Skip to content

ইতিহাসের সেরা দশ আবিষ্কার যা মানব সভ্যতার গতিপথ বদলে দেয়

মানব সভ্যতার ইতিহাসে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বর্তমান অতীত হয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এমন কিছু আবিষ্কার আছে, যা মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। এইসব আবিষ্কারের ফলে মানুষের জীবনের গুনগত মান পরিবর্তন হয় ও তাঁদের জীবন নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। ইতিহাসের এমন সেরা দশটি আবিষ্কার নিয়েই আজকের রচনাটি লিখছি।

#১০। চাকার আবিস্কার:

খুব বেশি সময় দূরে নয় অতীত ইতিহাস থেকে, চাকার ব্যবহার বদলে দিয়েছিলো গোটা পরিবহন ব্যবস্থা। এর ফলে মানুষ নতুন নতুন রাস্তা ও যানবাহন তৈরি করে, যা এক দেশ থেকে আরেক দেশে তাদের যাওয়ার পথ সুগম করে। আগে যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ জন্তু-জানোয়ার নির্ভর ছিলো। যার ফলে নির্দিষ্ট কোনও রাস্তা তৈরি করতে হতো না। সে সময় মূলত জলপথ বা নৌকা ছিলো প্রধান যাতায়াত মাধ্যম।

#৯। বিদ্যুৎ ও বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কার:

বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কারের আগে মানুষ সাধারণত তৈল নির্ভর বাতি ব্যবহার করতো। অধিক তেল যাতে খরচ না হয়, সেজন্য তাদের কর্মঘন্টা দিন ভিত্তিক ছিলো। আর সকালে সূর্য উঠার সাথে সাথে তারা কাজ শুরু করতো, এবং সূর্য ডোবার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়তো। রাতে বাতি জ্বালিয়ে রাখাকে সাধারনতঃ অপচয় মনে করা হতো, আর তাই বেশির ভাগ মানুষ সূর্য উঠার সাথে সাথে জেগে উঠতো এবং সূর্য ডোবার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়তো।

#৮। ইঞ্জিন আবিষ্কার:

বিদ্যুৎ আবিস্কারের কিছুদিন পর ইঞ্জিন আবিষ্কার করা হয়। প্রাচীন ইঞ্জিনগুলো ছিলো ঘূর্ণন যন্ত্র যা হাতে অথবা তেলের সাহায্যে চালু করা হতো। মানুষ বা পশুর শ্রমসাধ্য কাজ সহজ করার জন্যই এসব যন্ত্রের উদ্ভব হয়। ইঞ্জিনের মোটর আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বৈপ্লবিক ঘটনা। এর ফলে গাড়ির ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক পাখা, ইলেক্ট্রনিক বিভিন্ন সামগ্রীসহ আরও অনেক নতুন নতুন শক্তিচালিত যন্ত্রপাতি আবিস্কার হতে লাগলো।

#৭। টিকার আবিস্কার:

জটিল ও কঠিন রোগে অকাল মৃত্যু ঠেকাতে টিকার আবিস্কার একটি যুগান্তকারী ঘটনা। টিকা আবিস্কারের আগে কোনো দেশে মহামারী দেখা দিলে সে দেশের জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যেতো। আর বাবা মায়েরাও অধিক সন্তান নিতো। কারণ, সব সন্তান বেঁচে থাকবে কিনা, তার নিশ্চয়তা ছিলো না। টিকা আবিষ্কারের ফলে রোগ হওয়ার পূর্বেই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়। এর ফলে, অকাল মৃত্যু থেকে বেঁচে যায় বহু মানুষ।

#৬। রাসায়নিক সার আবিষ্কার:

টিকার আবিস্কারের ফলে মানুষের মৃত্যুহার অনেক কমে গেলো, এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সব সন্তানেরা জীবিত থাকতে শুরু করলো। এর ফলে, দেশে দেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ দেখা দিলো। এই বাড়তি জনসংখ্যার জন্য পুরনো পদ্ধতিতে চাষাবাদে বাড়তি খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। কারণ, এক বা দুইবার চাষ করার পর মাটির উর্বরতা ব্যাপকভাবে কমে যেতো। আর তাই বিজ্ঞানীরা মাটি ও উদ্ভিদের উপর ব্যাপক গবেষণা চালালেন এবং উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদানগুলো খুঁজে বের করলেন। তাঁরপর, সেগুলো কৃত্রিম উপায়ে মাটির সাথে মিশিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন, যাতে এক জমি বার বার ব্যবহার করা যায়। এর ফলে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে গেলো এবং বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যের সংস্থান করা সম্ভব হলো।

#৫। কম্পিউটার আবিস্কারঃ

আমরা সকলেই জানি, কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা নিখুঁতভাবে গণনা করতে পারে। এছাড়াও কম্পিউটারকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করাতে আবিস্কার করা হলো বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষা, যার দ্বারা কম্পিউটারকে বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করা হতো। প্রথম দিকের প্রোগ্রামিং ভাষা মানুষের কাছে অবোধ্য ছিলো এবং কম্পিউটারের আকারও অনেক বড় ছিলো। ট্রানজিস্টার আবিস্কারের ফলে কম্পিউটারের আকার অনেক ছোট হয়ে আসে এবং কম্পিউটার সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসে। এর আগে কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ও দেশের প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হতো।

#৪। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আবিষ্কারঃ

টিকা আবিস্কারের ফলে দেশে দেশে জন বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। মানুষের অকাল মৃত্যু ঠেকানো গেলেও জন বিস্ফোরণ না ঠেকালে এক সময় মানব জাতির বিপর্যয় ঘটতে পারে, এই আশঙ্কায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়। এর ফলে দেশে দেশে মৃত্যুহার কমিয়ে জনসংখ্যা কাঙ্খিত মাত্রায় রাখা সম্ভব হয়। তবে ধর্মীয় সমাজে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের এসব কৃত্রিম পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হয় নি। এছাড়াও অনাকাংক্ষিত জন্ম ঠেকানোর পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ায় বিভিন্ন সমাজে সামাজিক ও নৈতিক বিপর্যয় ঘটতে থাকে। মানুষের কাছে শুদ্ধাচার ও চারিত্রিক পবিত্রতার গুরুত্ব কমে যায়। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রসার লাভ করে। এক শ্রেনীর মানুষ জৈবিক তাড়নাকে নিজেদের পেশা বানিয়ে নেয়। আর একারণেই বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে এখনও আপত্তি ও প্রতিবাদ জানিয়ে থাকে। অনৈতিক সম্পর্কের কারণে বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন রোগ ব্যাধি দেখা দিতে থাকে। এর মধ্যে এইচআইভি বা এইডস অন্যতম। যদিও জন্ম নিয়ন্ত্রনের বেশ কিছু পদ্ধতি এ ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রনে কাজে লাগে।

#৩। পারমানবিক শক্তির আবিষ্কারঃ

রাতারাতি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের ফলে বেশ কিছু দেশ ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠে। এই দেশগুলো একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও স্নায়ুযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শত্রুপক্ষকে জব্দ করার জন্য ইউরেনিয়ামের পরমানু ভেঙ্গে পারমানবিক শক্তি আবিষ্কৃত হয়। পারমানবিক শক্তি আবিষ্কারের পর যুক্তরাষ্ট্রে পারমানবিক বোমা আবিষ্কৃত হয় যা এক সাথে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম। একইসাথে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পারমানবিক চুল্লী মানব সভ্যতার জন্য উপকার বয়ে আনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান মার্কিন রণতরী ধ্বংস করতে পার্ল হারবারে বোমা বর্ষণ করে। এর প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর পারমানবিক বোমা দিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। পারমানবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় এই শহরগুলোতে অনেক বছর ধরে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর বিশ্বে পারমানবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের চুক্তি সম্পাদিত হয়।

#২। উড়োজাহাজ আবিষ্কারঃ

পানিতে ভ্রমণের পদ্ধতি বহু আগেই আবিষ্কার করেছে মানুষ। বাকি ছিলো পাখির মতো ঊড়ে বেড়ানো। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেন। এর ফলে মানুষ খুব অল্প সময়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে সক্ষম হয়। উড়োজাহাজের সংস্করণ আধুনিক হতে হতে এক সময় বোয়িং বিমান তৈরি হয়, যা জাহাজ বা গাড়ীতে চলা এক মাসের পথ একদিন বা তার চেয়েও কম সময়ে পার হতে সক্ষম হয়। মানুষের যানবাহনের উন্নতির ক্ষেত্রে উড়োজাহাজ বা এরোপ্লেন একটি অন্যতম মাইলফলক।

#১। পেনিসিলিন ও জীবাণুনাশক আবিষ্কারঃ

বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পেনিসিলিন ও জীবানুনাশক একটি অন্যতম মাইলফলক। পেনিসিলিন আবিস্কারের আগে কোনও কাঁটা বা ক্ষত থেকে ইনফেকশন ও তৎপরবর্তী সেপটিক শকে প্রচুর মানুষ মারা যেতো। জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পেনিসিলিন দেহের ভিতর থেকে ইনফেকশন বা জিবানুর সংক্রমনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। আর জীবানুনাশক আবিষ্কারের ফলে প্রসূতি মাতা ও শিশু মৃত্যুহার কমে আসে। জীবানুনাশক আবিষ্কারের আগে বাচ্চার কাঁটা নাভী ও প্রসব কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী থেকে ইনফেকশন ছড়িয়ে দুই তিনদিনের মধ্যে সেপটিক শকে প্রচুর বাচ্চা ও প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হতো। জীবানুনাশক আবিস্কারের পর এই মৃত্যুর হার অনেক কমে যায়, এবং প্রচুর মা ও শিশু অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়।

উপসংহারঃ

উপরিউক্তো ঘটনাগুলো ছাড়াও ইতিহাসের মোড় বদলে দেয়া আরো অনেক ঘটনা আছে। যেহেতু, আমি দশটি ঘটনা বা আবিষ্কার তুলে ধরতে চেয়েছি, তাই আমার মনে হয়েছে, এই দশটিই সেরা আবিষ্কার বা ঘটনা যা মানব সভ্যতার মোড় ঘুরিয়ে দিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলো। পাঠক, আপনার জানামতে এমন আরো এমন কি কি ঘটনা আছে, যা মানব সভ্যতার ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে? জানা থাকলে নিচের কমেন্টের মাধ্যমে সবাইকে জানাতে পারেন। সময় নিয়ে রচনাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: