বর্ষাকাল দারুণ স্যাঁতস্যাঁতে, ভেজা ও গুমোট আবহাওয়ার একটি ঋতু। এ সময় পরিবেশে আর্দ্রতা বেশী থাকায় রোগ জীবাণু ও ছত্রাকের সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায়। বর্ষাকালে ত্বক ও মাথায় ফাংগাল ইনফেকশন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এর মধ্যে বেশ কিছু রোগ নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
পানিবাহিত রোগঃ বর্ষাকালে ভালো ও খারাপ সব পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এজন্য পানিবাহিত রোগ দেখা দিতে পারে। এই সময়ের পানিবাহিত রোগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ডায়রিয়া ও আমাশয়। এ দুটি রোগ এড়িয়ে চলতে পরিষ্কার পানি দিয়ে না ধুয়ে কখনো কোনও ফল খাবেন না ও খাবার পানি জীবানুমুক্ত করে পান করতে হবে।
ছত্রাকের সংক্রমণঃ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এজন্য গোসলের পর এসব জায়গা শুকনো রাখতে ভালো ব্র্যান্ডের ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করুন। ছত্রাকের সংক্রমণ বা পচা পানিতে হাঁটা চলা করার ফলে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে বা নখের কোনায় পচন রোগ দেখা দিতে পারে। এগুলো দূর করতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন অথবা পুঁজ বের করে কোনও এন্টিসেপ্টিক পাউডার বা ভায়োডিন ব্যবহার করুন। বর্ষার পানিতে হাটাচলার জন্য পা যাতে কিছুতেই না ভিজে এমন জুতা ব্যবহার করুন।
সাধারণ সর্দি কাশি জ্বরঃ বর্ষাকালে যেহেতু বৃষ্টিতে ভেজার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে, তাই এসব রোগ হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। ঠান্ডা জ্বর, সর্দি বা কাশি হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাইরে যাবেন না। সাধারণ জ্বর সর্দি বা কাশিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে এন্টি বায়োটিক ট্যাবলেট খাওয়া ঠিক নয়। এ সময় গরম চা, লেবু পানি ও ভিটামিন সি জাতীয় ফল খেলে ভালো উপকার পাবেন।
বর্ষাকালসহ সব ঋতুতেই বাংলাদেশে কোনো না কোনও ফল পাওয়া যায়। বর্ষাকালের জনপ্রিয় কিছু ফলের তালিকা নিচে দেয়া হলোঃ
আমড়াঃ এটি একটি টক ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। সাধারনত বরিশাল জেলায় সবচেয়ে বেশী আমড়া পাওয়া যায়। কাঁচা আমড়ার চেয়ে পাকা আমড়া বেশী সুস্বাদু। আমরা আচার, ভর্তা ও মোরব্বা বানিয়ে খাওয়া যায়।
পেয়াড়াঃ পেয়ারাও একটি বর্ষা কালীন ফল। এর পুষ্টি গুণ প্রায় আপেলের মতই। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অন্যান্য ভিটামিন আছে।
গাবঃ আমাদের দেশে দুই ধরনের গাব পাওয়া যায়। একটা হচ্ছে দেশী গাব ও অন্যটি বিলাতী গাব। দেশি গাবের তুলনায় বিলাতী গাবের কদর বেশী। ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী গাবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও খনিজ লবণ পাওয়া যায়।
জামঃ জাম গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও বর্ষাকালেও পাওয়া যায়। জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও খনিজ লবণ পাওয়া যায়। তাই যাদের রক্তস্বল্পতা আছে, তাঁরা এই ফলটি খেতে পারেন।
লটকনঃ লটকন একটি টক ফল। কিন্তু এতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ ও ভিটামিন সি আছে। বর্ষাকালে চর্মরোগ প্রতিরোধে লটকন বেশ উপকারী একটি ফল।
জাম্বুরা: জাম্বুরাও অত্যন্ত উপকারী একটি বর্ষাকালীন ফল। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। জাম্বুরা ভর্তা করে অথবা আইসক্রিম বানিয়ে খাওয়া যায়।
জামরুলঃ জামরুল বেশ রসালো একটি ফল। এটা খেতে অনেকটা নাশপাতির মত লাগলেও এই ফলে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, খনিজ লবণ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
ডেউয়াঃ এটা একটি ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল। এই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বেশ কিছু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কাউঃ কাউফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলে পাকলে কমলা বা হলুদ হয়। ফলের ভিতর চার পাঁচটি দানার সঙ্গে রসালো অংশ থাকে যা চুষে খেতে হয়। এতে আছে কপার, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম। এছাড়াও পাবেন থায়ামিন, নিয়াসিন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সসহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন।
বর্ষাকালে ত্বক ভালো রাখতে এসব ফলের পাশাপাশি খেতে পারেন প্রচুর পরিমাণে পানি ও পরিচ্ছন্ন শাকসবজি যেমন, গাজর, শসা, পটল ঝিঙ্গা, করলা ইত্যাদি। তবে কোনও ক্রমেই পচা কোনও কিছু খাবেন না। ভালো থাকুন, এই প্রত্যাশায়, আজ এ পর্যন্তই।