ঘৃতকুমারীর ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে (Aloevera)। সংক্ষেপে এটাকে Aloe বলা হয়। আজ আমরা জানবো ঘৃতকুমারী থেকে সঠিক পদ্ধতিতে রস বের করা ও তা থেকে একটি অসাধারণ ফেসমাস্ক তৈরি করার পদ্ধতি যা আপনার ত্বকের মরা কোষ দূর করে উজ্জ্বল ত্বক পেতে সহায়তা করবে। এছাড়াও অ্যালোভেরার রস একটানা ১৫ দিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের ব্রণ ফুসকুড়ি একেবারেই মিলিয়ে যাবে। এমনকি ত্বকের বড় লোমকুপকেও ছোট করতে সাহায্য করে এর রস।
এজন্য প্রথম ধাপে বড় সাইজের অ্যালোভেরার দুটো পাতা নিতে হবে এবং এগুলো থেকে সাবধানে ভিতরের অংশ বা পাল্প বের করে নিতে হবে। তবে এই ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলে বুঝতে সহজ হবে। তাই নিচে ধাপে ধাপে দেখানো হলোঃ
প্রথম ধাপঃ
প্রথমে বড় সাইজের দুটো এলোভেরার পাতা নিন। এগুলো দেখতে অনেক মোটা ও পরিপুষ্ট হয়ে থাকে। এবার কয়েক ভাগে টুকরা করে কেটে নিন। এর ফলে উপরের সবুজ আবরণ সহজেই দূর করা যাবে। টুকরা করার পর একটি ট্রে বাঁ বাটিতে আধা ঘণ্টা সময় ধরে দাড় করিয়ে রাখুন। একটু খেয়াল করলে দেখবেন পাতার আগায় হলুদ মতো কিছু উপাদান বের হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঘৃতকুমারীর কষ যা ত্বকের সংস্পর্শে আসলেই কুট কুট করে কামড়াতে থাকে। তাই রস তৈরির আগে এগুলো বের করে নেয়াই সবচেয়ে ভালো।
বাজারে এলোভেরার পণ্য সাধারণত দুইভাবে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে এলোভেরা জেল ও অন্যটি হচ্ছে আলোভেরা জুস। অ্যালোভেরার জেল সাধারণত থকথকে জেলের মতো হয়ে থাকে। আর এলোভেরার জুস আরো অনেক পাতলা হয়। কিন্তু আসল অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর রস অনেক থকথকে ও পিচ্ছিল হয়ে থাকে। অনেকটা ডিমের সাদা অংশের মতো। আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনি অ্যালভেরার রস থেকে জেল ও জুস তৈরি করবেন। এবং কি উপায়ে এগুলো আপনার ফেসমাস্ক বানানোর জন্য সংরক্ষণ করবেন। একই সাথে অ্যালভেরার তৈরি একটি ফেসমাস্ক যা আপনি ত্বকের দাগ ও রোদে পোড়া ভাব দূর করতে লাগাতে পারেন।
দ্বিতীয় ধাপঃ
এলোভেরা থেকে হলুদ উপাদান বের হয়ে যাওয়ার পর এগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার দুই পাশের কাটাযুক্ত অংশগুলো কেটে নিন। এবার এগুলো থেকে সাবধানে পাল্প বের করুন। এমনভাবে বের করুন যাতে সবুজ অংশগুলো একেবারেই না থাকে। এবার এগুলো হালকাভাবে ধুয়ে নিন। এরপর ব্লেন্ডারে এগুলো নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এক টুকরা চিজক্লথ বা ফিল্টার ব্যাগে নিয়ে এগুলো চিপে রস বের করে নিন। যাতে অতিরিক্ত কোনও আঁশ না থাকে।
এভাবে ছেঁকে নেয়ার ফলে আপনি একেবারে খাঁটি এলোভেরার রস পাবেন। এখন আপনি চাইলে এই রস ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করতে পারেন। এই রসগুলো আইস কিউব বক্সে ঢেলে বরফের টুকরা বানিয়ে নিন। তাহলে ফেসমাস্ক তৈরি করার সময় এক টুকরো বরফ মিশিয়ে নিলেই হবে।
এবার আসি জেল ও জুস কিভাবে তৈরি করবেন।
এলোভেরার জুস
এলোভেরার জুস বানিয়ে সকালবেলা খালি পেটে খেতে পারেন। এই রস পেট ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। জুস বানাতে এলোভেরার রস বা নির্যাসের সাথে ডিস্টিল ওয়াটার মিশিয়ে নিলেই জুস তৈরি হয়ে যাবে।
এলোভেরার জেল
এলোভেরার জেল তৈরি করতে সমপরিমাণ জুসের সাথে সমপরিমাণ এলোভেরার রস মিশিয়ে নিতে হবে। এর সঙ্গে পরিমাণ মতো আগার আগার পাউডার, যাংটান গাম অথবা জেলোটিন মিশিয়ে ঘন ঘন নাড়তে থাকুন। এক সময় থকথকে জেল তৈরি হবে। তবে এই জেল দীর্ঘদিন ফ্রিজের বাইরে সংরক্ষণ করতে চাইলে এর সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল অথবা ফাংগাস প্রতিরোধকারী সল্যুশন ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যালোভেরা ফেসপ্যাক
ত্বকের যত্নে ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে অ্যালোভেরার কার্যকারিতা সবাই জানে। আপনার মুখ কি ছোট ছোট ফুস্করিতে ভরে গেছে। অথবা ত্বকের লোমকূপ বড় হয়ে গেছে? বা ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে ব্রণ দেখা যাচ্ছে। তাহলে আপনি নিচের মাস্ক ব্যবহার করে দেখুন। মাস্ক তৈরি করতে লাগবে:
- অ্যালোভেরার রস
- মুলতানি মাটি
- কমলার খোসা গুঁড়ো
- মধু
- নিমপাতা গুঁড়ো (ব্রণ থাকলে)
এই সবগুলো উপাদান পরিমান মতো নিয়ে একত্রে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট বা শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রেখে দিন। এরপর ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
বড় লোমকুপ ছোট করতে
তাজা অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে বরফ বানিয়ে নিন। এরপর প্রথমে গরম পানির ভাপ নিন। তারপর এই বরফের টুকরা মুখে ঘষে লাগান। কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
পেট ঠান্ডা করতে অ্যালোভেরার রস
আসছে রোজা। তাই ইফতারের সময় পেট ঠান্ডা রাখতে অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে পুদিনা পাতা দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এই মিশ্রন আইস কিউবে দিয়ে বরফ বানিয়ে নিন। তারপর সাধারণ ইসুব গুলের শরবতের সাথে একটা একটা করে টুকরা মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে পেট ঠান্ডা থাকবে ও পেটের হজমের সমস্যা ও গন্ডগোল থাকলে তা দূর হবে।
অ্যালোভেরার তৈরি শিট মাস্ক
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর রস দিয়ে তৈরী শিট মাস্ক এখন বাজারে অহরহ পাওয়া যায়। আপনি কি জানেন, আপনি চাইলে এই শিট মাস্কের মতো মাস্ক ঘরেই বানাতে পারেন? এজন্য আপনার লাগবে এক টুকরা পরিষ্কার মসলিন সুতি কাপড়, এলোভেরার রস আর স্প্রে বোতল। সুতি কাপড় মুখের আকৃতি অনুযায়ী গোল করে কেটে নিন। এবার পরিষ্কার গরম পানিতে কাপড়টি ধুয়ে নিন, যাতে কোনও ধরনের ময়লা না থাকে। এবার, একটি পরিষ্কার প্লেটে কাপড়টি বিছিয়ে স্প্রে দিয়ে কাপড়ের উপরিভাগে স্প্রে করে নিন। এবার কাপড় সুদ্ধ প্লেট ডিপফ্রিজে রেখে দিন। আধ ঘন্টা পর এই মাস্কটি মুখে ব্যবহারের উপযোগী হবে। এবার গরম পানির ভাপ নিয়ে মুখে শীট মাস্কটি ব্যবহার করুন।