প্রত্যেক মুসলমানের জন্য নামায পড়া অবশ্য কর্তব্য বা ফরযে আইন। নামায ছেড়ে দিলে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আবার ওজু ছাড়া নামায হয় না। ওযুর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা। আজ আমরা জানবো, কি করে পরিপূর্ণ ও সুষ্ঠভাবে অজু করতে হয়। কারণ, ওজু সুন্দর হলে নামাযও পরিপূর্ণ হবে। তাই, চলুন আজকে ওজুর ফরজ, সুন্নত ও মুস্তাহাব সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেই।
ওযুর বর্ণনা:
ওযু করার সময় কেবলামুখী হয়ে কোন উঁচু স্থানে বসতে হবে। যাতে ওযুর পানি কাপড় অথবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে না আসে। ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করতে হবে। এরপর সর্বপ্রথম তিনবার কব্জি পর্যন্ত হাত ধৌত করতে হবে। তারপর তিনবার কুলি করতে হবে। এরপর মেসওয়াক করতে হবে। যদি মেসওয়াক না থাকে তাহলে মোটা কাপড় অথবা শুধু আঙ্গুল দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে নিলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। এমন ভাবে পরিষ্কার করতে হবে যাতে দাঁতের গোড়া ও মুখের সমস্ত ময়লা দূর হয়ে যায়।
রোজাদার না হলে গড়গড়া করে সমস্ত মুখমন্ডলে পানি পৌঁছাতে হবে। যদি রোজাদার হয় তবে গড়গড়া করা যাবে না। কেননা, এর ফলে গলায় পানি পৌঁছে গেল রোজা ভেঙ্গে যাবে। তারপর তিনবার নাকে পানি দিতে হবে এবং বাম হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে। রোজাদার ব্যক্তির নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানোর দরকার নেই। অতঃপর তিনবার মুখ ধৌত করবে।
সকল স্থানে পানি পৌঁছানো
মাথার চুলের গোড়া থেকে শুরু করে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে আরেক কানের লতি পর্যন্ত সব স্থানে পানি পৌঁছাবে, যেনো কোন স্থান শুকনা না থাকে। অতঃপর ডান হাত তিনবার কনুইসহ ধৌত করবে এবং তারপর বাম হাত।
একহাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলের ভিতর ঢুকিয়ে খেলাল করবে এবং আংটি চুরি ইত্যাদি যা কিছু হাতে আছে তা নেড়েচেড়ে ভালোভাবে ধৌত করা যাতে কোন স্থান শুকনো না থাকে।
অতঃপর সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করবে, এবং তারপর কান মাসেহ করবে। কানের ভিতর শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা এবং উপরের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মাসেহ করবে। তারপর আঙুল এর পিঠের দিক দ্বারা ঘাড় মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না, কারণ তা নিষিদ্ধ।
কান মাসেহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়া আবশ্যক নয়, মাথা মাসেহ করার পর হাতে যে পানি থাকে তাই যথেষ্ট। এরপর ডান পা তিনবার টাখনুসহ ধৌত করবে অতঃপর বাম পা তিনবার টাখনুসহ ধৌত করবে। বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলগুলো খেলাল করবে।
পায়ের ডান কনিষ্ঠাঙ্গুল থেকে শুরু করে বাম কনিষ্ঠাঙ্গুল পর্যন্ত গিয়ে শেষ করবে। এই হচ্ছে ওযু করার পদ্ধতি। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো কোন একটিও যদি ছুটে যায় অথবা কোনও কমতি থাকে তাহলে ওযু হবে না। প্রথমে যেমন অজু বিহীন ছিল তেমনি অজু বিহীন থাকবে। এমন বিষয় গুলোকে ওযুর ফরজ বলা হয়।
আবার কিছু কিছু বিষয় আছে, যেগুলো ছুটে গেলে ওযু হয়ে যাবে তবে তা করলে সওয়াব হয় এবং শরীয়তে করার ব্যাপারেও তাগিদ আছে। যদি কোনো ব্যক্তি এগুলোর অধিকাংশ বিষয় ছেড়ে দেয় তবে গুনাহ হবে। এমন বিষয়গুলোকে সুন্নত বলা হয়। আরো কিছু বিষয় আছে, যেগুলো করলে সওয়াব হয় কিন্তু না করলে গুনাহ হয় না এবং শরীয়তে এগুলো করার ব্যাপারে তাগিদ করা হয়নি। এমন বিষয় গুলোকে মুস্তাহাব বলে।
অজুর ফরজ চারটি –
১। সমস্ত চেহারা একবার মাসেহ করা।
২। একবার একবার করে কনুইসহ উভয় হাত ধৌত করা।
৩। মাথার এক চতুর্থাংশ ১ বার মাসেহ করা।
৪। টাখনুসহ দুই পা একবার ধৌত করা।
এগুলো হচ্ছে ওযুর ফরজ। এগুলো থেকে যেকোনো একটি ছুটে গেলে অথবা এই স্থান গুলোর পশম পরিমাণ জায়গা শুকনা থাকলে ওযু হবে না।
ওজুর সুন্নত আটটি –
ওযুর বেশ কিছু সুন্নত রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে শরীয়তে তাগিদ এসেছে ও করলে সওয়াব হবে। এবং অধিকাংশ ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে। এমন বিষয়গুলোকে সুন্নাত বলা হয়।
১। প্রথমে কব্জি সহ দুই হাত ধৌত করা।
২। বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা।
৩। নাকে পানি দেয়া।
৪। মেসওয়াক করা।
৫। সমস্ত মাথা মাসেহ করা।
৬। প্রত্যেক অঙ্গ ৩ বার মাসেহ করা।
৭। কান মাসেহ করা
৮। হাত ও পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা।
এই সবগুলো বিষয় হচ্ছে ওযুর সুন্নত।
এছাড়া বাকি যা আছে সেগুলো মুস্তাহাব, যা করলে সওয়াব হবে এবং না করলে কোন গুনাহ হবে না।
ওজুর শেষে করনীয় আমল
ওযুর শেষে সূরাহ কদর পড়বে এবং নিন্মোক্ত দোয়া পাঠ করবে:
??اللهم اجعلني من التوابين واجعلني من المتطهرين واجعلني من عبادك الصالحين و اجعلني من الذين لاخوف عليهم ولا هم يحزنون??
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আপনার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আর ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন, কেয়ামতের দিন যাদের কোনও ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
ওযু শেষ করে দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। অজুর শেষের এই দুই রাকাত নামাজকে তাহিয়্যাতুল অজু বলা হয়। হাদীস শরীফে এই নামাজের অনেক সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে।