প্রায় প্রতিদিনই আমরা গোসল করে থাকি। এর মধ্যে কিছু গোসল ফরজ, কিছু ওয়াজিব, কিছু সুন্নাহ আবার কিছু আছে মুস্তাহাব। আমরা আজকে এইগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ফরজ গোসল: যে গোসল না করলে মানুষ নাপাকী থেকে অন্য কোনো উপায়ে পাক হতে পারে না, তাকে ফরয গোসল বলা হয়। গোসল ফরয হবার বেশ কিছু কারণ আছে। তা হলো:
১/ প্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষের উত্তেজিত বা অনুত্তেজিত অবস্থাতে সামনের রাস্তা দিয়ে কোনো তরল পদার্থ নির্গত হওয়ার পর গোসল ফরয হয়।
২/ স্বামী স্ত্রী পরস্পর মেলামেশা করার পর চাই কিছু বের হোক বা না হোক, উভয়ের উপর গোসল ফরয হয়।
৩/ স্বপ্নদোষ হলে যদি প্রত্যক্ষভাবে কোনো নাপাকী শরীরে অথবা কাপড়ে লেগে থাকতে দেখা যায়, তবে গোসল ফরজ হয়।
৪/ মহিলাদের মাসের নির্দিষ্ট সময়ের রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর গোসল ফরয হয়।
৫/ সন্তান প্রসব করার পর রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর গোসল ফরয হয়।
যেসব কারণে গোসল ওয়াজিব হয়: ফরয গোসলের পাশাপাশি কিছু গোসল আছে, যেগুলো না করলে শক্ত গোনাহ হয়। এ ধরনের গোসলকে ওয়াজিব গোসল বলা হয়।
গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণসমূহ:
১/ যদি কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করে তখন জীবিতদের উপর তাঁকে গোসল দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।
২/ বিধর্মী কোনো লোক ইসলাম গ্রহণ করার পর তার উপর গোসল করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
সুন্নাহ গোসল: যে গোসল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন এবং করলে সওয়াব হয় ও না করলে গোনাহ হয় না, এমন গোসলকে সুন্নাহ গোসল বলা হয়।
সুন্নাহ গোসলগুলো হচ্ছে:
১/ জুমার নামাজের পূর্বে গোসল করা।
২/ ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করা।
৩/ হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা।
৪/ আরাফাহ্ এর ময়দানে যাওয়ার পূর্বে গোসল করা।
মুস্তাহাব গোসল: এছাড়াও বেশ কিছু গোসল আছে যেগুলো মুস্তাহাব গোসল হিসেবে পরিচিত। এগুলো হচ্ছে:
১/ সাবানের ১৫ তারিখ অর্থাৎ, শবে বরাতে গোসল করা।
২/ শবে কদরের রাতে গোসল করা।
৩/ সফর শেষে ফিরে আসার পর গোসল করা।
৪/ মদীনা মুনাওয়ারায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করা।
৫/ মক্কা মুকাররমায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করা।
৬/ মুজদালিফায় যাওয়ার পূর্বে গোসল করা।
৭/ তাওয়াফে জিয়ারতের পূর্বে গোসল করা।
৮/ মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসল করা।
৯/ নতুন কাপড় পড়ার পূর্বে গোসল করা।
১০/ অতিরিক্ত গরমের সময় গোসল করা।
গোসলের ফরয তিনটি। এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি বাদ বা অসম্পূর্ণ থেকে গেলে তার গোসল হবে না ও পুরো শরীর নাপাক থেকে যাবে। এগুলো হচ্ছে:
১/ গড়গড়ার সাথে কুলি করা (রোজাদার না হলে)।
২/ নাকের নরম জায়গায় পানি পৌঁছানো।
৩/ সমস্ত শরীরে ভালোভাবে ডলে ডলে পানি পৌঁছানো, রাতে এক ইঞ্চি জায়গাও শুকনো না থাকে।
উপরের তিনটি শর্ত পূরণ হলেই গোসল হয়ে যাবে। কিন্তু সুন্নাহ অনুযায়ী গোসল করতে হলে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
ফরয গোসলের নিয়ম: ফরয গোসল সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পানি পৌঁছতে হবে। এমনকি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে পানি পৌঁছে দিতে হবে। এমনভাবে পানি পৌঁছে দিতে হবে, যাতে পানি গড়িয়ে পরে যায়। পুরো শরীরে একটি লোমকূপ বা একটি চুলও যদি শুকনো থাকে, তবে গোসল সম্পূর্ণ হবে না।
গোসলের সুন্নাহ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিচের পদ্ধতিতে গোসল করতেন:
১/ গোসলের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে গোসল শুরু করা।
২/ পাক পবিত্র হওয়ার নিয়্যত করা।
৩/ উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।
৪/ নাপাকীর স্থান সমূহ তিনবার ধৌত করা।
৫/ এরপর বাম হাতের উপর গান হাত দিয়ে পানি গেলে ধৌত করা।
৬/ অত:পর অজু করা।
৭/ তারপর ডলে ডলে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো।
৮/ তারপর তিনবার মাথায় পানি ঢালতে হবে।
৯/ তারপর ডান কাঁধে তিনবার পানি ঢালতে হবে।
১০/ তারপর বাম কাঁধে তিনবার পানি ঢালতে হবে।
১১/ এরপর সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো।
১২/ সব শেষে গোসলের স্থান থেকে সরে পা দুটো ধৌত করা।
১৩/ গোসল শেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গা থেকে কখনও পানি ঝরিয়ে নিতেন। আবার কখনও পরিস্কার কাপড়ের সাহায্যে মুছে নিতেন। দুটোই করা যায় এবং দুটোই মুস্তাহাব।