পৃথিবীতে মানুষ আসে ক্ষনিকের অতিথি হয়ে। যদিও পৃথিবী চিরকালীন আবাস নয়, কিন্তু পৃথিবীতে চলতে গেলে মানুষের জীবীকার প্রয়োজন হয়। এই পৃথিবীতে বেশ কয়েক ধরনের জীবিকা প্রচলিত আছে। এগুলো হচ্ছে, বুদ্ধিভিত্তিক জীবিকা, কৃষিভিত্তিক জীবিকা, শ্রমভিত্তিক জীবিকা, শিল্পভিত্তিক জীবিকা ও ব্যবসা বা ক্রয়-বিক্রয় ভিত্তিক জীবিকা।
জীবিকা কী?
মানব জাতির প্রয়োজনে মানুষ অপরের কল্যাণে যা করে থাকে, তাই তাঁর বেঁচে থাকার অবলম্বন বা জীবিকা হয়ে দাঁড়ায়। জীবিকা বা পেশা বা ক্যারিয়ার, যাই বলি না কেন, মানুষের কর্তব্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি কর্তব্য। আর মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক যেসব উপকরণ আছে, সেগুলো হচ্ছে জীবনোপকরন বা রিযিক। একজন মানুষের কোনও পেশা বা ব্যবসা না থাকলেও তাঁর জীবোনোপকরনের কোনও অভাব নাও থাকতে পারে। হতে পারে সে উত্তোরাধিকার বা লটারী বা অন্য কোনও উপায়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যেতে পারে। সেটা অন্য হিসাব।
কিন্তু হালাল রিযিক বা জীবনোপকরন অন্বেষণ করা মানুষের জন্য ফরযের পর অন্যতম একটি ফরয। আগেই বলেছি, মানুষের কল্যাণে মানুষ যা করে তাই তাঁর জীবিকার মাধ্যম হয়। যেমন, একজন কৃষক ফসল উৎপাদন করেন। তাঁর নিজের জন্য চাইলে তিনি যৎসামান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করতে পারতেন। কিন্তু এর ফলে নিশ্চয়ই সবার প্রয়োজন পূর্ণ হতো না এবং একই সাথে তাঁর খাবারের প্রয়োজন পূর্ণ হলেও তাঁর অন্যান্য প্রয়োজনগুলো পূর্ণ করা সম্ভব হতো না। একই কথা অন্যান্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রেও খাটে।
মানুষ কেন জীবিকার খোঁজ করে?
জীবিকার অন্বেষণ কেবল মানুষ নয়, আরো অনেক পশুপাখিরাই করে থাকে। তবে, সব পশুপাখি তাঁদের নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্যই জীবিকার অন্বেষণ করে। মানুষ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন প্রানী। আর সে কারণেই তাঁরা অন্যের প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে জীবিকার অন্বেষণ করে। আর এ জন্যই মানুষের মধ্যে যারা ইঞ্জিনিয়ার, তাঁরা অন্যের বাড়িঘর নির্মাণের জন্য নকশা করে জীবিকা অর্জন করে। যারা ডাক্তার, তাঁরা অন্যের চিকিৎসা করার মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করে। মোট কথা, যারা যে পেশাতেই থাকুক না কেন, তাঁদের দক্ষতা যেমনই হোক না কেন, তাঁরা অন্যের কল্যাণে তা কাজে লাগিয়ে জীবিকা অর্জন করে। পশু পাখিদের বেলায় তেমনটি দেখা যায় না। কারো কোনও নৈপুণ্য থাকলেও সে কেবল নিজের প্রয়োজনেই তা ব্যবহার করে।
মানুষের জীবিকার উদ্দেশ্য
মানুষের জীবিকার মূল উদ্দেশ্য থাকে অপরের কল্যাণ করা, অপর দিকে পশু পাখির জীবিকা অন্বেষণের মূল উদ্দেশ্য থাকে কেবল নিজের ও নিজের সন্তানদের কল্যাণ করা। এদের মধ্যে বিবেক, বুদ্ধি ও বিবেচনা নেই বলেই তাঁরা অন্যের ফলানো ফসল খেতে ও অন্যের জমির শস্য খেতে দ্বিধাবোধ করে না। তাঁদের দর্শনে তাঁরা হচ্ছে, সমগ্র পৃথিবীর জন্য আর সমগ্র পৃথিবীও তাঁদের জন্য। অপরদিকে মানুষ এই আচরণগুলোকে অপরাধ মনে করে। মানুষের সমাজে অন্যের ফসল তাঁর অনুমতি ও বিনিময় ছাড়া গ্রহণ করা অপরাধ। আর তাই মানুষ যত কষ্টেই থাকুক না কেন, এই কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে।
কোনও কাজ কি ছোট?
গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায়, পৃথিবীতে কোনও কাজই ছোট নয়। কৃষক যদি কৃষিকাজ বন্ধ করে দেয়, দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। আপনি যে রিকশায় চড়ে প্রতিদিন অফিসে যাচ্ছেন, এই রিকশাচালক না থাকলে হেঁটে যেতে নিশ্চয়ই কষ্ট হতো। যে পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রতিদিন বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট পরিস্কার করছে, তাঁর অভাবে নিশ্চয়ই এই জায়গাগুলো অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকতো। জেলে প্রতিদিন মাছ না ধরলে আপনি কি সুস্বাদু মাছ খেতে পারতেন? তাই, ছোট বড় কোনও কাজই আসলে তুচ্ছ নয়। তবে, কারো কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করে সামাজিক মর্যাদায় কিছুটা পার্থক্য ও তারতম্য দেখা দেয়। একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে রোগীদের মৃত্যু ঘটতে পারে। একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার বাড়িঘর তৈরির প্লান না করে দিলে আপনার বাড়ি মজবুত ও টেকসই হবে না। যার ফলে বাড়িঘর ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে। একজন উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে শিশুরা অশিক্ষিত থেকে যেতে পারে বা শিক্ষার ফল থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এভাবে মানুষের যোগ্যতা ও কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী সমাজে তাঁর মর্যাদা নির্ধারিত হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সবার মধ্যে অবশ্যই মানবিক বোধ বা অপরের কল্যাণ করার ইচ্ছা জাগ্রত রাখতে হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য কি কল্যাণকর কাজ
মোটাদাগে, আমাদের সমাজে ব্যবসা-বাণিজ্যকে কোনও কল্যাণকর কাজ বা পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু হাদীসে, ব্যবসা বানিজ্যের প্রভূত কল্যাণ ও উপকারিতার কথা বলা হয়েছে। তবে, একটা কথা বেশ পরিষ্কার। তা হচ্ছে, ব্যবসা ছাড়া পুঁজি তৈরি হয় না। আর পুঁজি না থাকলে কল্যাণজনক কোনও কাজ, গবেষণা বা উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করার সুযোগও তৈরি হয় না। তাই সামগ্রিক দিক বিবেচনা করতে গেলে ব্যবসা বাণিজ্য অবশ্যই কল্যাণকর কাজ। কেউ ব্যবসা করছে বলেই আপনি বাংলাদেশে বসে সুদূর চীন দেশ বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনও পণ্য ক্রয় ও ব্যবহার করতে পারছেন। এই পন্যটি বাণিজ্য ছাড়া এই দেশের আনার কোনও সম্ভাবনা ছিলো না। আর ব্যাক্তিগতভাবে আনতে গেলে এর পেছনে আপনার অনেক সময়, টাকা ও পরিশ্রম খরচ হতো। তাই ব্যবসার মাধ্যমে আপনি এই কষ্টগুলো থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। ব্যবসার মাধ্যমে তৈরি হওয়া পুঁজি পরবর্তীতে কোনও উৎপাদন বা উদ্ভাবনের কাজে ব্যয় করা সম্ভব হয়।
জীবিকা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা ও বিশেষ দু’আ
মানুষকে ধাপে ধাপে জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত অনেক প্রয়োজন পূর্ণ করতে হয়। তাই এই প্রয়োজনগুলো পূর্ণ করতে তাঁর যথেষ্ট পরিমান জীবিকার দরকার হয়। রাসুলে কারীম (সা) মানুষকে শুধু জীবিকার পিছনে ছুটতে নিষেধ করেছেন। কারণ, মানুষের নির্ধারিত রিজিক লুকিয়ে আছে মূলত সঠিক ও সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করার মধ্যে। তাই ঠিকভাবে নামায আদায় করাই হচ্ছে রিজিক বা জীবিকা উপার্জনের মূল মাধ্যম ও চাবিকাঠি। এছাড়াও জীবিকায় বরকত আনার বেশ কিছু দু’আ জিকির আছে যার মাধ্যমে আপনার জন্য বরকতের রাস্তা খুলে যাবে।
রিজিক বৃদ্ধির জন্য পরীক্ষিত জিকির হচ্ছেঃ
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযিমী ওয়া বিহামদীহী আস্তাগফিরুল্লাহ। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিইল আযীম।
অর্থাৎঃ আমি আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং নিশ্চয়ই তিনি পবিত্র, সুমহান ও প্রশংসনীয়। এবং আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। নিশ্চয়ই সুউচ্চ ও সুমহান আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা ছাড়া আর কোনো আশ্রয় ও সাহায্য নেই।
এই দু’আটি প্রতিদিন ফজরের নামাযের পূর্বে বা পরে একশত বার করে পাঠ করলে জাগতিক সমস্যা ও কষ্ট থেকে আল্লাহ তায়ালা মুক্ত করে দিবেন।
(সুত্রঃ শরহে ইয়াহিয়া ও মাদারেজ)
যদি কাজ করার ক্ষেত্রে কোনও মুশকিল বা অসুবিধা এসে দাড়ায় তখন পড়তে হবেঃ
আল্লাহুম্মা ইয়াসসির লানা ঊমুরানা
অর্থাৎঃ হে আল্লাহ! আমাদের সকল কাজ আপনি সহজ করে দিন।
সকল কাজ সহজে সম্পন্ন হওয়ার জন্য নিচের দু’আ পাঠ করতে পারেনঃ
আল্লাহুম্মা হাসসীন ফারযী ওয়া ইয়াসসিরলী আমরি
অর্থাৎঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিপুর তাড়নার হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন এবং আমার সকল কাজ সহজ করে দিন।
দ্বীন ও দুনিয়াবী উন্নতি ও বাচ্চাদের হিফাযতঃ
জুমুআর দিন জুমুআর নামাযে ইমাম সালাম ফিরানোর পর সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস এই প্রত্যেকটি সূরা সাতবার করে পড়লে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় দিকেই উন্নতি হয়। বাচ্চাগণ বিভিন্ন বালা-মুসীবত থেকে হেফাযতে থাকে। এই আমল মেয়েরা ঘরে জুমুআর দিন জোহরের ফরয নামাযের পর করতে পারেন।
সুখ দীর্ঘস্থায়ী করার আমলঃ
সূরা কদর, সূরা কাফিরুন ও সূরা ইখলাস এগারো বার করে পাঠ করে পাক পবিত্র পানিতে দম করে সেই পানি নতুন কাপড়ে ছিটিয়ে দিন। ঐ কাপড় যতদিন ব্যবহারে থাকবে, ততদিন সুখে শান্তিতে সময় কাটবে, ইনশাআল্লাহ।
(তথ্যসুত্রঃ সীলাহুল মু’মীন বা মুমিনের হাতিয়ার)