আজকাল খুব বেশি অতীত আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা থেকে দূরে থাকি। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ এসব ভাবনা মনে চলে আসে। অতীত এমন একটা জিনিস মানুষ যা চাইলেও পাল্টাতে পারে না। আর ভবিষ্যত হচ্ছে এমন একটি ধারণা যার কিছুটা নির্ভর করে বর্তমানের উপর আর বেশীরভাগ নির্ভর করে ভাগ্যের উপর।
বলা হয়, একটা মানুষ মায়ের পেট থেকে তার ভাগ্যে যা যা ঘটবে তা নির্ধারিত হয়ে আসে। তাই আমরা দেখতে পাই, আমাদের জীবনে ভাগ্যের অনেক বড় প্রভাব থাকে। অনেক কিছুই আমরা ভাগ্যে নেই বা ছিলো না বলে পাই না। আবার কিছু জিনিস আমরা না চাইতেও পেয়ে যাই। এতেই বুঝা যায় আমাদের জীবনে ভাগ্য বলে কিছু আছে।
ভাগ্যের ভালো মন্দের উপর বিশ্বাস ও তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকাই একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। যারা ভাগ্যের নির্ধারণ বা ফয়সালাকে মানতে পারে না তারা সব সময়ই অসন্তুষ্টি , অতৃপ্ত ও অসুখী জীবন যাপন করে। এর ফলে মানুষ অনেক ভুল কাজ এমনকি নিজের ও অন্যের ক্ষতি পর্যন্ত করে ফেলে। যদি প্রথমেই ভাগ্যকে মেনে নিতো, তাহলে তার দ্বারা কোনো ভুল কাজ হতো না। মানুষের জীবনের পরীক্ষা এখানেই হয়ে যায়। এমন কেউ নেই, যার জীবনের প্রতিটি কাজ তার ইচ্ছামতো হয়েছে, বা সে জীবনে যা যা চেয়েছে ঠিক তাই পেয়েছে।
মানুষের জীবন পুরোটাই পরীক্ষা। এখানে তাঁরাই পাশ করে যারা নিজের ইচ্ছামতো না চলে আল্লাহর ইচ্ছার উপর নিজেকে সঁপে দেয়। আর যে জিনিস ভাগ্যে নেই, তার জন্য অযথা আফসোস করে না। মনে রাখতে হবে আমরা হলাম মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব। আমাদের জীবন আল্লাহর ইবাদতের জন্য। আর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জান্নাত।
তাই পৃথিবীর তুচ্ছ কোনো জিনিস না পেয়ে নিজের জীবনকে ব্যর্থ ভাবার কোনোও অবকাশ আমাদের নেই। আমাদের আসল লক্ষ্য তো জান্নাত। তাই কেউ যদি জান্নাত পেয়ে যায়, সে পৃথিবীতে যেমনি থাকুক সে সফল হয়ে গেছে।
মানুষের জীবন খুব আশ্চর্যজনক। ৬০ কিংবা ৭০ উর্ধ্বে গেলে ১০০ বছরের জীবন। এর মধ্যে সে যৌবনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যা কিছু অর্জন করে তা পুরোপুরি উপভোগ করার আগেই মারা যায়। তাহলে এই জীবন কি করে আসল জীবন হতে পারে। আসল তো আখিরাত এবং পরকালের জীবন। সেখানে যখন কোনোও কিছু শুরু হবে, তা আর কখনোও শেষ হবে না। সব জিনিস তার সর্বোচ্চ পরিপূর্ণতায় থাকবে। সেখানের নওজোয়ান কোনদিন বৃদ্ধ হবে না। সেখানের খাবার কোনোদিন বাসি হবে না। সেখানে পৃথিবীর খারাপ ও মন্দ কোনো জিনিসের লেশমাত্রও থাকবে না।
পৃথিবীতে আমাদের জীবন যেমনি থাকুক, আমাদের উচিত পরকালীন ঐ জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও পৃথিবীতে তাকদীরের ভালো মন্দের উপর সন্তুষ্ট থাকা। এবং অবশ্যই তাকদীরের খারাবী ও উপহাস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। কারন, একমাত্র দুআ ব্যতীত তাকদীর বা ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে, এমন কোনো কিছুই নেই।
সময় অনেক দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি আজ আল্লাহর কাছে জীবনের বরকত চাই। আর আল্লাহ যেনো আমাদেরকে সত্য অনুধাবন ও সে অনুযায়ী কাজ করার তাওফীক দান করেন, এজন্য তার কাছে মানসিক ও শারীরিক শক্তি চাই। মোটকথা, তার পথে চলতে গিয়ে যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে আমরা যেনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার পথে কবুল করুন। আমিন।