লেখালেখির বিভিন্ন ধরনের উদ্দেশ্য থাকে। কোনো কোনোটি পড়ালেখার স্বার্থে লেখা হয়, আবার কোনো কোনো লেখা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে লেখা হয়। নিচে আমরা একাডেমিক লেখার বেশ কিছু প্রকারভেদ ও বর্ণনা তুলে ধরছি। তাই এই ধরনের কোনও লেখা লিখতে গেলে অবশ্যই মূল উদ্দেশ্যের কথা মাথায় রেখেই লিখতে হবেঃ
একাডেমিক রাইটিং বা পড়ালেখার উদ্দেশ্যে লেখাগুলো নিচের মতো হয়ে থাকেঃ
১। রচনাঃ
এই একটা বিষয় সম্ভবত ছোটরা অনেক বেশী ভয় পায়। নিজের মতো করে কোনও রচনা লিখা। অধিকাংশ সময়ই ছাত্র-ছাত্রীরা নোট পড়ে বা গাইড বই দেখে রচনা লিখে থাকে। অথচ একজন ছাত্র-ছাত্রীর মেধার বিকাশ ও তার ভাষা বিষয়ক দুর্বলতা চিহ্নিত করার জন্য অবশ্যই নিজের ভাষায় রচনা লেখা উচিৎ। তাহলে, সে তার ভুল ত্রুটি বুঝতে পারবে এবং তা সংশোধন করার চেষ্টা করবে। রচনা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখা হয়। তা হতে পারে প্রশংসা বা স্তুতিমূলক, উৎসাহব্যঞ্জক, বিশ্লেষণাত্মক বা অন্য যে কোনও ধরনের। যেমনঃ বাংলা বর্ণমালার উৎপত্তি সম্পর্কে রচনা, একটি স্মরণীয় ভ্রমণ কাহিনী, আম গাছের পরিচর্যা নেয়ার সঠিক পদ্ধতি ইত্যাদি ইত্যাদি।
২। জার্নাল বা রোজনামচাঃ
এটা এক ধরনের ব্যাক্তিগত লেখালেখির মতো। সাধারণত ব্লগে আমরা এই ধরনের লেখাই লিখে থাকি। কোনও নতুন বিষয়, নতুন রেসিপি বা কাজের কোনও বিষয় আমরা সাধারণত ব্লগেই লিখে থাকি। এছাড়াও ভ্রমণ জার্নাল নামে আরেক ধরনের জার্নাল লেখা হয়। যা নতুন কোথাও বেড়াতে গেলে সাধারণত মানুষ লিখে থাকে। একাডেমিক লেখালেখির ক্ষেত্রে অনেক সময় জার্নাল লিখতে হয়, ফ্রিহ্যান্ড লেখার চর্চা করার জন্য। যেমনঃ কোনও বই সম্পর্কে নিজস্ব মতামত লেখা। সাধারণত এ ধরনের লেখাকে জার্নাল বলা হয়।
৩। একাডেমিক পেপারঃ
এ ধরনের লেখা সাধারণত কোনও বিশেষ পরীক্ষা নীরিক্ষা, রিসার্চ প্রজেক্ট, বা বিভিন্ন ধরনের সুচিন্তিত অভিমতের উপর ভিত্তি করে লিখতে হয়। এগুলো আবার নির্দিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ লোকেরাই পড়ে থাকে। যেমন, সম্পাদনা বা নিরীক্ষনের উপর লিখিত কোনও রচনা, এ সম্পর্কিত কলা কৌশল বা ব্যবহারিক জ্ঞানের উপর হয়ে থাকে, যা অভিজ্ঞ লোক ছাড়া অন্যদের জন্য সহজবোধ্য হয় না।
৪। রিসার্চ রিপোর্টঃ
কোনও বিষয়ে রিসার্চ করার পর তার উপর লিখিত রিপোর্ট বের করতে হয়। যা রিসার্চ রিপোর্ট নামে পরিচিত। এ ধরনের লেখাগুলো কয়েকটি ভাগে বিভক্ত থাকে। যেমনঃ সারসংক্ষেপ, ভূমিকা, পদ্ধতি, ফলাফল ইত্যাদি। যেমনঃ অমুক প্রফেসর নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার এবং পরিবেশের উপর এর সরাসরি প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি রিসার্চ পেপার লিখেছেন।
৫। বইয়ের পর্যালোচনাঃ
কোনও বই সম্পূর্ণ আগা গোড়া পড়ে বোদ্ধাজনের মন্তব্যই বুক রিভিউ বা বইয়ের পর্যালোচনা নামে পরিচিত। বইটি পড়ে একজন অভিজ্ঞ পাঠকের কেমন লেগেছে এবং এতে উল্লেখ্য কি কি বিষয় আছে তা জানার একটি সহজ পদ্ধতি হচ্ছে এ ধরনের বুক রিভিউ পড়া। সাধারণত কোনও বই ভালো নাকি খারাপ তা পাঠকদের রেটিং দেখে ও বুক রিভিউ পড়ে বোঝা যায়।
৬। সাহিত্যের পর্যালোচনা:
কোনও নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিভিন্ন টুকরো লেখার উপর লিখিত একটি প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ এবং সংশ্লেষণ। যেমনঃ আমাকে উরুগুয়েতে ইংরেজি শিক্ষার উপর একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা লিখতে হবে।
৭। থিসিস বা গবেষণামূলক প্রবন্ধ:
সাধারণত একটি ডিগ্রি সম্পন্ন করার জন্য নির্ধারিত গবেষণামূলক বিস্তারিত বর্ণনা। যেমন: স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সাধারণত নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর থিসিস লিখতে হয়।
৮। স্লাইড প্রেজেন্টেশনঃ
বিভিন্ন আউটলাইন, বুলেট পয়েন্ট, গ্রাফ এবং চার্টের মাধ্যমে কোনও ধারনা উপস্থাপনের জন্য স্লাইড প্রেজেন্টেশন লেখা হয়। যেকোনো একাডেমিক বা ব্যবসায়িক বিষয়ে কোনও কঠিন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার জন্য এ ধরনের স্লাইড প্রেজেন্টেশন অত্যন্ত উপযোগী একটি মাধ্যম।
৯। সংক্ষিপ্তসারঃ
কোনও বড় নিবন্ধ বা গবেষণাপত্রের উপর লিখিত ৩০০ শব্দ বা তার কম শব্দের উপর লিখিত রচনা, যাতে মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এটা সাধারণত বড় কোনও নিবন্ধ বা গবেষণাপত্রের ভূমিকা হিসেবে সবার শুরুতে লেখা হয়ে থাকে। যেমনঃ আমাদের গবেষণার ফলাফল সারসংক্ষেপে প্রথমেই পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এই হচ্ছে, প্রধান প্রধান একাডেমিক লেখা যা শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদেরকে লিখতে হয়। আসলে এসব লেখার মান নির্ধারণ হয় কোনও বিষয়বস্তু সহজ ও সঠিক উপায়ে বুঝাতে পারার উপর। তাই শিক্ষার প্রকৃত ফল পেতে এই লেখাগুলো যথা সম্ভব নিজের ভাষায় লেখা উচিৎ।