পুরান ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানীর অনেক খ্যাতি ও নাম ডাক আছে। কাচ্চি বিরিয়ানীর রেসিপিগুলোর মধ্যে অন্যতম এই রেসিপিটি অবশ্যই বাসায় বানিয়ে দেখতে পারেন। নিচে রেসিপিটি দেয়া হলো। প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে অনুসরণ করলে পারফেক্ট পুরান ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানী তৈরি হয়ে যাবে। তাই পুরো রেসিপিটি পড়ে ফেলুন ও ধাপগুলো একটি একটি করে অনুসরণ করুন।
উপকরণঃ
- চিনিগুড়া পোলাওয়ের চাল – ৭৫০গ্রাম
- আলু – আধা কেজি
- লবণ – স্বাদমতো
- ফুড কালার (কমলা) – ঐচ্ছিক
- তেল- ১/২ টেবিল চামচ
- দুধ – ১কাপ
- জাফরান – ১/২চা চামচ
- গরুর মাংস/খাসির মাংস – দেড় কেজি
- কাঁচা পেঁপেঁ বাটা – ২টেবিল চামচ
- টক দই – ১/২কাপ
- পোস্ত দানা বাটা – ১/২ কাপ
- কাজু বাদাম বাটা – ১/৪ কাপ
- আদা বাটা – ৩ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ২টেবিল চামচ
- জয়ফল/জয়ত্রি বাটা বা গুড়া – ১/২চা চামচ
- মরিচের গুরা – ১ টেবিল চামচ
- ভাজা জিরার গুঁড়া – ১ টেবিল চামচ
- শাহি গরম মসলা – ১ চা চামচ
- আস্ত শাহি জিরা – ১ চিমটি
- কাবাব চিনি – ১ চা চামচ
- পেঁয়াজ বেরেস্তা-১ কাপ
- গোল মরিচের গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- তেল – পঁনে ১ কাপ
- কেঁওড়া জল – ১ টেবিল চামচ
- ঘি – পরিমাণ মতো
- শাহি জিরা- ১ চিমটি
- সবুজ এলাচ – ৭-৮টি
- দারচিনি – ৪-৫ টুকরো
- তেজপাতা – ৩-৪ টি
- তেল-১ টেবিল চামচ
- পেয়াজ বেরেস্তা – ১/২কাপ
- চিনি – ১ টেবিল চামচ
- কাঠ বাদাম
- কিসমিস – ২ টেবিল চামচ
- আলুবোখারা – ৫-৬ টি
- কেঁওড়া জল – ১ টেবিল চামচ
- গোলাপ জল – ১ টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ – ৩-৪ টি
প্রণালীঃ
প্রথমে ৭৫০গ্রাম চিনিগুড়া পোলার চাল/বাসমতী চাল নিবেন। কয়েক বার পানি পরিবর্তন করে চাল গুলো ভালমত ধুয়ে নিবেন।ধোয়ার পর ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ১টি স্ট্রেইনারে করে পানি ঝরিয়ে নিবেন। অন্য এক বাটিতে আধা কেজি আলু কিছুটা বড় করে কেটে নিয়ে তাতে স্বাদ মতো লবণ দিবেন। ১/৪ চামচ কমলা রঙ এর ফুড কালার এতে দিয়ে দিবেন। এবার আলুর সাথে ফুড কালার মাখিয়ে নিবেন। মাখিয়ে রাখার ১০ মিনিট পর চুলায় ১ টি পাত্র বসিয়ে তাতে দেড় টেবিল চামচ তেল দিয়ে দিবেন। তেল গরম হয়ে গেলে আলু গুলো ভেজে নিবেন। চুলার হিট লো তে রেখে একটু সময় নিয়ে আলু গুলোকে আধা সেদ্ধ হওয়ার মত ভাজতে হবে। বাকিটা সেদ্ধ দমে নিয়ে করে নিবেন। অন্য এক বাটিতে ১ কাপ কুসুম গরম দুধের সাথে ১/২চা চামচ জাফ্রান দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন। এবার আলাদা বাটিতে দেড় কেজি গরুর মাংস নিয়ে নিবেন।
খাসির মাংস ও নেয়া যাবে। মাংস গুলো হাড় চর্বি সহ নিলে বেশ ভালো হয়। দেড় কেজি মাংসের জন্য দেড় টেবিল চামচ লবণ নিয়ে নিবেন। ২টেবিল চামচ কাঁচা পেঁপেঁ ছোলা সহ বাটা দিয়ে দিবেন। আধা কাপ টক দই পানি সহ ফেটিয়ে দিয়ে দিবেন। এবার ভালো মত মাখিয়ে নিতে হবে। এবার এতে দিয়ে দিবেন আধা কাপ পোস্ত দানা বাটা, ১/৪ কাপ কাজু বাদাম বাটা, ৩ টেবিল চামচ আদা বাটা, ২টেবিল চামচ রসুন বাটা, ১/২ চা চামচ জয়ফল ও জয়ত্রি বাটা বা গুড়া, ১ টেবিল চামচ লাল মরিচ এর গুড়া, ১ টেবিল চামচ ভাজা জিরার গুড়া, ১ চা চামচ শাহী গরম মসলার গুঁড়া, ১ চিমটি আস্ত শাহী জিড়া, ১ চা চামচ কাবাব চিনি, ১ কাপ পেয়াজ বেরেস্তা,আধা চা চামচ গোল মরিচের গুঁড়ো, পঁনে ১কাপ তেল এবং ১টেবিল চামচ কেঁওড়ার জল। এবার সব ভালোমত মাখিয়ে নিতে হবে। এমনভাবে মাখতে হবে যেন মাংসের সব জায়গায় মসলা গুলো সব মিশে যায়। এবার স্মোকি ফ্লেভার আনার জন্য মাংসের পাত্রের মাঝখানে ছোট একটি স্টিলের বাটি দিয়ে দিবেন।
এবার গ্যাসের চুলায় ১ টি কয়লার ছোট টুকরো দিয়ে দিবেন। কিছুক্ষণ আগুন জালিয়ে রাখবেন। এরপর কয়লা ধরে আসলে তা বাটিটির উপরে দিয়ে দিবেন। এবার কয়লার উপর সামান্য একটু ঘি দিয়ে মাংসের প্যান ঢেকে দিবেন। এবার ১০ মিনিট ঢাকনা দিয়ে রাখবেন। যাতে ধোঁয়াটা মাংসের মধ্যে ঢুকে যায়। এবার চাল গুলো সেদ্ধ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ফুটন্ত পানিতে ১ চিমটি শাহী জিরা, ৭-৮ টি সবুজ এলাচ, ৪-৫ টুকরো দারচিনি, ৩-৪টি আস্ত তেজপাতা ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে দিবেন। ১টেবিল চামচ সয়াবিন তেল দিয়ে দিবেন। এর মধ্যে পানি ঝরতে রাখা চাল গুলো দিয়ে দিবেন। চাল সেদ্ধ হওয়ার জন্য পানি বেশি নেয়া ভালো। চাল দিতে হবে পানি সম্পূর্ণ ফুটে আসার পরে।
চুলার জাল মিডিয়াম হাই তে থাকবে। ঢাকনা খোলা রেখে চাল ৮০% সেদ্ধ করতে হবে। বাসায় অল্প কাচ্চি রান্না করলে ৮০% সেদ্ধ করতে হবে। কিন্তু বার্বুচি বাইরে অনেক বেশি রান্না করে বলে ৫০% সেদ্ধ করে। এবার মাংসের ঢাকনা উঠিয়ে তাতে আধা কাপ পেয়াজ বেরেস্তা ও ১ টেবিল চামচ চিনি নিয়ে তা কিছুটা মাংসের উপর ছিটিয়ে দিবেন এবং কিছুটা পরে ব্যবহারের জন্য রেখে দিবেন। ভেজে নেয়া আলু মাংসের উপরে দিয়ে দিবেন। এবার স্বাদমতো কাঁঠ বাদাম দিয়ে দিবেন। এবার তার মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ চাল দিয়ে দিবেন। বেশি চাপাচাপি করা যাবেনা।
আলতো হাতে সমানভাবে বিছিয়ে দিতে হবে। এখন ভিজিয়ে রাখা জাফরান দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ ঘি মিশিয়ে অর্ধেকটা দিয়ে দিবেন ১ম পর্যায়ে। জাফরানের পরিবর্তে ফুড কালার ব্যবহার করা যাবে। উপর দিকে দিয়ে দিবেন ২টেবিল চামচ কিসমিস,৫-৬টা আলুবোখারা ও কিছুটা কাঁঠ বাদাম দিয়ে দিবেন। কাঁঠ বাদাম না দিলেও চলবে।
এবার বাকি অর্ধেক চাল গুলো দিতে হবে। এবার তাতে আবারও দুধ ও জাফরান মিশানো ঘি দিয়ে দিবেন।এবার এতে দিয়ে দিবেন ১ টেবিল চামচ কেঁওড়া জল,১টেবিল চামচ গোলাপ জল,অবশিষ্ট চিনি ও পেঁয়াজের বেরেস্তা দিয়ে দিবেন। এবার হাতা বা খুন্তি দিয়ে পাত্রের মাঝ বরাবর গোল ফুটোর মতো করবেন। গর্ত করবেন যাতে ভিতরের তাপটা উপরে উঠে আবার ভিতরে পরে যায়।
এতে মাংস ভালো মত সেদ্ধ হবে। এবার ৩-৪ টি কাঁচা মরিচ গেঁথে দিবেন।এবার পাত্রের মুখ ভালো মত সিল করার জন্য আটা পানিতে মথে নিয়ে তা প্যানের পাশে লাগিয়ে তার উপরে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিবেন।এবার একটি লোহার তাওয়ায় প্যান টি বসিয়ে দিবেন।
চুলার আঁচ প্রথম ১০ মিনিট হাই তে থাকবে ও পরবর্তী ৫০ মিনিট একেবারে লো হিটে রান্না করতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্যানের ঢাকনায় কোন ছিদ্র না থাকে।ছিদ্র থাকলে তা লং দিয়ে ঢেকে দিবেন। খাসির মাংস নিলে পরবর্তী ৪০মিনিট রান্না করতে হবে। এবার চুলা বন্ধ করে আরো ৩০মিনিট বসিয়ে রাখবেন। এবার চারপাশের আটা খুলে নিতে হবে। তৈরী হয়ে যাবে পুরান ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানি। এবার সালাদের সাথে পরিবেশন করুন মজাদার কাচ্চি বিরিয়ানি।