ঈমান শব্দের অর্থ, “বিশ্বাস”। শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালা এবং তার প্রেরিত নবী রাসুল ও কিতাব সমুহের উপর বিশ্বাস করাই হচ্ছে “ঈমান”। এছাড়াও জান্নাত, জাহান্নাম ও ফেরেশতাদেরকে না দেখে বিশ্বাস করাও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। ঈমান অনেক ব্যাপক ও গভীর একটি বিষয়। ঈমান তথা বিশ্বাসের অনুপাতেই একজন ব্যক্তির আমল বা কাজসমূহ সংগঠিত হয়ে থাকে।
আশরাফ আলী থানভী (রহ) এর লিখিত “ফরুউল ঈমান” বইটি আমার অনেক প্রিয় একটি বই। এর বাংলা নাম হচ্ছে, ঈমানের সাতাত্তরটি শাখা। একজন মুমিনকে যত রকম আদেশ নিষেধ করা হয়েছে তার সারাংশ আছে এই বইতে।
আমি প্রায়ই এই বইটি পড়ি, এবং নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখি। যদিও আমার ভিতর অনেক কমতি আছে, তারপরও গাফলতি দূর করে পরিপূর্ণভাবে আমল করার চেষ্টা চালাই। আজকে আমি নিজের ও আমার ব্লগের পাঠকদের দাওয়াহ এর উদ্দেশ্যে এগুলো এখানে বর্ণনা করবো। যেকোনো কিছু অন্যকে বলার মাধ্যমে নিজে জন্য করা সহজ হয়ে যায়। তাই আমি এখানে সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করবো।
অন্তরের দ্বারা ঈমানের মোট ৩০ টি কাজ করতে হয়। তন্মধ্যে নয়টি আকাইদ বা বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত। একুশটি আখলাক বা আচার ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত।
ঈমান ও ইসলামের যেসব কাজ অন্তরের দ্বারা সম্পন্ন করতে হয়, তা হচ্ছেঃ
১। আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনা।
২। আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর সৃষ্টি বলে বিশ্বাস করা।
৩। ফেরেশতাদের উপর ঈমান আনা।
৪। আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় কিতাবের উপর ঈমান আনা।
৫। সমস্ত নবী-রাসূলদের উপর ঈমান আনা।
৬। তাকদীর বা ভাগ্যের উপর ঈমান আনা।
৭। কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান আনা।
৮। জান্নাতের উপর ঈমান আনা।
৯। জাহান্নামের উপর ঈমান আনা।
১০। আল্লাহ তায়ালার সাথে আন্তরিক মুহাব্বত, ভক্তি ও প্রেম রাখা।
১১। আল্লাহর বন্ধু বা আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ ব্যক্তিদের সাথে আল্লাহর জন্যই ভালবাসা রাখা। আর আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যদের থেকে আল্লাহর জন্যই বিমুখ হওয়া।
১২। রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আন্তরিক ভালবাসা রাখা।
১৩। কোনও ভালো কাজ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা।
১৪। নিজের কৃত গুনাহ থেকে তাওবাহ করা।
১৫। আল্লাহর ভয় সব সময় অন্তরে রাখা।
১৬। আল্লাহর রহমতের আশা রাখা।
১৭। হায়া অর্থাৎ, অন্যায় কোনও কাজ করতে লজ্জাবোধ করা।
১৮। শোকর করা।
১৯। ওয়াদা রক্ষা করা।
২০। ছবর করা।
২১। তাওয়াজ্জুহ অর্থাৎ, নম্রতা অবলম্বন করা।
২২। জীবের প্রতি দয়া করা।
২৩। তাকদীরের উপর রাজি থাকা।
২৪। তাওয়াক্কুল অর্থাৎ, আল্লাহর উপর ভরসা করা।
২৫। নিজেকে নিজে বড় ও ভালো মনে না করা।
২৬। কীনা বা পারস্পরিক মনোমালিন্য না রাখা।
২৭। হাসাদ অর্থাৎ, হিংসা বিদ্বেষ বর্জন করা।
২৮। রাগ দমন করা।
২৯। কারও অপকারের চিন্তা না করা।
৩০। দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও সাংসারিক মায়া ও মোহ ত্যাগ করা।
[ফরুউল ঈমান কিতাব অবলম্বনে লিখিত]