তৃনা খুব শান্ত একটা মেয়ে। সারাদিন পড়ালেখায় ডুবে থাকে। পড়ালেখা নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকে যে, ওর তেমন কোনও বন্ধুও নেই। বন্ধুদের সাথে খুব বেশী একটা কথা না বলায় ওরা ওর খুব একটা খোঁজখবরও নেয় না। এক মনে, এক ধ্যানে নিজের কাজ করে যেতে ভালোবাসে সে।
এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিলো। একদিন তৃনা হঠাৎ আবিষ্কার করলো, তাদের স্টাডি রুমের বুক শেলফের পিছনে একটা দরজা আছে। কিন্তু, এইখানে যে লুকানো কোনো ঘর থাকতে পারে, তা তৃনা বিশ্বাসই করতে পারছিলো না। তৃনা বহু কষ্ট করে বুক শেলফ দেয়ালের কাছ থেকে কিছুটা সরালো। তারপর হালকা ধাক্কা দিতেই অপর দিকের দরজা খুলে গেলো।
তৃনার চোখের সামনে খুলে গেলো অন্য একটি পৃথিবী। এই পৃথিবীর আলো বেশ চোখ ধাঁধানো। গাছের পাতাগুলো আরো সবুজ। চারদিকে পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যাচ্ছিলো। তৃনা দেখলো লাইব্রেরীর এই দরজা থেকেই বিশাল একটি রাস্তা চলে গেছে সামনের দিকে। রাস্তা এতো বড় যে, সামনের দিকের কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
তৃনা হাঁটতে হাঁটতে একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ালো। এক পর্যায়ে তৃনা লক্ষ্য করলো, গাছের কান্ডে লেখা আছে রসায়ন। তৃনা মনে মনে ভাবলো, ওমা গাছের নাম রসায়ন। এ আবার কেমন গাছ। এবার তৃনা ভালো করে লক্ষ্য করলো। দেখলো, আশেপাশের সব গাছেই কোনও না কোনও বইয়ের নাম আছে।
যাই হোক, হাঁটতে হাঁটতে তৃনা অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। তাই সে গাছের নিচে ঘুমিয়ে গেলো। তৃনা যে গাছের নিচে ঘুমিয়েছিলো, তা একটি আপেল গাছ। এ গাছের কাণ্ড বেশ মোটা আর অসংখ্য ডালপালা। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখছিলো। দেখলো, গাছের গুঁড়ির মাঝ বরাবর অংশ থেকে একটা দরজা খুলে গেলো। আর সেখান থেকে মোটা ফ্রেমের চশমা পরা বুড়ো একজন লোক বেড়িয়ে এলো। তাঁকে দেখেই তৃনা বলে উঠলো, “আপনি কে? আর এসব কি দেখছি? এই গাছগুলোর নামই বা এমন অদ্ভুত কেন? রসায়ন, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, গনিত এগুলো কি কোনও গাছের নাম হতে পারে?”
বৃদ্ধ লোকটি কিছুই না বলে শুধু মুচকি হাসলো। একটু পর সে উপরের দিকে ইশারা করলো। তৃনা চোখ তুলে উপরের দিকে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলো। সে দেখলো, গাছ ভর্তি ফল আর ফল। আরও দেখলো বৃদ্ধ লোকটি হাতের লাঠি দিয়ে ফল গাছের একটি ডালে হালকা আঘাত করলো। আর অমনিতেই পাকা পাকা বেশ কিছু আপেল পড়লো। বুড়ো লোকটি তৃনার হাতে বেশ কিছু ফল দিয়ে তা খেতে বললো। তৃনা ফলটি হাতে নিলো। দেখলো ফলের গায়ে কোনও ধরনের ময়লা ত দূরে থাক আঁচড় পর্যন্তও নেই।
তাই সে জামার ঝুল দিয়ে ফলটি ভালো করে মুছে খেতে শুরু করলো। তৃনার ফল খাওয়া শেষে বৃদ্ধ লোকটি তাঁকে বললো, তৃণা তোমার রসায়ন বইয়ের কতটুকু পড়া শেষ হয়েছে। তৃনা মাত্রই নবম শ্রেনীতে উঠেছিলো। রসায়ন বইয়ের মাত্র কয়েক পৃষ্ঠা তার পড়া হয়েছিলো। তাই সে তাড়াহুড়া করে বললো, আমি এখনো কিছুই পড়িনি। আসলে স্কুল খুলতে খুলতেই লকডাউন। এবং সেই থেকে তৃনা ঘরে বন্দী। তাই সে অল্প অল্প করে বইগুলো পড়ছিলো। কিন্তু ভিতরের বিষয়বস্তু তার বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। তাই সে তাড়াহুড়া করে বললো, আমি এখনো পড়াই শুরু করিনি।
এবার, বৃদ্ধ লোকটি মুচকি হাসল। সে বল্লো, তোমার রসায়ন বইয়ের ৫০ নম্বর পৃষ্ঠায় একটা সূত্র আছে, দয়া করে আমাকে সেই সুত্রটি বলো। তৃনা সাথে সাথেই সূত্রটি বলে ফেললো। বলার পর সে নিজেই অবাক হয়ে গেলো। ওমা! সে তো ৫০ নম্বর পৃষ্ঠাটি এখন পর্যন্ত পড়েই নি। তাহলে সে সূত্র কি করে পারলো।
বৃদ্ধ লোকটি বললো, বাহ! সঠিক হয়েছে। আর হ্যাঁ এই গাছের ফল খেলে তোমার বইয়ের পড়াগুলো তোমার মাথায় এমনিতেই বসে যাবে। কষ্ট করে পড়তে হবে না। শুধু এই গাছই না। আশেপাশে যত গাছ আছে, সবগুলো গাছের একই গুণ।
“তৃণা!! এই তৃণা!! সেই কখন থেকে ডাকছি। কি হলো? নাস্তা খেতে এসো।”
আম্মুর ডাকে হঠাৎ তৃণার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তৃণা দেখলো সে তাঁদের স্টাডি রুমের টেবিলেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। এবার সে হতচকিত হয়ে বুক শেলফের সামনে গিয়ে দাড়ালো। শেলফের পিছনের জায়গাটুকু শুধুই সাদা দেয়াল। তৃণার মন হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেলো। আহা, এখানে যদি একটা দরজা থাকতো, তাহলে ত আর কষ্ট করে পড়তে হতো না।
বিঃ দ্রঃ ইহা একটি অতি কাল্পনিক গল্প। জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে। পড়ার কোনও বিকল্প নেই।