গরমের দিনে এমনিতেই সবাই কমবেশী ত্বকের সমস্যায় পড়ে থাকেন। বর্ষার পর শরৎ আসে, আর শরতের পরেই দেখা দেয় হেমন্ত। তাল পাকা হেমন্ত কাল। এই সময় এক বার ঘামলে তা শুকানো বেশ কঠিন। ত্বকের উপর ধুলা ময়লা মিলে বেশ তেল চটচটে একটা আবরন তৈরি হয়। বেশ অস্বস্তিকর একটা অনুভুতি। সেই সাথে অপরিচ্ছন্ন থাকলে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের ফাংগাল ও ব্যাক্টেরিয়াল ত্বকের সমস্যা। চলুন জেনে নেই এমন কিছু সমস্যার চট জলদি সমাধানঃ
ত্বক, হাত-পা ও নখ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন
বেশিরভাগ ত্বকের সমস্যা পরিচ্ছন্নতার অভাবে হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত মুখ, হাত ও পা পরিস্কার করুন। পাঁচ বেলা যাদের অজু করার অভ্যাস আছে তাঁরা অজু করে অবশ্যই হাত পা শুকনা কোনও তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে নিবেন। ঘেমে গেলে যত দ্রুত সম্ভব ঘাম শুকিয়ে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। ট্যালকম পাউডার ব্যবহারের একটা সুবিধা হচ্ছে ঘামার পর এই পাউডার খুব দ্রুত ঘাম শুষে নিতে পারে।
দুইবার গোসল করুন
ঠান্ডা ও অ্যালার্জির সমস্যা না থাকলে দিনে দুইবার গোসল করতে পারেন। গোসল করা সম্ভব না হলে পুরো শরীর মুছে নিতে পারেন। গোসলের পানিতে নিমের তেল অথবা নিমপাতা সিদ্ধ পানি ব্যবহার করলে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমন থেকে নিরাপদ থাকবেন। চাইলে নিমযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে পারেন।
ফেসওয়াশ ব্যবহারের আগে মধুর মাস্ক
ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিস্কার করার আগে ব্যবহার করতে পারেন মধুর মাস্ক। এক বা আধ চামচ মধু নিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। এবার ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষন পর মুখ ধুয়ে পুনরায় পছন্দের ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিস্কার করে নিন। এর ফলে, মুখে ফুসকুড়ি, ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস থাকলে তা ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যাবে। এছাড়াও গরমের কারণে তেল চিটচিটে ভাব কমাতে চাইলে মধুর সাথে অল্প পরিমান লেবুর রস যুক্ত করতে পারেন।
নখের সংক্রমণ
হেমন্তকালে আদ্রতা বেশী থাকায় অনেকেরই নখের সংক্রমণ ও কুনি নখ দেখা দেয়। তাই এ ধরণের সমস্যায় কখনোই নখ অতিরিক্ত গভীর করে কাটবেন না। নখের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য সোজাসুজিভাবে নখ কাটুন। এছাড়াও নখ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। নখের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিদিন এক কোয়া করে রসুন খেতে চেষ্টা করুন। নখে সংক্রমণ দেখা দিলে কুসুম গরম পানিতে এপসম লবন গুলিয়ে পা ভিজিয়ে রাখুন। এবং সংক্রমণের জায়গা শুকনা রাখতে চেষ্টা করুন। এতে কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাস বদলান
এসময় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। ছোট মাছ, পাতলা ডাল, শাক সবজি ও হালকা খাবার খেতে চেষ্টা করুন। প্রচুর পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে লেবু পানি ইসুব গুলের ভুসি দিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া, জাম্বুরা, পেপে, বেল ও বিভিন্ন মৌসুমি ফলের রস খেতে পারেন।
ত্বক পরিস্কারের জন্য কিছু প্যাক
১ নং প্যাক
ব্রণ ও ফুসকুড়ি থেকে ত্বকে ক্ষত ও পরবর্তীতে স্থায়ী দাগ দেখা দিতে পারে। তাই ব্রনের সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য নিয়ম করে যত্ন নেয়ার কোনও বিকল্প নেই। ব্রণ দূর করতে মুলতানি মাটির সাথে চন্দন কাঠ মিহি করে বেটে লাগাতে পারেন। এর সঙ্গে কাগজী লেবুর রস ও টকদইও মেশাতে পারেন। চন্দনের পরিবর্তে মিহি করে বাটা মসুর ডাল ব্যবহার করতে পারেন।
২ নং প্যাক
বেসন অথবা মসুরের ডাল বাটার সঙ্গে টকদই, আমন্ড বাদাম, কমলালেবুর খোসা বাটা এবং নিমপাতা বাটা দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করতে পারেন। এটি তৈরি করে ফ্রিজে রেখে কয়েক দিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন। প্যাকটি প্রতিদিন মুখে লাগাবেন এবং ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছে নেবেন। মুখ ছাড়াও প্যাকটি শরীরের যেকোনো জায়গায় সাবানের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া ১৫ দিন পর পর ভালো কোনও ফেসিয়াল করাতে পারেন।
ব্ল্যাকহেডস থেকে মুক্তি পেতে
চালের গুঁড়া পানি দিয়ে বা দুধ দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে এর সঙ্গে চিনি এবং শুকনা অ্যাপ্রিকট বাটা মিশিয়ে একটি দানাদার প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি মুখে লাগান। শুকিয়ে যাওয়ার পর ভেজা তোয়ালে দিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন।
চুল ঘেমে যাওয়া থেকে মুক্তি পেতে
অনেক সময় চুল ঘেমে মাথার ত্বকে খুশকি ও ঘামাচি দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শ্যাম্পুর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এছাড়াও মাসে একবার চুলের প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। চুলের প্রোটিন প্যাক হচ্ছে মেহেদী বাটা, টকদই ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ব্যবহার করা। ডিমের সাদা অংশের বদলে চাইলে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
সুস্থ ও লম্বা চুলের জন্য ম্যাজিক স্প্রে
একটি স্প্রে বোতল নিন। তারপর একটি বাটিতে এক কাপ অ্যালোভেরার জুসের সাথে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। এর সঙ্গে আরো মেশাতে পারেন গোলাপ জল। এবার স্প্রের সাহায্যে পুরো মাথা ও চুলে স্প্রে করুন। আধা ঘন্টা রেখে ভালো কোনও শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপসংহারঃ
ভ্যাঁপসা গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়াটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তবে, আশা করি উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি বেশ ভালো উপকার পাবেন। পোস্ট ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাই ভালো থাকুন, এই কামনায় এখানেই শেষ করছি।