Skip to content

যেসব কারনে ঘ্রাণ শক্তি আংশিক বা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়

ঘ্রাণ শক্তি আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অন্যতম একটি ইন্দ্রিয়। তাজা ফুলের সুবাস, বৃষ্টি হলে মাটির সোঁদা গন্ধ, ফল কাটার পর মিষ্টি সৌরভ, ঝাঁঝালো পেঁয়াজ, রসুন, আদা কিংবা অন্যান্য মসলার ঘ্রাণ নিশ্চয়ই অনুভব করেছেন। ঘ্রাণ শক্তি না থাকলে কি আদৌ এগুলো বুঝতে পারতেন?

নিশ্চয়ই নয়। ঘ্রাণ শক্তি যে কতটা উপকারী এক নিয়ামত, তা একমাত্র ঠান্ডা লাগলেই বোঝা যায়। আপনি জানেন কি, আপনার তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ শক্তি অনেক কারনেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এগুলোর কোন কোনটি স্থায়ী আবার কোনটি কোনটি সাময়িক। যেসব কারণে ঘ্রাণ শক্তি লোপ পায়, সেগুলো নিয়েই আজকের রচনা।

তাহলে চলুন জেনে নিই ঘ্রাণ শক্তি লোপ পাওয়ার কারণগুলো:

১. নাক বন্ধ হয়ে থাকা: ঠান্ডা লাগলে অনেকেরই নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক বন্ধ হয়ে গেলে ঘ্রাণের অনুভুতি মস্তিস্কে পৌঁছানোর রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থাকে সাইনাস কনজেশন বলে। আর এই সমস্যা যখন স্থায়ী হয়ে উঠে তখন তাকে সাইনোসাইটিস বলে। সাইনোসাইটিসের ফলে মানুষের মুখের ফাঁকা অংশে ঘা অথবা প্রদাহ দেখা দেয়, অনেক সময় মস্তিষ্কের ফাঁকা স্থানগুলোতে কফ বা অন্যান্য গ্রন্থি নিঃসৃত তরল স্থায়ীভাবে জমে যায়। ফলে মাথা ভারী লাগে ও মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে। ঠান্ডা লাগার কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে ঠান্ডা সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বা নাকের বন্ধ ছিদ্র না খোলা পর্যন্ত আপনি কোনও কিছুরই ঘ্রাণ পাবেন না।

২. ধূমপান: ধূমপান করলে তামাকের কড়া গন্ধের কারণে ঘ্রান শক্তি অনেকটাই কমে যেতে পারে। এছাড়া ধূমপানের কারণে নাকের সুক্ষ্ম স্নায়ুতে ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে তার কার্যকারিতা অনেকাংশে লোপ পায়। ফলে আপনি কোনও কিছুর ঘ্রাণ খুব অল্প বা একেবারেই না পেতে পারেন।

৩. বিষাক্ত ক্যামিকেল: বিষাক্ত কিছু ক্যামিক্যাল বা কিটনাশক কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়াই যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে ঘ্রাণ অনুভূতি নষ্ট হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অ্যামোনিয়া, মিথাক্রাইলেট ভ্যাপারস, বেনজিন, ক্যাডমিয়াম ডাস্ট, ক্রোমেট, ফরমালডিহাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, নিকেল ডাস্ট এবং সালফিউরিক অ্যাসিড। এগুলো নিয়ে কাজ করার সময় অবশ্যই মাস্ক বা যথেষ্ট পরিমাণে সুরক্ষা সরঞ্জাম পড়ে নিবেন। নতুবা এগুলোর ঝাঁঝালো গন্ধে নাকের স্নায়ু ঝলসে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

৪. ঔষধ: কিছু কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে ঘ্রাণ অনুভূতি সাময়িকভাবে চলে যেতে পারে। যেমন, বেশ কিছু এন্টিবায়োটিক ও এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহারের ফলে ঘ্রাণ অনুভূতি চলে যেতে পারে। তাই কোনও ঔষধ ব্যবহারের আগে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে দেখে নিন। যদি ইনসোমিয়া বা ঘ্রাণ শক্তি লোপ পাওয়ার বিষয় লেখা থাকে, তার পরিবর্তে ডাক্তারকে অন্য ঔষধ দিতে বলুন।

৫. মাথায় আঘাত বা মষ্তিস্কের রোগ: মাথায় গুরুতর আঘাত বা মস্তিস্কে টিউমার হলে ঘ্রাণ শক্তি চলে যেতে পারে। মাথার সামনের অংশ থেকে পেছনের অংশে আঘাত পেলে সমস্যা বেশি হয়। এছাড়া ব্রেইন টিউমার, মস্তিষ্কের ক্যান্সারেও অনেক সময় ঘ্রাণ শক্তি স্থায়ীভাবে লোপ পেতে পারে।

৬. আলঝেইমার রোগ: আলঝেইমার হচ্ছে মস্তিষ্কের ক্ষয় রোগ। এ রোগের কারণে মানুষের স্মৃতিবিভ্রম দেখা দেয়। আগের কোনও কিছুই মনে রাখতে পারে না, বা একটু আগে করা একটি কাজও কিছুক্ষণ পর ভুলে যায়। এমন রোগের মূল কারণ বয়স বা বংশগত। সাধারণত ৬০ বা ৭০ বছরের পর এই রোগ দেখা দেয়। তবে এর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ঘ্রাণ শক্তি কমে যেতে পারে।

৭. পারকিনসন রোগ: পারকিনসন রোগ হচ্ছে স্নায়বিক রোগ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ ৬০ বছর বা তার বেশী বয়সী মানুষের হয়ে থাকে। বংশগত হলে এর চেয়েও অনেক কম বয়সে এ রোগ দেখা দিতে পারে। মৃদু পারকিন্সনে কোনও জিনিস ধরে রাখা অবস্থায় হাত বা পা এমনি এমনি কাপতে থাকে। কিন্তু জটিল সমস্যা হলে অঙ্গ নড়াচড়া করতেও সমস্যা হয়। এ রোগের কারণে মানুষের নিজের পেশী অথবা কোনও কোনও অঙ্গের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এর ফলে পেশি শক্ত হয়ে হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দেয়। আবার অনেক সময় আংশিক প্যারালাইসিস হতে পারে। এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে অনেক সময় ঘ্রাণশক্তি কমে যায়। যা রোগ নির্ণয়ের সময় প্রায়ই উপেক্ষিত হয়ে থাকে।

৮. বার্ধক্য: বার্ধক্যের ফলে দৃষ্টি, শ্রবণ ও অন্যান্য ইন্দ্রিয় শক্তির মত ঘ্রাণ শক্তিও কমে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আশির উপরের প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষের ঘ্রাণ শক্তি থাকে না। অন্য এক গবেষনায় দেখা গেছে, ৮০ থেকে ৯৭ বছর বয়সী প্রায় ৬৫ ভাগ মানুষের ঘ্রাণ শক্তি ঠিক থাকে না।

রোগ বা অন্য যেকোনো কারণে ঘ্রাণ শক্তি নষ্ট হয়ে গেলে তা ফিরিয়ে আনতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে নিচের কাজগুলো করলে উপকার পাবেনঃ

১। ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার খান। ডিমের কুসুম, দই, ঢেঁকি ছাঁটা চাউল, ডাল, সূর্যমুখী বীজ বেশী পরিমাণে খান।

২। অরুচিকর খাবার এড়িয়ে চলুন। যে খাবারে রুচি না হয় তা খাবেন না।

৩। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়ামের ফলে অন্যান্য অংগ প্রত্যঙ্গের সাথে দেহের ভিতরের অঙ্গগুলোও সচল হয়ে উঠে।

৪। ঘ্রাণ শক্তির দিকে মনোযোগী হোন। নতুন কোনও খাবার বা নতুন কোনও বস্তুর ঘ্রাণ নিতে চেষ্টা করুন।

৫। নাক বন্ধ হয়ে গেলে তা সচল করতে চেষ্টা করুন। এজন্য এক অথবা দুই ফোঁটা সরিষার তেল নাকের ছিদ্রে দিতে পারেন। কোনও এক নাক বন্ধ হয়ে গেলে অপর নাক চেপে ধরে শ্বাস নিন। কয়েকবার নিয়মিত করলে বন্ধ নাকের পাশাপাশি ঘ্রান ইন্দ্রিয়ের নালীও খুলে যাবে।

৬। ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অনেক দিন ধরে ও কোনও দৃশ্যমান কারণ যেমন, এলার্জি বা সর্দি ছাড়াই যদি ঘ্রাণ শক্তি নষ্ট হয়ে থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নাকের কনজেশন খোলার জন্য কোনও ড্রপস ব্যবহার করবেন না।

নাক বন্ধ হওয়া বা ঘ্রাণ না পাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা বলে পরিচিত হলেও কিছু কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবেও এই সমস্যা দেখা দেয়। তাই অনেক দিন পর্যন্ত ঘ্রাণ শক্তির অসুবিধা হলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক কারণ ও প্রতিকার খুঁজে বের করুন। নতুবা এই ছোট ছোট সমস্যাগুলোই বড় কোনও রোগ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: