ভিটামিন ডি হচ্ছে এমন একটি ভিটামিন যা মানুষের শরীরে নিজে থেকে উৎপন্ন হয় না। ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, রোদে শুকানো খাবার ইত্যাদি। ভিটামিন ডি এর অভাবে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া ও হাড় ক্ষয়, বামনত্ব, রোগের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া, অবসাদ ও ক্লান্তি, হাড় ব্যথা ও কোমড় ব্যথা, হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া, বিষন্নতা, সহজে রক্ত জমাট না বাধা, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়া, নখ ও দাঁতের সংক্রমণ, দাঁতের গোড়া ও মাড়ি দুর্বল হয়ে যাওয়া।

নিচে এসব সমস্যা গুলো একটি একটি করে আলোচনা করা হলোঃ
১। হাড় ক্ষয় ও হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়াঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় ক্ষয় এবং সহজেই হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। সাধারনত শৈশব ও বার্ধক্যে ভিটামিন ডি এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ এই ভিটামিন ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে। নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম শ্বসনে মানুষের শরীর ব্যর্থ হলে হাড় ক্ষয় ও সহজে হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার সমস্যা দেখা যেতে পারে। এ কারণে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি খাবারে যাতে ভিটামিন ডি এর যোগান থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে।
২। বামনত্ব বা খাটো হওয়াঃ শৈশবে ও বয়সন্ধিকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি না পেলে বামনত্ব ও খর্বাকৃতি দেখা যায়। ভিটামিন ডি গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করে তাই শৈশব ও বয়সন্ধিকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি শরীর যাতে গ্রহন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সকালের রোদে কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করা, বিকেলে খেলাধুলা করা ডিমের কুসুম, কলিজা, ছোট মাছ ও সামুদ্রিক মাছ, শুটকি, রোদে বানানো আমসত্ত্ব ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত।
৩। রোগের সংক্রমন বেড়ে যাওয়াঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে ঘন ঘন সর্দিকাশি, চর্মরোগ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পরিমিত ভিটামিন ডি গ্রহন করলে এসব সমস্যা থেকে অনেকাংশেই বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
৪। অবসাদ ও ক্লান্তিঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে অলসতা, অবসাদ ও ক্লান্তি দেখা দেয়। এছাড়াও কোন কাজ মন দিয়ে করার ধৈর্য থাকে না। একটু কাজ করলেই হাঁপিয়ে ওঠার প্রবণতা দেখা দেয়। এরফলে মানুষ কর্মবিমুখ ও উদ্যমহীন অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি মানুষের প্রফুল্লতা ও মানসিক প্রশান্তিও নিশ্চিত করে থাকে।
৫। হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়াঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম দেহে শোষিত হয় না। এর ফলে, হাড় বাঁকা হয়ে যায় ও বিকলাঙ্গতা দেখা দিতে পারে।
৬। বিষন্নতাঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে বিষন্নতা ও মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি মনকে প্রফুল্ল রাখে ও উদ্যমী জীবন-যাপন করতে সাহায্য করে।
৭। সহজে রক্ত জমাট না বাধাঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ কমে যায় যার ফলে সহজে রক্ত জমাট বাঁধে না। আর এ কারণেই ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।
৮। চুল পড়ে যাওয়াঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে ক্যালসিয়াম শোষিত না হওয়ায় চুলের পুষ্টি সাধন ব্যাহত হয় এবং চুল পড়ে যায়। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে মাথার ত্বকে নানা ধরনের ছত্রাক ও ফাঙ্গাস বাধা বাসা বাঁধতে পারে। এটাও চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৯। মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়াঃ হাড় মজবুত করার পাশাপাশি ভিটামিন ডি মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এর অভাবে মাংসপেশিতে ব্যথা ও খিচুনি দেখা দিতে পারে। তাই, ক্যালসিয়াম ও আয়োডিন এর পাশাপাশি ভিটামিন ডি প্রয়োজন অনুযায়ী খাবারের সাথে গ্রহণ করা উচিত।
১০। নখ ও দাঁতের সংক্রমণঃ যেহেতু ক্যালসিয়াম নখ এবং দাঁতের ক্ষয় পূরণ বৃদ্ধিসাধন অন্যতম ভূমিকা পালন করে। তাই ভিটামিন ডি এর অভাবে নখ এবং দাঁতের বৃদ্ধি ও সুরক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এর ফলে দাঁতের মাড়ি দুর্বল হয়ে যায় এবং নখ ভেঙ্গে যায়।
এই হচ্ছে ভিটামিন ডি এর অভাবে হওয়া স্বাভাবিক কিছু সমস্যা। এছাড়াও খাবার হজম হতে সমস্যা হওয়া ও অন্যান্য বহুবিধ সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই শিশু থেকে শুরু করে প্রত্যেকের খাবারেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি যাতে থাকে তা নিশ্চিত করা উচিৎ।
এজন্য ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে নিচে আমরা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা দিচ্ছি। এখান থেকে আপনি আপনার সাধ্যমত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারেন।
- কলিজা
- গরু, খাসি ও মহিষের গোশত।
- সামুদ্রিক মাছ ও ছোট মাছ
- ডিম
- পনির
- মিষ্টি আলু।
- আখরোট, বাদাম ও কিশমিশ।
- ব্রকলি
- ক্যাপ্সিকাম
- আম
- গাজর
- শুটকি
- আমসত্ত
- পাকা পেঁপে
- তরমুজ ও বাঙ্গি
- সকাল ও বিকালের নরম রোদ।