স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য নিজের কাজ নিজে করার কোনও বিকল্প নেই। কারণ, আজকাল অন্যের উপর ভরসা করে চলতে গেলে সে না থাকলে নিজেকে পঙ্গু হয়ে পড়তে হয়। যেমন, গৃহস্থালি কাজের সহকারী আমরা যাকে কাজের বুয়া বা খালা বলে ডাকি, সে ও কিন্তু মানুষ। তার রোগ, বালাই ও বিপদ, আপদ হতে পারে। কিন্তু আপনার বাসার কাজ তো আর থেমে থাকবে না। তাই, বাসার প্রতিটা সদস্যকে নিজ নিজ কাজ নিজে করতে অভ্যাস করা উচিৎ। তাহলে একদিকে তাঁরা যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে শিখবে, তেমনি, অন্যের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলও হবে না। এটা তাঁদের সফলভাবে বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি দিক।
গৃহস্থালির অন্যান্য কাজের মধ্যে কাপড় ধোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আজ আমরা দেখবো কিভাবে এই কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। কাপড় সাধারনত দুই উপায়ে ধোয়া যায়। মেশিনের সাহায্যে ও খালি হাতে। আজ আমরা এই দুটি উপায় নিয়েই আলোচনা করবো। তাহলে চলুন শুরু করি।
ময়লা কাপড় আলাদা করাঃ কাপড় ধোয়ার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভালো কাপড় থেকে ময়লা কাপড় আলাদা করা। অনেক সময় দেখা যায়, বাসার ছোট সদস্যরা ভালো কাপড় ও ময়লা কাপড় সব একত্রে গুটলি-পুটলি বানিয়ে রেখে দেয়। এক্ষেত্রে ময়লা কাপড় আলাদা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এজন্য আপনি আলাদা একটা কাপড়ের বাস্কেট রাখতে পারেন। যেখানে ময়লা কাপড়গুলো রাখতে বলবেন। স্বাভাবিকভাবে একটা কাপড় একবার পরার পর ধুয়ে ফেলাই সবচেয়ে ভালো। কারণ একটা কাপড় একবার পরার পর না ধুলে শরীরে চুলকানি ও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হতে দেখা যায়। বিশেষ করে যেসব কাপড়ে ঘাম লেগে যায়, তা একবারের অধিক কখনোই পরা উচিৎ নয়। ময়লা কাপড় দেখলেই বোঝা যায়। এবং পরিস্কারের কাপড়ে কোনও বাজে গন্ধ থাকে না যা ময়লা কাপড়ে থাকে। এছাড়াও ময়লা কাপড়ে বিভিন্ন রকম দাগ ও ঝুল-কালি লেগে থাকে। এসব দেখেও ময়লা কাপড় চিহ্নিত করা যায়।
কাপড় মেরামত করাঃ কাপড় ধোয়ার আগে আরেকটা জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে কাপড় মেরামত করা। দেখা যায় পড়তে পড়তে অনেক সময় একটি কাপড় ছিঁড়ে যায়, ফেটে যায় অথবা কোনও বোতাম আলগা হয়ে থাকে। এসব কাপড় ধোয়ার সময় আরো ছিঁড়ে যেতে পারে। তাই, কাপড় ধোয়ার আগে এইসব ছোট খাটো ত্রুটি মেরামত করে নেয়া দরকার। কাপড় ধোয়ার আগে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন, কোনও জায়গায় ছিঁড়ে অথবা ফেটে গেছে কিনা। এমন হলে সেই জায়গাটি রিফু করে নিন। বোতাম আলগা হয়ে গেলে বা কোনও জায়গার বোতাম খুলে গেলে সুঁই সুতা দিয়ে শক্ত করে দিন বা বোতাম লাগিয়ে দিন।
কাপড়ের দাগ উঠানোঃ কাপড় পড়লে দাগ লাগবেই। কিছু কিছু কাপড় আছে, যাতে দাগ লাগলে ধোয়ার সময় ডিটারজেন্ট এবং অন্যান্য রাসয়নিকের সংস্পর্শে তা স্থায়ী হয়ে যায়। এই ধরনের কাপড় ধোয়ার আগেই তা থেকে দাগ দূর করে নিতে হয়। কাপড় থেকে দাগ দূর করতে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অনুসরন করা হয়। যেমন, সাইট্রিক এসিড বা লেবুর রস, সাদা ভিনেগার ও বেকিং সোডার মিশ্রন। কাপড়ে কোনও দাগ লেগে থাকলে প্রথমে তা স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুবেন। এতে যদি দাগ উঠে যায়, তাহলে ভালো। আর না উঠলে তখন দাগ উঠানোর বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
কাপড়ের জন্য পানি প্রস্তুত করাঃ বিভিন্ন কাপড় অনুযায়ী পানি গরম বা ঠান্ডা নিতে পারেন। সাধারনত সুতির কাপড় ও লিলেন কাপড় একটু গরম পানি দিয়ে ধোয়া ভালো। পশমি, রেশমি ও সিনথেটিক কাপড় ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুতে হয়। যেসব কাপড়ে বড় বড় পশম থাকে, সেগুলো পানি দিয়ে ধুলে অনেক সময় শক্ত হয়ে একত্রে লেগে থাকে। তাই এই ধরনের কাপড় ড্রাইওয়াশ করাই ভালো। যেসব কাপড় সাদা ও কঠিন দাগ পড়ে গেছে, এ ধরনের কাপড় ভিনেগার ও কাপড় ধোয়ার সোডা দিয়ে সিদ্ধ করে ধুতে পারেন।
পানিতে ডিটারজেন্ট মেশানোঃ ডিটারজেন্ট মেশানোর ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে যেমন লেখা আছে, পানির অনুপাতে সেই পরিমান ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবেন। কাপড়ের অনুপাতে ডিটারজেন্টের পরিমাণ খুব কম বা বেশী হলে কাপড় পরিষ্কার হবে না বা কাপড়ের রং চটে যাবে। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কাপড় ওয়াশিং মেশিনের ম্যানুয়াল অনুযায়ী ডিটারজেন্ট বার বা ডিটারজেন্ট পাউডার দিতে হবে।
কাপড় ভিজিয়ে রাখাঃ স্বাভাবিক ভাবে ৩০ মিনিট কাপড় ভিজিয়ে রাখলেই যথেষ্ট। এর বেশী সময় কাপড় ভিজিয়ে রাখলে কাপড়ের তন্তু নরম হয়ে কাপড় তাড়াতাড়ি ছিড়ে যেতে পারে।
কাপড় কাচাঃ ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়া হলে কাপড় কাচার দরকার হয় না, ওয়াশিং মেশিনই কাপড় কেচে পানি বদলিয়ে কাপড় পরিষ্কার করে ধুয়ে বের করে দেয়। কিন্তু হাতে ধুতে গেলে প্রথমে কাপড়ের যেসব জায়গা বেশী ময়লা হয়ে যায়, যেমন কাপড়ের হাতা ও কলার ইত্যাদি ভালো করে কচলিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে ব্রাশ দিয়ে এসব জায়গা ঘষে নিবেন। তারপর হালকা হাতে কাপড় কেচে আলদা বালতিতে উঠিয়ে নিন।
পানি দিয়ে পরিষ্কার করাঃ কাপড় কাচার পর অবশ্যই পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে, একটি বালতিতে বেশ খানিকটা পানি নিয়ে তাতে কাপড় চুবিয়ে রেখে খানিকটা নেড়েচেড়ে ও কচলিয়ে উঠিয়ে নিন। এভাবে বেশ কয়েকবার পানি বদলালে যখন আর ফেনা উঠবে না তখন কাপড় উঠিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
কাপড় শুকানোঃ রঙিন কাপড় হলে কাপড় ছায়ার মধ্যে শুকাতে দিন। কাপড় যদি সাদা হয় তাহলে রোদে দিয়ে শুকাতে পারেন। কাপড় সাধারণত তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। কাপড় শুকিয়ে গেলে ঘরে এনে ভাঁজ করে বা ইস্ত্রি করে যথাস্থানে সংরক্ষণ করুন।
ব্যস, এই কয়েকটি ধাপেই আপনি নিজের কাপড় নিজে ধুয়ে নিতে পারেন। তাহলে আর কাজের সহকারী বা বুয়ার পথ চেয়ে বসে থাকতে হবে না অথবা ময়লা কাপড়ও পড়তে হবে না। আশা করি, আজ থেকেই নিজের কাপড় নিজে ধুতে চেষ্টা করবেন। ভালো লাগলে লাইক দিন ও শেয়ার করুন।