তেঁতুল (Tamarind) খেলে ক্ষতি হয় বা রক্ত পানি হয়ে যায়, এমন একটি ধারণা বহুদিন ধরে প্রচলিত আছে। কিন্তু তেঁতুলের গুনাগুন দেখতে গিয়ে তেমন কিছুই পাওয়া যায় নি। বরং তেতুল রক্তের কোলেস্টেরল দূর করে রক্তকে বিশুদ্ধ করে। এমনি বেশ কিছু গুনাগুনের কথা আমরা এবার নিচের আলোচনা থেকে জানবো। চলুন, জেনে নেয়া যাক, তেঁতুলের নানান উপকারিতা যা আপনাকে ভালো রাখতে সহায়তা করবেঃ

১। তেতুল রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আমাদের হার্ট বা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
২। তেতুলে আছে উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম (Potassium) যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে উপকারী।
৩। পেটে ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) থেকে মুক্তি পেতে আপনি তেঁতুলের সাহায্য নিতে পারেন। কারণ এতে থাকা টাইটোরিয়াম ও ম্যালিক এসিড কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
৪। তেঁতুলের প্রলেপ অতি বেগুনী রশ্মির ক্ষতি থেকে মানুষের ত্বককে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
৫। তেঁতুলের বীজ রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে।
৬। তেঁতুলে আছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট (Antioxidant) যা কিডনি বিকল হওয়া ও কিডনির ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৭। তেঁতুলে উচ্চ মাত্রার ফাইবার থাকার ফলে এবং ফ্যাট ফ্রি হওয়ায় এটা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
৮। তেঁতুল গাছের পাতা ও ছালে অ্যাণ্টি অক্সিডেন্ট থাকায় এটা আপনার ক্ষত ও ঘা সারাতে সাহায্য করবে।
৯। যকৃত বা লিভার পরিষ্কার করতে তেঁতুল বেশ উপকারী।
১০। তেঁতুল এলার্জি বা চুলকানি প্রতিরোধ করে এবং তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি সর্দি ও কাশি দূর করতে সাহায্য করে।
১১। হৃদরোগে তেঁতুল বেশ উপকারী।
১২। অন্যান্য ফলের তুলনায় এতে ভেজষ ও পুষ্টি গুণের পরিমাণ বেশী।
১৩। তেঁতুল দেহের অতিরিক্ত মেদ দূর করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
১৪। তেঁতুলে আছে টারটারিক এসিড যা খাবার হজম করতে সহায়ক।
১৫। তেঁতুলে বেশ কিছু ভালো কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্রাইসেরাইড থাকার ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে বেশ উপকারী।
১৬। পেট ফাঁপা এবং হাত-পা জ্বালাপোড়ায় তেঁতুলের শরবত বেশ উপকারী।
১৭। পেটের যেকোনো সমস্যায় এক কাপ তেঁতুলের রসের সঙ্গে চিনি অথবা লবণ মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ভেজষ চিকিৎসকগণ।
১৮। তেঁতুল গাছের বাকল বেটে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিলে দ্রুত ক্ষত সারে।
১৯। মাথা ঘোরানো, বুক ধড়ফড় করা ও রক্তচাপের প্রকোপে তেঁতুল বেশ উপকারী।
২০। কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাতের ফলে ব্যথাযুক্ত স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা দূর হয়।
২১। আমাশয়, পেট গরম ও কোষ্ঠকাঠিন্যে পুরনো তেঁতুল বেশ উপকারী।
২২। দীর্ঘদিনের কাশি সারাতে পুরনো তেঁতুল বেশ উপকারী।
২৩। পাকা তেঁতুলে খনিজ পদার্থের পরিমাণ অন্য সব ফলের তুলনায় বেশি।
২৪। নারিকেল ও খেজুর ছাড়া তেঁতুলে খাদ্যশক্তির পরিমাণ অন্য সব ফলের তুলনায় বেশি।
২৫। বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরি করতে তেঁতুল ব্যবহার করা হয়।
২৬। কৃমি ও চোখ উঠা রোগে তেঁতুল পাতার রস বেশ উপকারী।
২৭। মুখের ঘা ও ক্ষত উপশম করতে তেঁতুলের রসের পানিতে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।
তেতুঁলে থাকা উপাদান সমূহ:
তেঁতুলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য সব ফলের তুলনায় ৫ থেকে ১৭ গুণ বেশি। আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া অন্য সব ফলের তুলনায় ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি। এছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান স্বাভাবিক মাত্রায় বিদ্যমান আছে। ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে খাদ্যশক্তি ২৮৩ কিলো ক্যালোরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩ গ্রাম। তাই পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধে তেঁতুল খেতে পারেন আপনিও।