বাংলাদেশে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রিয়তার পাশাপাশি আমরা সবচেয়ে বেশী মুখোমুখি হচ্ছি প্লাস্টিক দূষণের। স্বাভাবিকভাবে প্লাস্টিক হচ্ছে অপাচ্য একটি ধাতু যা সাধারনত বস্তুর মোড়ক হিসেবেই বেশী ব্যবহার করা হয়। যদিও এখন প্লাস্টিকের বেশীর ভাগ অংশই রিসাইকেল করা হচ্ছে, তারপরও এতে অনেক বেশী স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যা

Photo by Leonid Danilov on Pexels.com
প্লাস্টিকের পরিবর্তে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য প্যাকেজিং করতে টিন, অ্যালমিনিয়াম, কাগজ, কাপড়, পাট, বাঁশ ও কাঠের তৈরি দ্রব্য সহজেই ব্যবহার করা যায়, যা অতিসহজেই পচনশীল এবং রিসাইকেল করা সম্ভব।
প্লাস্টিকের ব্যবহার যেহেতু পুরোপুরি থামছে না, তাই দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহারে সতর্ক থাকার কোনও বিকল্প নেই। বাংলাদেশে প্রতি বছর মাথাপিছু প্রায় পাঁচ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এজন্য এসব দ্রব্য যাতে পরিবেশের সাথে মিশে মানুষ ও জীব বৈচিত্র্যের জন্য হুমকি না হয়ে উঠে, সেজন্য নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন।
- দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্লাস্টিক দ্রব্য ও সামগ্রী আলাদা করে রিসাইকেল করতে দেয়া।
- খাবার ও অন্যান্য ব্যবহার্য তৈজসপত্রের জন্য নিরাপদ প্লাস্টিক ব্যবহার করা।
- পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল ও অন্যান্য দ্রব্য যেখানে সেখানে না ফেলা।
- প্লাস্টিকের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা।
- প্লাস্টিকের পরিবর্তে পরিবেশের সাথে সহজে মিশে যায় এমন দ্রব্য যেমন, কাঁচ, অ্যালুমিনিয়াম, কাগজ, পাট, বাঁশ ও কাপড় দিয়ে প্যাকেজিং তৈরি করা।
- পচনশীল ময়লা ফেলার আগে প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী আলাদা করে ফেলা।
- রিসাইকেল করার কোনও উপায় না থাকলে তা পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা।
প্লাস্টিকের তৈরি বস্তুসমূহ রিসাইকেল করার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে অন্যতম চারটি পদ্ধতি নিচে দেয়া হলোঃ
১। প্লাস্টিক পলিমার উৎপাদন করা ও রপ্তানি করাঃ পলিমার হচ্ছে প্লাস্টিকের একটি যৌগ যা দিয়ে প্লাস্টিকের বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করা হয়। পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক রিফাইনিং করে ছোট ছোট প্লাস্টিক দানা তৈরি করা যায়।
২। প্লাস্টিকের চেয়ার, আসবাব পত্র, দরজা ফিটিংস ও কাঠের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দ্রব্য তৈরি করতে ব্যবহার করা।
৩। বেসিক ক্যামিকেল ও ফুয়েল তৈরি করতে প্লাস্টিকের যৌগ ব্যবহার করা হয়।
৪। প্লাস্টিক পোড়ানোর মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করা। প্লাস্টিক পোড়ালে উচ্চ মাত্রার তাপ উৎপন্ন হয়, যা বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। প্লাস্টিকের চুল্লিতে ৯০০ থেকে ১০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে। এর ৮০ থেকে ৯০ ভাগ শক্তি হিসেবে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। বাকি অংশ ডাম্পিং করা সম্ভব।
নিরাপদ প্লাস্টিক কিভাবে চিনবেনঃ
আমরা প্রায় সময়েই প্লাস্টিকের বিভিন্ন দ্রব্য ব্যবহার করে থাকি। অনেক সময় খাদ্যবস্তুর মোড়ক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু খাবারের সাথে প্লাস্টিক ব্যবহারের আগে জানতে হবে প্লাস্টিক দ্রব্যটি স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ কিনা।
প্লাস্টিক দ্রব্যের নিচে অথবা গায়ে রিসাইকেল চিহ্নের ভিতরে একটি সংখ্যা থাকে, যা দিয়ে নিরাপদ প্লাস্টিক বোঝা যায়ঃ
১। যদি রিসাইকেল চিহ্নের ভিতর ১ লেখা থাকে, তাহলে এটা একবারই ব্যবহার করতে হবে। একবারের বেশী ব্যবহার করা হলে এর ভিতর ফাঙ্গাস বা ছত্রাক জন্ম নিতে পারে।
২। যদি রিসাইকেল চিহ্নের ভিতর ২ লেখা থাকে তবে এটা পুনরায় ব্যবহার করা যাবে।
৩। যদি রিসাইকেল চিহ্নের ভিতর ৩ লেখা থাকে, তবে এটা মোটেও ব্যবহার করা ঠিক নয়। এগুলোকে পিভিসি বলে। সধারনত নির্মাণ কাজে ও বৈদ্যুতিক তারের কভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহারে ক্যান্সার হতে পারে।
৪। যদি রিসাইকেল চিহ্নের ভিতর ৪ লেখা থাকে, তবে এটা ব্যবহারে ঝুঁকি নেই, তবে উচ্চ তাপমাত্রায় বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করে। সাধারণত শপিং ব্যাগ বা পলিথিন এগুলো থেকে তৈরি হয়।
৫। যদি রিসাইকেল চিহ্নের ভিতর ৫ লেখা থাকে, তবে এই ধরনের প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহারে কোনও ঝুঁকি নেই। সাধারনত খাবারের কৌটা, জগ বা গ্লাস এগুলো দিয়ে তৈরি হয়।
৬। যদি রিসাইকেল চিহ্নের ভিতর ৬ লেখা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এগুলো থেকে স্টাইরিন নির্গত হয়। যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। সাধারনত ক্যাফেটেরিয়া বা খাবারের দোকানে এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। এগুলো ব্যবহার করা অনুচিত।
৭। যদি রিসাইকেল চিহ্নের ভিতর ৭ লেখা থাকে, তবে এ ধরনের প্লাস্টিক থেকে বিপিএ নির্গত হয় যা ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত। বিপিএ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শিশুর খেলনা ও গৃহস্থালি ভারী কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী তৈরিতে এ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এগুলোতে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা একেবারেই ঠিক নয়।
প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহারে প্রত্যেকেরই অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিৎ। একমাত্র সচেতনতাই পারে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম ও পরিবেশকে ধংসের হাত থেকে বাঁচাতে। তাই প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হউন, সুস্থ থাকুন ও পরিবেশ বাঁচান।