Skip to content

ইব্রাহীম (আ) এর জীবনী, ইয়াহুদী জাতি ও তাঁবুতে সাকিনাহ

পৃথিবীতে যুগে যুগে বহু নবী রাসুল এসেছেন। তাদের হাত ধরেই বিভিন্ন আবিস্কার ও নতুন নতুন সভ্যতার স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।সর্বপ্রথম মানব হচ্ছেন আদম (আ)। তিনি এবং তাঁর সন্তানাদি ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন‌ । তারপর মানুষ যখনই নিজেদের পরিচয় ভুলে গেছে, তখনই কোনো না কোনো নবী এসে তাঁদেরকে সতর্ক করেছেন। পৃথিবীতে এমন কোনও জাতি অতিবাহিত হয় নি, যাদের উপর কোনো নবী ও রাসূল প্রেরিত হয় নি।

ইব্রাহিম (আ) কে ছিলেন

ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি এমন এক সময়ে এমন এক জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, যখন পৃথিবীতে মুর্তি পূজা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সর্বজনবিদিত ধর্ম ছিলো। মানুষ বিভিন্ন দেব দেবী থেকে শুরু করে চন্দ্র-সূর্য, শাসক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, কাল্পনিক চরিত্র ও অলৌকিক শক্তি ইত্যাদি নানান বস্তুর উপাসনায় লিপ্ত ছিলো। কেউ কেউ সৌরজগত ও গ্রহ নক্ষত্রের পূজা করতো। মোটকথা মানুষ জীবনে চলার পথে যেসব সৃষ্টির সংস্পর্শে যেতো, সেগুলোকেই নিজের উপাস্য ভেবে তাদের আরাধনা করতে শুরু করতো।

তাদের উপাসনা ও সৃষ্টিকর্তাকে অনুসন্ধান ছিলো কল্পনার উপর নির্ভরশীল। আর এইসব কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করা হতো। আর এসব মূর্তি সংরক্ষণ করার জন্য বড় বড় হলরূম বানানো হতো। সাধারণতঃ পুরোহিত বা ধর্মযাজকেরা এসব মূর্তি তৈরি করতো। সাধারণ জনমানুষের কাছে তারা ছিলো সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গ।

এমনি এক যাজক পরিবারে ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মূর্তির অসাড়তা ও সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতেন। তিনি যখন মানুষকে মূর্তির পূজা করতে, মূর্তির সামনে খাবার রাখতে ও মূর্তির কাছে প্রার্থনা করতে দেখতেন তখন তিনি বলতেন, তোমরা এমন জিনিসের কাছে চাইছো, যা নিজেই শুনতে পায় না ও কোনোকিছু করতে পারে না। যার নিজের উপরেই কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, সে কি করে মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করবে।

পিতার সাথে মতানৈক্য

তিনি তার পিতার কাছে মূর্তি নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন করতেন এবং পিতাকে এইসব অহেতুক জিনিস বানানো থেকে বিরত থাকতে বলতেন। কিন্তু পিতা তাকে প্রতুত্তরে জানিয়ে দিলো যে এটা আমাদের বাপ দাদার ধর্ম ও পেশা। আমি কিছুতেই এই কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি না। তোমার যদি ভালো না লাগে, তুমি আমার গৃহ থেকে অন্য কোথাও চলে যেতে পারো।

ইব্রাহীম (আ) এই কথা শুনে অত্যন্ত ব্যাথিত হলেন এবং পিতার বাসভবন ও তার গৃহত্যাগ করতে মনস্থ করলেন। তার আগে, তিনি ভাবলেন, আরও একবার চেষ্টা করে দেখি, তাদেরকে এই মূর্তিপূজার অসারতা সম্পর্কে বোঝানো যায় কিনা।

তাদের সমাজে প্রতি রবিবার সূর্যদেবের পূজা হতো। ওইদিন সবাই খুব সকালে একটি উন্মুক্ত ময়দানে চলে যেতো, সূর্যের পূজা করতে। একইসাথে ঐ স্থান জুড়ে একটি ছোটখাটো মেলা বসতো। ইব্রাহীম (আ) চিন্তা করলেন, এই সময়টাই হচ্ছে তাঁদেরকে মূর্তির অসারতা সম্পর্কে বোঝানোর একটি উপযুক্ত সময়। তাই তিনি এমনি এক রবিবারে নিজের অসুস্থতার কথা বলে, তাদের সাথে মেলায় যাওয়া থেকে বিরত থাকলেন।

মূর্তি ভাঙ্গা

নির্ধারিত দিনে সবাই যখন মেলায় চলে গেলো তখন তিনি তাদের সবচেয়ে বড় মন্দির বা হলরুমে ঢুকে ছোট সব মূর্তির মাথা একটি তরবারির সাহায্যে ভেঙ্গে ফেললেন। এবং সবচেয়ে বড় মূর্তিটাকে ছেড়ে দিলেন এবং তার গলায় ঐ তরবারীটা ঝুলিয়ে রাখলেন। যথারীতি তার পিতা ও অন্যান্য রাজকীয় ব্যক্তিবর্গ ফিরে এসে এই অবস্থা দেখে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলো। তারা বুঝে নিলো এই কাজ কার। এই কাজ ইব্রাহীম ছাড়া আর কারো হতে পারে না।

এবার ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে রাজার দরবারে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, যার গলায় তলোয়ার ঝুলে আছে, তাকেই বরং জিজ্ঞাসা করে দেখো, এই কাজ কে করেছে। তারা সকলে বলে উঠলো, “এটা তো জড়মূর্তি। এটা কি করে কথা বলবে?” তখন ইব্রাহীম (আ) বললেন, “তোমরা কি এমন বস্তুর উপাসনা করো, যে নিজেই কথা বলতে ও দেখতে পারে না। এমন কি নিজেদেরকে রক্ষাও করতে পারে না। আমি তোমাদেরকে এমন এক সত্তার উপাসনা করার আহবান করছি, যিনি সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি আমার ও তোমাদের সকলের পালনকর্তা।”

রাজদরবারে উপস্থিত সভাসদ আর কারও বুঝতে বাকি থাকলো না যে, এটা কার কাজ। তাই তারা সকলেই এক বাক্যে ইব্রাহীম (আ) কে শাস্তি দিতে আহবান জানলো। এজন্য তৈরি করা হলো বিশাল বড় এক গর্তে বিশাল বড় এক অগ্নিকুন্ড। এই আগুন এতো ভয়াবহ ছিলো যে তার উপর দিয়ে পাখিরা পর্যন্ত যেতে ভয় পেতো।

আগুনে নিক্ষেপ

নির্ধারিত দিনে ইব্রাহীম (আ) কে আগুনে ফেলার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হলো। এবার তাকে যখন আগুনে ফেলা হচ্ছিলো, তখন ফেরেশতারা রশি টেনে ধরে রাখলো। রাজার সৈন্য, সামন্তরা অনেক চেষ্টা করে আগুনে ফেলতে পারছিলো না। এই অবস্থায় ইবলিশ এক বুড়া লোকের রূপ ধারন করে আসলো, এবং নর্তকীদেরকে নিয়ে আসতে বললো। তার কথা মতো, নর্তকীদেরকে নিয়ে আসা হলো। তাঁরা এতটাই স্বল্পবসনা ছিলো যে, তাঁদেরকে দেখে ফেরেশতারা সরে গেলো এবং ইব্রাহীম (আ) কে আগুনে ফেলা সম্ভব হলো।

আগুনে ফেলার মুহূর্তে ইব্রাহীম (আ) এর কাছে জিবরীলে আমীন চলে এলেন এবং বললেন, আপনি আমাকে হুকুম করুন, আমি এই আগুন নিভিয়ে ফেলবো। কিন্তু ইব্রাহীম (আ) জবাবে বললেন, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। আগুনে ফেলার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা আগুনকে সরাসরি হুকুম করলেন, “হে আগুন! তুমি আমার ইব্রাহীমের জন্য নাতিশীতোষ্ণ হয়ে যাও। (সুরা আম্বিয়া (৫১-৭০))”

এর ফলে, ইব্রাহীম (আ) কে আগুনে ফেলা হলো ঠিকই, কিন্তু আগুন তার কোনও ক্ষতি করতে পারলো না। নমরুদের মেয়ে তাঁদের প্রাসাদের ছাদের উপর থেকে এই অবস্থা দেখছিলো। যখন সে আগুনের ভিতর একটি সুন্দর বাগান ও তাতে ইব্রাহীম (আ) কে বিচরন করতে দেখলো, তখন সে সাথে সাথে আল্লাহ ও ইব্রাহীম (আ) এর উপর ঈমান আনলো। আর আল্লাহ এভাবেই বিশ্বাসীদেরকে রক্ষা করে থাকেন।

দেশত্যাগ

৪০ দিন আগুনের ভিতর থাকার পর ইব্রাহিম (আ) সেখান থেকে বের হয়ে এলেন এবং সেই দেশ ত্যাগ করে কেনানে (Canaan) চলে গেলেন এবং পথিমধ্যে এক রাজকন্যা সারা (আ) কে বিয়ে করে নিজের সঙ্গে কেনআনে নিয়ে এলেন। ইব্রাহীম (আ) এর জন্মস্থান ছিলো, বাবেল (Babylon) শহর, যা বর্তমান ইরাকে অবস্থিত। এবং তিনি হিজরত করে যে দেশে চলে যান তার নাম ছিলো কেনআন (Canaan)। বর্তমানে এই শহরটি ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত, যার নাম এখন হেবরন (Hebron)। এই স্থানটিকে খলিলও (khalil) বলা হয়।

রাজকন্যা সারা (আ) এর সঙ্গে তার বিয়ে হওয়াটা ছিলো একটি দৈব ঘটনা। ইরাক থেকে ফিলিস্তিন। পদযাত্রায় বেশ লম্বা একটা রাস্তা। পথে যেতে যেতে তিনি দেখতে পেলেন এক রাজা তার মেয়েকে বিবাহ দেয়ার জন্য উপযুক্ত পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। তবে, এক্ষেত্রে শর্ত ছিলো, রাজকন্যা যাকে পছন্দ করবে, তার সাথেই বিয়ে দেওয়া হবে। ইব্রাহীম (আ) কৌতূহল বশত: সেখানে গেলেন। এবং রাজকন্যা জনসমাগম থেকে ইব্রাহিম (আ) কেই বিয়ের জন্য পছন্দ করলেন। এভাবেই ইব্রাহীম (আ) এর সাথে বিবি সারা (আ) এর বিবাহ হয়।

এই কেনআন শহরেই তিনি আজীবন থেকে যান। এবং এখানেই তিনি ঘর সংসার করেন। সারা (আ) এর গর্ভে তার যেই পুত্রের জন্ম হয়, তার নাম ছিলো ইসহাক (আ)। ইসহাক (আ) এর পুত্র ছিলো ইয়াকুব (আ), যার আরেক নাম ইসরাইল (আ)। এই সুবাদেই তাদের বংশধরদেরকে বনী ইসরাইল বলা হতো। বনী ইসরাইলে অনেক নবী এসেছেন। এবং বনী ইসরাইলকে একত্রিত, সুশৃঙ্খল ও মিশরের শাসকদের কবল থেকে স্বাধীন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মূসা (আ)। তাওরাত বা পুরাতন বাইবেল যা মূসা (আ) উপর নাজিলকৃত একটি আসমানী কিতাব, এর অনুসরণে পরবর্তীতে বনি ইসরাইলগন তাদের জীবন পরিচালনা করতো।

ইয়াহুদী কারা?

এখন বনী ইসরাইলদের পরিচয় তো পাওয়া গেলো। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে ইয়াহুদী কারা। ইয়াকুব (আ) এর বড় ছেলের নাম ছিলো যিহুদা বা ইয়াহুযা। এখান থেকেই মুলত আরবী ইয়াহুদী বা ইহুদী শব্দ এসেছে। কোনো কোনো বর্ণনায়, ইয়াহুদ বা যিহুদ ছিলো একটি শহরের নাম। যার বাসিন্দাদেরকে এই নামে ডাকা হতো।

আবার অনেকে বলেন, ইয়াহুদ শব্দের অর্থ তাওবাকারী। বনী ইসরাইল যখন গোবৎস উপাসনা থেকে তাওবা করে মুসা (আ) এর ধর্মের উপর দীক্ষিত হলো, তখন থেকে তাঁদেরকে ইয়াহুদী বা তাওবাকারী বলে ডাকা হতো। ঘটনা যাই হোক, এরা বনী ইসরাইলের একটি অংশ ছিলো। যারা বিভিন্ন দেশে বনী ইসরাইল বা ইসরাইলের বংশধর নামেই পরিচিত ছিলো।

তাবুতে সাকীনা (Taboot-E-Sakina/Ark of the Covenant)

তাবুতে সাকীনা ছিলো মুলত একটি সিন্দুক, যার ভিতর বনী ইসরাইলের বিভিন্ন নবীদের অনেক স্বারক ও কিতাবাদি সংরক্ষিত ছিলো। এর মধ্যে ছিলো মুসা (আ) সরাসরি তূর পাহাড়ে গিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে যে তাওরাত কিতাব নিয়ে এসেছিলেন, তার মুল কপি। সংরক্ষিত ছিলো সুলাইমান (আ) এর বিশেষ আংটি। যার বরকতে তিনি সব ধরনের সৃষ্টিকুলের ভাষা বুঝতে পারতেন। শুধু তাই নয়, আদম (আ) থেকে শুরু করে বিভিন্ন নবীদের ব্যবহার্য বস্তু, স্মারক ও কিতাবাদী এই সিন্দুকে সংরক্ষিত ছিলো। তাবুতে সাকীনার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় প্রশান্তিদায়ক সিন্দুক। এটা নবীদের বংশানুক্রমে ইসরাইল বা ইয়াকুব (আ) তথা বনী ইসরাইলের কাছে আসে। এবং তাঁরা এর খুব সম্মান করতো। যেকোনো মুসিবতে তাঁরা এই সিন্দুকের পাশে বসে সিন্দুকের উসীলায় প্রার্থনা করলে তাদের প্রার্থনা কবুল করা হতো। এই সিন্দুক নিয়ে যুদ্ধে গেলে শত্রুপক্ষ পরাজিত হয়ে পিছনে সরে যেতো।

সোলাইমান (আ) এর সময়ে হেকেলে সুলাইমানী বা সুলাইমানের ইবাদতখানা নির্মাণ করা হয়। এই স্থাপনার ভিতরেই তাবুতে সাকিনা সংরক্ষিত ছিলো। সাধারন জনমানুষের এখানে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ ছিলো। কেবল, নবী ও বনী ইসরাইলের প্রধান আলেমরাই এখানে এর ভিতর প্রবেশ করা ও এখানে ইবাদত করার অনুমতি পেতো।

ঈসা (আ) কে আল্লাহ তায়ালা আসমানে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগের বা পরের ঘটনা। বনী ইসরাইল তাঁদের নবী জাকারিয়া (আ) ও তার পুত্র ইয়াহিয়া (আ) কে মিথ্যা অভিযোগে নির্মমভাবে হত্যা করে। এর কিছুদিন পর ৭০ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের শাসক বুখতে নসর তাঁদের উপর হামলা চালায়। যেহেতু দুজন নবীকে হত্যার কারণে আল্লাহ তাঁদের উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ছিলেন, তাই এবার তাঁরা কোনও সাহায্য দেখতে পেলো না। বুখতে নসর তাঁদের জনপদকে ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলো। তাঁদের শহরে রক্তের বন্যা বইয়ে দিলো। এবং তাঁদের ইবাদতখানা, আশেপাশের স্থাপনা, হেকেলে সুলাইমানী ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলো। এবং তাবুতে সাকিনা নিজের সাথে করে ইরাকে নিয়ে গেলো। সেই থেকে বনী ইসরাইল তাঁদের পৈতৃক আবাসভূমি ও তাবুতে সাকীনাহ চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলে। এবং তাঁদের বংশ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

এখনো ইহুদীরা বিশ্বাস করে তাঁরা কোনও একদিন এই তাবুতে সাকীনা খুঁজে পাবে। এবং তাঁদের প্রতিশ্রুত নেতা বা মনোনীত বান্দা যাকে মসীহ বলা হয় তার মাধ্যমে তাঁরা সারা পৃথিবীতে আরো একবার আধিপত্য বিস্তার করবে।

শয়তানি চোখের বিশ্বাস

ইহুদীদের ধর্ম বিশ্বাসে (Evil eye) বা শয়তানী চোখ নামে একটা বিশ্বাস আছে। আমরা সাধারনত যাকে নজর লাগা বলে থাকি। ইহুদী ধর্মমতে, তাঁরা একটি এক চোখের চিহ্ন তাঁদের সাথে রেখে থাকে, এই বিশ্বাসে যে, এর মাধ্যমে তাঁরা বদ নজর ও শয়তানী নজর থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। অনেকটা তাবীয কবজের উপর বিশ্বাসের মতই। তাই ইয়াহুদী এক চোখের তাবিজের সাথে দাজ্জালের আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। এবং মূল তাওরাতেও এ ধরনের কোনও বিশ্বাসের অস্তিত্ব নেই। এটা সম্ভবতঃ ইহুদী ধর্মের একটি মনগড়া মতবাদ যা তাঁদের মধ্যে বহুলভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে। একইভাবে, তাবীজ কবজও মূল ইসলামের সাথে সম্পর্কিত কোনও মতবাদ নয়, বরং নিছক একটি ভ্রান্ত ও মনগড়া ধারনা। দাজ্জালের কথা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থে এন্টি ক্রাইস্ট (Antichrist) নামে উল্লেখ করা হয়েছে ও ঈসা(আ) কে মেসাই বা মসীহ (Messiah) নামে উল্লেখ করা হয়েছে। নজর বা শয়তানী চোখের বিশ্বাসের সাথে দাজ্জালের আদৌ কোনও সম্পর্ক না থাকলেও দাজ্জাল ইহুদীদের মধ্যেই আবির্ভূত হবে এবং নিজেকে তাঁদের ত্রাণকর্তা বা (Messiah) হিসেবে দাবি করবে। দাজ্জাল আবির্ভূত হওয়ার পর ঈসা (আ) দামেস্কের এক মসজিদের মিনার উপর জান্নাত থেকে দুই ফেরেশতার কাঁধে ভর করে অবতরন করবেন। তার পরনে থাকবে জাফরান দিয়ে রাঙ্গানো দুটি বস্ত্র। তিনি নিচু হলে মনে হবে মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। এবং মাথা সোজা করলে মনে হবে তার চুল রুপালী মুক্তা দিয়ে পুঁতি করা হয়েছে। তার দৃষ্টি যতদূর যাবে, তার গাঁয়ের সুবাসও ততদুর পর্যন্ত অনুভূত হবে।

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনি এসে দাজ্জালকে লোদের গেইট যা ইসরাইলের গোল্ডেন গেইট নামে পরিচিত, এই স্থানে হত্যা করবেন। তাঁর গাঁয়ের গন্ধ যতদূর পর্যন্ত পৌঁছবে, ততদূর পর্যন্ত যত অবিশ্বাসী থাকবে, সবাই মৃত্যুবরণ করবে। তিনি এসে ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিজিয়া বা কর বিলুপ্ত করবেন। তিনি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করবেন ও পৃথিবীতে দাজ্জাল ও ইয়াজুজ মাজুজের কারণে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দূর করে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন।

উপসংহারঃ

সব নবী রাসুলই একত্ববাদী ধর্ম, আল্লাহর উপাসনা করতে বলেছেন ও আল্লাহর সাথে অন্য কোনোকিছু শরীক করতে নিষেধ করেছেন। যুগে যুগে মানুষ নবী রাসুলদের শিক্ষা ভুলে যাওয়ার কারনেই নতুন নবীর আবির্ভাব হয়েছে, এবং পুরাতন শরীয়াহ সংশোধিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলাম এসেছে। যেহেতু, নবী রাসুলদের প্রচার প্রচারনার মূল উদ্দেশ্য একই ছিলো, তাই বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থগুলোতে এখনো অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। শেষ নবী মুহাম্মদ (সা) এর পর নবী রাসুল এসে সংশোধন করার এই ধারা বন্ধ হয়ে গেলেও মানুষের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া এই নবীর উম্মতদের একটি অন্যতম দায়িত্ব। আর এজন্যই ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসরাইলের লোদ শহরের গেইট বা গোল্ডেন গেইট আজ থেকে ১০০০ বছর পূর্বে সুলতান সালাউদ্দিনের সময় সম্পূর্ণরুপে সীল করে দেয়া হয়, যা এখনও এই অবস্থাতেই বিদ্যমান আছে। ধারনা করা হয় দাজ্জাল আবির্ভূত হবার পর এই গেইট পুনরায় উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, এবং এই জায়গাতেই ঈসা (আ) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: