স্বাভাবিক ভাবে ইখলাস বলা হয় ওই আমল বা কাজকে যা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা হয়।
ইখলাসের স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
তিনটি স্বভাব এমন যে, কোনও মুসলমানের অন্তর তা গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করবে না।
- যে কোনও কাজ করার আগে নিয়্যত ঠিক করা।
- ন্যায় পরায়ণ মুসলিম শাসকের আদেশ নিষেধ মেনে চলা।
- মুসলমানদের হকপন্থী দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকা।
(হাদীস সূত্রঃ ইবনে মাজাহ ও আহমাদ)
শাদ্দাদ ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার বড় ভয় হয় যে আমার উম্মাত আল্লাহর সাথে শরীক করে বসে কিনা। মনে রেখো, আমি এ কথা বলছি না যে, “আমার উম্মত চন্দ্র, সূর্য বা প্রতিমা পূজা করবে। বরং আমার এই ভয় হয় যা তাঁরা অন্তরের কামনা বাসনা পূর্ণ করার জন্য এবং গায়রুল্লাহর জন্য অর্থাৎ, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনও উদ্দেশ্যে আমল করবে।
(হাদীস সূত্রঃ ইবেন মাজাহ)
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বহু জায়গায় ইখলাসের বিপরীত দুটি দিক, তথা রিয়া ও মুনাফেকী নিয়ে আলোচনা করেছেন।
যেমন আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদাতে তিনি একক সত্তা ছাড়া আর কাউকে শরীক করবে না।
রিয়া ও নিফাক এই দুটো জিনিষই ইখলাসের বিপরীত, এই দুটোরই প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর।
শরিয়াতের পরিভাষায় ‘রিয়া’ বলা হয় ওই আমলকে যা মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হয়।
আর নিফাক বলা হয়, ভিতরে কুফর রেখে বাহিরে ইসলাম দেখানোকে। মুনাফেকী দুই ধরনেরঃ
১। এতেকাদী
২। আমলী
এতেকাদী মুনাফেকী হলো, ভিতরে কুফর রেখে বাহিরে ইসলাম দেখানো।
আমলী মুনাফেকী হলো, নিজকে মুসলিম দাবী করা, ভিতর ও বাহিরে আকিদা ঠিক থাকা কিন্তু কিছু কিছু কাজ অমুসলিমদের মতো করে করা।
মুনাফিকদের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
“নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিন্ম স্তরে।
এই ধরণের মুনাফিকদের সম্পর্কেই আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“চারটি স্বভাব এমন আছে যে, যার মধ্যে এই চারটি স্বভাবের চারটিই থাকবে, সে পূর্ণ মুনাফিক হবে। এর যদি এর মধ্যে একটিও কারো মধ্যে থাকে, তবে যতদিন সে তাওবাহ না করবে, ততদিন তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বভাব থাকবে। সেই চারটি স্বভাব হলোঃ
১। তার কাছে আমানত রাখা হলে তা খিয়ানত করবে।
২। যখন কথা বলবে, তখন মিথ্যা বলবে।
৩। কারো সাথে ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করবে।
৪। অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করবে।
রিয়া অনেক বড় মাপের গোনাহ। এই গোনাহ থেকে বাঁচার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। তবে এজন্য ভালো কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ নয়। শয়তান অনেক সময় যা রিয়া নয়, তাকে রিয়া মনে করিয়ে, ভালো কোনও কাজ করা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে চায়।
তাই কোনও নেক আমল করার সময় লোক দেখানো চিন্তার উদয় হলে, নিজের নিয়ত বা উদ্দেশ্যকে একমাত্র আল্লাহর জন্য বলে ঠিক করতে হবে। এরপরও যদি কোনক্রমে মানুষ দেখে ফেলে, তবে সেজন্য নেক আমল থামিয়ে রাখবে না। করতেই থাকবে।
তখন মনকে এই বলে বুঝানো উচিৎ যে, মানুষ দেখছে বলে ত আমি আনন্দিত হচ্ছি না। আমার নিয়্যত ত সহীহ। বরং মানুষ দেখুক, এটাও পছন্দ করছি না। তাহলে, এটা লোক দেখানো কি করে হয়।
এভাবে, লোকে দেখলো কি না দেখলো এদিকে লক্ষ্য না করে নেক আমল অব্যাহত রাখলে, শয়তান আর ধোঁকা দিতে পারবে না।
প্রথম প্রথম লোক দেখানো আমল হলেও তা এক সময় অভ্যাসে পরিণত হয়। এবং তা থেকেই ধীরে ধীরে ইখলাস পয়দা হয়। তাই রিয়া বা লোক দেখানোর ভয়ে কোনও নেক কাজ ছেড়ে দেয়া ঠিক না। ইখলাস যেহেতু সম্পূর্ণরূপে কাজের উদ্দেশ্য বা মানসিক একটি প্রক্রিয়া, তাই এই ব্যাপারটি ধীরে ধীরে ঠিক হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকেই ইখলাসের সাথে সব আমল করার তাওফীক দান করুন।