Skip to content

আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান কিভাবে আনা উচিত

আমরা যারা মুসলমান তারা সবাই আল্লাহকে বিশ্বাস করি। তিনি আছেন, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়ার মাধ্যমেই ঈমানের দাবী পূরণ হয়ে যায় না। কারণ যারা মুশরিক, তাঁরাও আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। একজন সর্বময় অধিপতি আছেন ও তিনি আমাদেরকে প্রতিপালন করেন তা যে কেউই বিশ্বাস করতে পারে। আর বিশ্বাস করাটাই সংগত। কারণ এই বিশ্বজগত ও আল্লাহর বিভিন্ন নিদর্শনগুলো এম্নি এম্নিই সৃষ্টি হয়ে যায় নি। সারা পৃথিবীর যত মানুষ আছে সবাই মিলে যদি চেষ্টা করে তবে পারবে না একটা গাছ সৃষ্টি করতে, পারবে না কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া এক ফোঁটা পানি তৈরি করে দেখাতে।

তাহলে বলুন, এই আসমান, জমিন, পাহাড় ও পর্বত। অগুনিত সৃষ্টিরাজি, মানুষ, পত্রপল্লব এগুলো কি এমনি এম্নিই সৃষ্টি হয়ে গেছে। না, তা এম্নিতেই সৃষ্টি হয় নি। এগুলোর একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। যিনি মহা মহা ক্ষমতাধর। প্রত্যেক সৃষ্টির উপরেই তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা আছে। আল্লাহ কি কারো উপর নির্ভরশীল। সত্য কথা এই যে, তিনি কারও উপর নির্ভরশীল নয়, বরং তাবৎ সৃষ্টিজগত তাঁর উপর নির্ভরশীল। তাঁর হুকুম ছাড়া কারও শরীরের পশমও বাঁকা হয় না, একটা গাছের পাতাও নড়ে না।

আল্লাহর উপর ঈমান আনা, আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা ছাড়াও আরও দুটি জিনিষ বুঝিয়ে থাকে। সে দুটি হচ্ছে-

১। আল্লাহ তায়ালার সিফাত বা গুনাবলীসমূহ স্বীকার করে নেয়া।

২। তাওহীদ বা একত্ববাদের উপর বিশ্বাস করা।

১। আল্লাহ তায়ালার সিফাত হচ্ছে তাঁর ৯৯ টি গুনের সমষ্টি। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালার আরও অনেক গুন রয়েছে। শুধু এটুকুই বলতে চাই যে, আল্লাহকে তাঁর কোনও সৃষ্টি দ্বারা বিচার করবেন না। আল্লাহ যেমন, তাঁর গুনসমূহ তেমন। আল্লাহ যেমন আমাদের জ্ঞান ও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অনুভবের বাহিরে, ঠিক তেমনি তাঁর সিফাত বা গুনসমূহও আমাদের ধরাছোঁয়া বা আন্দাজের বাহিরে। আল্লাহর গুনসমূহ তাঁর মতই মহান ও মহিমাময়। তাই আমাদের এই কথা অকাট্যভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, তাঁর গুনসমূহ আমাদের গুণের মত নয়। এবং আমাদের গুনসমূহ তাঁর গুনাবলীর ধারে কাছেও নেই।

আল্লাহ তায়ালা নিজে তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,  ليس كمثله شيىٔ অর্থাৎ, “কোন বস্তুই তাঁর তুল্য নয়”। তাই তিনি যে কেমন, তা ধারণা করাও আমাদের শক্তির বাহিরে।

আল্লাহর পরিচয় পাওয়ার পর মানুষের দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে তাঁর ইবাদত করা। আর মানুষকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের কেউ কি আল্লাহর ইবাদত করে না। তাহলে, কেন আল্লাহ তায়ালা নতুন করে একটা সৃষ্টি করলেন, যা শুধু তাঁর ইবাদাত করবে। ঠিক এই প্রশ্নটাই ফেরেশতারা আল্লাহকে করেছিলো, যখন তিনি আদম (আ) কে সৃষ্টির করার কথা তাদের কাছে বলেছিলেন। কারণ, ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে সর্বদা অগ্রগামী ছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, হে আল্লাহ আমরাই তো আপনার ইবাদত বন্দেগী করছি, তাই আপনি কেন এমন একটি সৃষ্টি করবেন যে কিনা দুনিয়াতে ফিত্না-ফাসাদের সৃষ্টি করবে। রক্তপাত করবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রশ্নের উত্তরে তখন এটুকুই বলেছিলেন যে, আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।

ফেরেশতারা আল্লাহর হুকুম সরাসরি পালন করে থাকেন। তাদের মধ্যে আল্লাহর হুকুমের বিরোধিতা করার শক্তিটুকু পর্যন্ত রাখা হয় নি। তাই তারা যে আল্লাহর ইবাদাত করে, এটাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু মানুষ, সম্পূর্ণ না দেখে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করে। আর এটাই মানুষের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ তায়ালা সূরা মুলকের দ্বিতীয় আয়াতে বলেছেন, আল্লাযি খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়াতা লিয়াব্লুয়াকুম আইয়ুকুম আহসানু আমালা “আমি মৃত্যু এবং জীবনকে সৃষ্টি করেছি। যাতে দেখতে পারি, তোমাদের মধ্যে কে সর্বাধিক ভাল ও সুন্দর আমল নিয়ে আসতে পারে।

শুধু তাই নয়, মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য নিযুক্ত আছে শয়তান, তাই শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আদেশ নিষেধের প্রতি লক্ষ্য রাখাই একমাত্র উপায়। দুনিয়ার জীবন খুব সংক্ষিপ্ত। তাই মানুষ যদি আল্লাহ কেমন, কি করে তিনি এই মহাবিশ্ব চালান, এসব নিয়ে ভাবতে বসে, তাহলে সে ত এর কোনও কিনারা করতে পারবেই না, বরং তাঁর অনেক সময় নষ্ট হবে। তাই তিনি মানুষের জন্য অপ্রয়োজনীয় এসব কথা বলেননি। বরং যাতে তাদের লাভ হবে, তাঁরা যাতে দুনিয়ার পরীক্ষায় উতরে যেতে পারে, সেই পথ বলে দিয়েছেন। কুরআনে বর্ণিত আছে,

অর্থাৎ, দয়াময় আরশের উপর সমাসীন হলেন। এখন শয়তান আমাদের মনে এই চিন্তার উদয় করে দিলো, যে আল্লাহ কেমন করে আরশের উপর বসলেন। কিন্তু এই অবস্থায় তাকে এই জবাব দিয়ে দিতে হবে যে, আল্লাহ যেমন আমাদের, বুদ্ধির অনেক উপরে, ঠিক তেমনি তিনি কিভাবে বসলেন, তাও আমাদের বুদ্ধিতে কুলাবে না। আমরা বরং তাঁর সৃষ্টি নিয়ে কল্পনা করি। এই যে আমরা পৃথিবী দেখতে পাই, এটা গোলাকার। আর ঐ যে আসমান দেখা যায় সেটাও গোলাকার। প্রথম আসমান হতে দ্বিতীয় আসমান হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত।  তাহলে পৃথিবীর পরিধি অনুযায়ী প্রথম আসমান কত বড় হবে, তা কি অনুমান করা যায়? না যায় না। অঙ্ক করেও বের করা সম্ভব না। কারন, পৃথিবী কত বর্গক্ষেত্র তা আমরা জানি না। আমরা এও জানি না যে, প্রথম আসমান পৃথিবীর ঠিক কত দূরে অবস্থিত। এবং এর পরিধিই বা কতটুকু। আর এই ভাবে একটির উপর আরেকটি বেষ্টন করে সাতটি আসমান আছে। অতএব সপ্তম আসমান যে কত বড়, তা আল্লাহই ভাল জানেন।

আবার সপ্তম আসমানকে বেষ্টন করে আছে আল্লাহর আরশ বা কুরসী। আর সেখানেই তিনি আছেন। অতএব, তিনি এত লক্ষ কোটি কোটি গুন দূরে থেকেও প্রত্যেকটা প্রানী ও সৃষ্টবস্তুর শিড়ায়-উপশিরায় কি চলছে সে সম্পর্কে জানেন। শুধু তাই নয়। মানব দেহকে যদি হার্ডওয়্যার হিসেবে তুলনা করা হয়। তবে তাঁর মন হবে সফটওয়্যারের মত। আল্লাহ তায়ালা মানুষের মনের গভীরে কী জল্পনা-কল্পনা চলছে, সেগুলো সম্পর্কেও জানেন।

আর মানুষের কর্তব্য হচ্ছে, সমস্ত দিক থেকে, সমস্ত সৃষ্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে মহা প্রতাপশালী আল্লাহ তায়ালার আরাধনা করা, তাঁর সাম্নেই মাথা নত করা। কোন দেবতা, কোন প্রতিমা, কোন মানুষ বা কোন পীর বা বুজুর্গের উপাসনা না করা। বরং যে কোন সমস্যায়, যেকোনো বিপদে একমাত্র তাঁর সামনেই মাথানত হওয়া দরকার। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাঁর মাথা কেবলমাত্র আল্লাহর সামনেই নত হতে পারে। আর কারও সামনে নয়।

২। তাওহীদ বা একত্ববাদের সারমর্মঃ তাওহীদ বা একত্ববাদই হচ্ছে ইসলাম ধর্মের মূলমন্ত্র। একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপাসনা ও আরাধনা ছাড়া অন্য সব দেব-দেবী, মানুষ সৃষ্টজীবের পূজা-অর্চনা ও আরাধনা পরিত্যাগ করার নামই হচ্ছে তাওহীদ।

অর্থাৎ, নানান খোদা (অর্থাৎ, বহুসংখ্যক দেব-দেবীর পূজা করা) ভাল নাকি এক আল্লাহর উপাসনা করা ভাল?- যিনি সর্ব শক্তিমান ও অতি পরাক্রমশালী। তা ছাড়া, এ ব্যাপারে সবাই ত একমত হবে যে, আল্লাহর আদেশেই সবকিছু হয়ে থাকে। এবং তিনি ব্যতীত আর কারও আদেশ বা হুকুম কার্যকর হয় না। অর্থাৎ, কোন বিধান সাব্যস্ত করার বা ধার্য করার অধিকার তিনি ছাড়া আর কারোও এখতিয়ারে নাই। কিন্তু তোমরা যাদের পূজা করছো, আল্লাহ তায়ালা তাদের পূজা করতে আদেশ করেন নাই এবং সাব্যস্তও করে দেন নাই। কেবল তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষেরা কিছু নাম ধার্য করে নিয়েছো মাত্র। অতএব, তাঁরা যে পূজা পেতে পারে, এর কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমান তোমাদের হাতে নেই, এমনকি অনেকের ত শুধুমাত্র নামই আছে, অস্তিত্বই নেই।

কুরআনে আরও বর্ণিত আছে, “আল্লাহর আদেশ এই যে, এক আল্লাহ ব্যতীত পূজা করা যাবে না, এটাই আসল খাঁটি ধর্ম; কিন্তু অধিকাংশ লোক তা বুঝে না।”

একক ক্ষমতার অধীকারী ও মালিক মূলত আল্লাহ তায়ালাই। তিনি অনাদিকাল ছিলেন এবং অনন্তকাল ধরে থাকবেন। তার কোনও শুরুও নেই, শেষও নেই। তিনিই বরং শুরু এবং শেষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাস এমন প্রগাঢ়ভাবেই থাকতে হবে। এটাই ঈমানের দাবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: