাল কোঁকড়া চুল সোজা করা খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সরঞ্জাম থাকলে আপনি চুল সোজা করার এই কাজটি ঘরে বসেই করে নিতে পারেন। চুল সোজা করাকে হেয়ার রিবন্ডিং বলা হয়।

একজন বিউটিশিয়ান নতুন হেয়ার কাট দেয়ার পর একজন মহিলার চুল ব্লো ড্রায়ার দিয়ে শুকাচ্ছেন।
পারলারে গিয়ে চুল সোজা করার অপশন বেছে নিতে চান অনেকেই। কিন্তু জেনে রাখা ভালো পার্লারে গিয়ে চুল সোজা করলে কমপক্ষে ২০০০-৫০০০ পর্যন্ত খরচ হতে পারে। সাধারনত চুলের লম্বা ও ঘনত্বের উপর নির্ভর করে হেয়ার রিবন্ডিং এর দাম নির্ধারণ করা হয়। যদিও আপনি নিজে ঘরে বসে কয়েক বান্ধবী মিলে রিবন্ডিং করালে এর চেয়ে অনেক কম দামে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে জানতে হবে হেয়ার রিবন্ডিং করাতে ঠিক কি কি উপকরণ ও সরঞ্জাম লাগবে আর প্রক্রিয়াটি কিভাবে সম্পন্ন করতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাকঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
– রিবন্ডিং কিট। এই কিটে আপনি সব কিছুই পাবেন।
চাইলে বাজার থেকে আলাদা করে নিচের উপকরণগুলো কিনে নিতে পারেন।
– গ্লাভস
– চুলের ক্লীপ,
পদ্ধতিঃ
– প্রথমে ভালো ব্র্যান্ডের কম কেমিক্যাল যুক্ত কোন মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে পুরো চুল ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর তোয়ালে দিয়ে হালকা হাতে চুলগুলো ভালো করে মুছে নিন। ইচ্ছে করলে ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন। তবে যেসব ব্লো ড্রায়ারে ঠান্ডা বাতাস বের হয় অথবা মাঝারি আঁচের গরম বাতাস বের হয়, সেসব ব্লো-ড্রায়ার বেছে নিবেন।
– এরপর একটি মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আলতো হাতে আঁচড়ে নিন। এরপর সরু দাঁতের কোনও চিরুনি দিয়ে চুলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলাদা করে ক্লীপ দিয়ে আটকে ফেলুন।
– হাতে একটি ওয়ান টাইম গ্লাভস পরে নিন। হাত দিয়ে বা ব্রাশের সাহায্যে রিলাক্সেন্ট/সফটনার ক্রীম পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে ফেলুন। লক্ষ্য রাখুন, এই ক্রিমটি যাতে চুলের গোঁড়ার এক ইঞ্চি নিচ থেকে দেয়া হয়। একেবারেই তাড়াহুড়ো করবেন না। ধীরে ধীরে সব চুলে ক্রীম লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিন। এরপর ৩০ মিনিট তা চুলে লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর হেয়ার স্টীমার দিয়ে ১০-৩০ মিনিটের মতো পুরো চুলে স্টীম নিন। স্টিম করার সময় চুলের দৈর্ঘের উপর নির্ভর করবে।
– যদি আপনার কাছে হেয়ার স্টীমার না থাকে তাহলেও চিন্তা করার কিছু নেই। চুলোতে একটি বড় পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিন। গরম পানির পাত্রে একটি তোয়ালে ডুবিয়ে সেটি ভালো করে চিপে পানি ঝরিয়ে ফেলুন। এরপর তোয়ালেটি মাথায় পেচিয়ে নিন। চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী স্টিম করবেন চুলগুলোকে।
– চুলে স্টিম দেয়া শেষ হলে রিলাক্সেন্ট/সফটনার ক্রীমটি পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু ব্যবহার করতে যাবেন না, শুধুমাত্র পানি ব্যবহার করুন। চুল খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।
–
চুল শুকিয়ে নিয়ে চুলে কেরাটিন লোশন ব্যবহার করুন। পুরো চুলে কেরাটিন লোশন ভালো করে লাগান। এই লোশন ধুয়ে ফেলবেন না। চুলে রেখে দিন।
– একটি ফ্ল্যাট আয়রন মেশিন গরম করে এবার চুল স্ট্রেইট করতে থাকুন। যতোক্ষণ না পর্যন্ত চুল পুরোপুরি স্ট্রেইট হচ্ছে ততোক্ষণ চুল স্ট্রেইট করতে থাকুন।
– সব চুল স্ট্রেইট করা হেয়ে গেলে চুলকে আগের মতো কয়েক ভাগে ভাগ করে নিন। প্রতি ভাগে আলাদা করে ভালো করে নিউট্রালাইজার লাগান। নিউট্রালাইজার পুরো চুলে লাগানো হয়ে গেলে ৩০ মিনিট চুলে রেখে দিন।
– ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে চুল ভালো করে ধুয়ে নিন। আবার ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।
– চুল শুকোনো হয়ে গেলে আরেকবার ফ্ল্যাট আয়রনটি গরম করে নিয়ে তা দিয়ে চুল স্ট্রেইট করে নিন ভালো করে। ব্যস, আপনার হেয়ার রিবন্ডিং করা হয়ে গেল।
সতর্কতাঃ
– যে ব্র্যান্ডের রিবন্ডিং কিট ব্যবহার করছেন তার ব্যবহার বিধি ভালো করে পড়ে নিন এবং বিধি অনুযায়ী করুন।
– চুল রিবন্ডিংএর ৪ দিন পরে চুল শ্যাম্পু ও পানি দেবেন। তার আগে নয়।
– চুলে কোনো ধরণের ক্লিপ এবং ব্যান্ড ব্যবহার করবেন না ও চুল বাঁধবেন না ৪/৫ দিন। এতে চুল বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
– ভালো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।